Thank you for trying Sticky AMP!!

ফাইল ছবি

দিনে-রাতে মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ নগরবাসী

শীতের মৌসুম শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খুলনা নগরে বেড়েছে মশার উপদ্রব। মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন নগরবাসী। দিনের বেলাও মশারি টানিয়ে বা কয়েল জালিয়ে থাকতে হচ্ছে মানুষকে। স্থানীয় লোকজন বলেন, নগরের বিভিন্ন এলাকায় নালা নির্মাণের কাজ চলছে। অনেক স্থানে নালার মুখ বন্ধ করে দেওয়ায় পানি চলাচল করতে না পারায় আটকে পড়া পানিতে জন্ম নিচ্ছে মশা। তবে মশা নিধনে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না সিটি করপোরেশনকে।

সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, এখন মশার প্রজনন মৌসুম। এ সময় মশার উপদ্রব বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। তবে মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে সিটি করপোরেশন। মশা নিয়ন্ত্রণে প্রায় ২০ দিন আগে থেকে ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’ চালানো হচ্ছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে দুজন করে কর্মচারী মশা নিধনে ফগার ও স্প্রে ছিটাতে কাজ করছেন।

তবে নগরের সোনাডাঙ্গা, গোবরচাকা, মজিদ সরণি, নবীনগর, মোল্লাপাড়া, মহিবাড়ি খালপাড়, রায়পাড়া, রূপসা, নিরালা, নাজিরঘাট, গল্লামারীসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক মাসের বেশি সময় তাঁরা এলাকায় মশা নিধনের কোনো কার্যক্রম দেখেননি। নালায় কোনো কীটনাশক দেওয়া হয়নি। ফগার মেশিনের শব্দও কেউ পাননি।

ছুটির দিনগুলোয় নগরের ৭ নম্বর ঘাট এলাকার রিভারভিউ পার্কে ভিড় করেন নগরবাসী। একটু প্রশস্তি পেতে ভৈরব নদের ধারে গড়ে ওঠা ওই পার্কে মশার কারণে সন্ধ্যার পর কেউ টিকতে পারে না। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় সেখানে পরিবার নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘মশার যন্ত্রণায় সন্ধ্যার পর আর থাকতে পারলাম না। হাজার হাজার মশা, সব মশা যেন ভিড় করেছে নদীর ধারে। কতক্ষণ মশা তাড়িয়ে পারা যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই কামড়ে হাত ফুলিয়ে ফেলেছে।’

নগরের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হাবিবা খাতুন বলেন, তাঁর এলাকার প্রায় প্রতিটি নালায় পানি জমে আছে। গত এক মাসের বেশি সময় সিটি করপোরেশন থেকে নালায় কোনো তেল বা কীটনাশক ছিটায়নি। ফগার মেশিনের কোনো শব্দও পাওয়া যায়নি। সিটি করপোরেশন কোথায় মশা নিধনে কাজ করছে জানেন না, তবে তাঁদের এই এলাকায় তেমন কোনো কার্যক্রম চোখে পড়েনি। মশার উপদ্রব কোনোভাবেই কমছে না।

সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, নগরের বিভিন্ন এলাকায় নালা নির্মাণ ও সংস্কারকাজ চলছে। এতে পানিপ্রবাহ বন্ধ রয়েছে। আর আটকে থাকা ওই পানিতে মশার প্রজনন বাড়ছে। অন্যদিকে অসচেতনভাবে নালায় অনেকে আবর্জনা ফেলেন। এ কারণে পানি চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

কর্মকর্তারা জানান, শহরে মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য করপোরেশনের বাজেট কম নয়। প্রতিবছর তিন কোটি টাকার মতো খরচ হয় এই খাতে। এই অর্থবছরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও মশা নির্মূলে ১৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। সেখান থেকে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো মশা নিধনে খরচ হবে। অর্থাৎ মশা নিধনে সিটি করপোরেশন প্রতিদিন প্রায় এক লাখ টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে।

খুলনা সিটি করপোরেশনে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আনিসুর রহমান বলেন, মশার বংশবৃদ্ধি রোধে শহরের নালায় ৮০ শতাংশ ডিজেল ও ২০ শতাংশ ফার্নেস অয়েল মিশিয়ে তেল ছিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া মশা নিয়ন্ত্রণে কীটনাশকও ব্যবহার করা হচ্ছে। মশার উপদ্রব কমাতে প্রায় ২০ দিন আগে থেকে ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু করা হয়েছে। প্রতিদিন ৩১টি ওয়ার্ড থেকে ২ জন করে মশা নিধনে কাজ করছেন। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে গরম বাড়লেই মশার উপদ্রব কমে আসবে।

নগরের ব্যস্ত এলাকা গল্লামারীর কয়েকজন বলেন, তাঁরা দুই সপ্তাহের মধ্যে সিটি করপোরেশনের কাউকে মশার ওষুধ ছিটাতে দেখেননি। সন্ধ্যার পর সড়কের পাশের দোকানগুলোয় বসা যায় না। ২০ দিন আগে থেকে মশা মারার ওষুধ দেওয়া হচ্ছে, তাহলে এত দিনে এর সুফল পাওয়া যেত। বরং অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, মশা উল্টো বাড়ছে। তাঁরা এ থেকে নিস্তার চান।