Thank you for trying Sticky AMP!!

সড়কে স্ত্রী–ছেলেকে হারিয়ে ‘একা’ হয়ে গেলেন ট্রাকচালক সিরাজ

সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের মর্গের সামনে বসে আহাজারি করছেন সিরাজ মিয়া। আজ সোমবার দুপুরে

মর্গের সামনে মাটিতে বসে বিলাপ করছিলেন সিরাজ মিয়া (৫৮)। তাঁকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন মেয়ে সামিয়া বেগমও। আহাজারি করতে করতে সিরাজ মিয়া বলছিলেন, ‘বউ-বাইচ্চা গেলো, এখন আমারে আর দেখার কেউ রইল না।’

আজ সোমবার বেলা দুইটার দিকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের মর্গের সামনে এই দৃশ্য দেখা যায়। সিরাজ মিয়া পেশায় ট্রাকচালক। তাঁর বাড়ি বিয়ানীবাজার উপজেলার মাটিকাটা গ্রামে। তবে ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে সিলেটের আখালিয়া এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।

Also Read: ট্রাক ও অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণ গেল মা-মেয়ে ও মা-ছেলের

গতকাল রোববার বিকেলে সিলেটের গোলাপগঞ্জের হাজীপুর এলাকায় ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজন নিহত হন। তাঁদের দুজন হলেন সিরাজ মিয়ার স্ত্রী জেবু বেগম (৪৫) ও ছেলে নুরুল ইসলাম সাজিদ (২৫)। নিহত অপর দুজন হলেন বিয়ানীবাজার পৌর এলাকার নয়াগ্রামের বাসিন্দা ফারুক আহমদের স্ত্রী রাশেদা বেগম (৩৮) ও মেয়ে ফারিয়া আক্তার (১৬)।

সিলেটের গোলাপগঞ্জে ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে দুমড়ে–মুচড়ে যাওয়া অটোরিকশা

স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেবু বেগম ও নুরুল ইসলাম গতকাল বিকেলে বিয়ানীবাজার থেকে সিলেটের ভাড়া বাসায় আসছিলেন। পথে তাঁদের বহনকারী অটোরিকশাটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। সিরাজ মিয়ার এক মেয়ে ও ছেলে। মেয়ে সামিয়া বেগম বড়। তাঁর বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়েই ছিল তাঁর সংসার। তাঁরা দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর তিনি বর্তমানে একা হয়ে গেছেন। একা হয়ে যাওয়ার কথা চিন্তা করে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন তিনি।

সিরাজ মিয়া বলেন, এভাবে ছেলে ও স্ত্রীর মৃত্যু হবে তিনি কখনো কল্পনাও করেননি। ভেবেছিলেন নিজের বয়স হয়েছে, ছেলে বড় হচ্ছে। কিছু দিন পর ছেলে চাকরি পেলে তিনি আর গাড়ি চালাবেন না। অবসর সময় কাটাবেন। সে সময় স্ত্রী–সন্তানেরা তাঁকে দেখাশোনা করবেন। কিন্তু তাঁর সে স্বপ্ন, স্বপ্নই রয়ে গেছে। এখন তিনি একা হয়ে গেছেন।

সিরাজ মিয়ার মেয়ে সামিয়া বেগমও বাবার কান্না দেখে নিজেকে আটকে রাখতে পারছিলেন না। তিনিও অঝোরে কেঁদে যাচ্ছিলেন। সামিয়া বেগমের স্বামী বাবুল আহমদ শাশুড়ি ও শ্যালকের লাশের ময়নাতদন্তের বিভিন্ন প্রক্রিয়ার জন্য মেডিকেল কলেজে কথাবার্তা বলছিলেন।

গোলাপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, দুর্ঘটনায় চারজন নিহতের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। নিহত জেবু বেগমের ভাই নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এ সময় নিহত আরেক নারী রাশেদা বেগমের স্বামী ফারুক আহমদও উপস্থিত ছিলেন। একটি অভিযোগে চারজনের মৃত্যুর বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।

ওসি বলেন, ঘটনাস্থল থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা এবং ট্রাক জব্দ করা হয়েছে। তবে ট্রাকচালক এবং সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক পলাতক রয়েছেন। তাঁদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

Also Read: একসঙ্গে স্ত্রী-মেয়ের লাশ বইতে পারলেন না অ্যাম্বুলেন্সচালক ফারুক