Thank you for trying Sticky AMP!!

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা এলাকা অতিক্রম করার সময় স্থানীয়রা প্রধানমন্ত্রীকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান

ট্রেন ছুটে চলল, নাওডোবায় রেললাইনের পাশে দাঁড়িয়ে হাজারো মানুষের অভিবাদন

মুন্সিগঞ্জ থেকে পদ্মা সেতু পার হয়ে ভাঙ্গার দিকে রওনা হওয়া ট্রেনটি মঙ্গলবার বেলা ১টা ১৬ মিনিটে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা এলাকা অতিক্রম করেছে। ওই সময়ে হাজারো মানুষ রেললাইনের পাশে ও এক্সপ্রেসওয়েতে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিবাদন জানান। লোকজন প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে নানা ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন। অনেকে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে ও নেচেগেয়ে ট্রেন চলাচল উদ্‌যাপন করেন।

এর আগে বেলা একটার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহন করা ট্রেনটি মুন্সিগঞ্জের মাওয়া স্টেশন থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা রেলস্টেশনের দিকে রওনা হয়।
সকাল থেকে নাওডোবায় অবস্থান করে দেখা যায়, ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন ও প্রধানমন্ত্রীর ট্রেন চড়া দেখতে মঙ্গলবার সকাল থেকে শরীয়তপুরে বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ জাজিরার নাওডোবায় রেললাইনের পাশে ও পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়কে জড়ো হন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরাও আনন্দমিছিল নিয়ে নাওডোবায় আসেন।

সদর উপজেলার ভাসানচর এলাকার আবদুর রশিদ সকাল নয়টা থেকে নাওডোবায় অপেক্ষা করছিলেন প্রধানমন্ত্রীকে বহন করা ট্রেন দেখার জন্য। বেলা দেড়টার দিকে তিনি বলেন, ‘রোদ্দুর উপেক্ষা করে সাড়ে চার ঘণ্টা এক্সপ্রেস সড়কে অপেক্ষায় ছিলাম। সোয়া একটার দিকে আমাদের স্বপ্নের ট্রেন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন। আমরা তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। আজ আমরা আপ্লুত, আনন্দিত।’

মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ের গুরুদাস মনি সাত সদস্যের বাদ্যযন্ত্রের দল নিয়ে নাওডোবায় এসেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী ট্রেন নিয়ে নাওডোবা অতিক্রম করার সময় দেশের গানের সুর তোলেন বাদ্যযন্ত্রে। সেই সঙ্গে উপস্থিত জনতা স্লোগানে স্লোগানে মুখর করে তোলেন নাওডোবা এলাকা। গুরুদাস মনি বলেন, জীবনে অনেক আনন্দ উৎসবে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন জানানোর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরে তিনি আনন্দিত।

অনেকে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে ও নেচেগেয়ে ট্রেন চলাচল উদ্‌যাপন করেন

জাজিরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোবারক আলী সিকদার বলেন, ‘আমাদের গৌরবের পদ্মা সেতু দিয়ে প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা ট্রেনযাত্রা উদ্বোধন করে দক্ষিণের সমৃদ্ধির দুয়ার খুলে দিয়েছেন। অনন্তকাল তাঁর সাহসের প্রতীক হয়ে থাকবে পদ্মা সেতু। প্রধানমন্ত্রীর পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেন যাত্রা দেখতে হাজারো মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। এখন আমাদের সামনে একটা লক্ষ্য, এ রেল সংযোগ শরীয়তপুর শহর পর্যন্ত নেওয়া। সেই দাবিটা আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে করব।’

পদ্মা সেতুর রেল লিংক প্রকল্প সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুর রেল লিংক প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। গত ৪ এপ্রিল ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া স্টেশন পর্যন্ত ৪২ কিলোমিটার পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানো হয়। এরপরই ঢাকার কমলাপুর থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার ট্রেন চালানোর প্রস্তুতি নিতে থাকে রেল মন্ত্রণালয় ও পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্প। গত ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানো হয়।

Also Read: দক্ষিণের পথে রেলপথ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী, ট্রেনে চড়ে গেলেন মাওয়া থেকে ভাঙ্গা

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, পুরো রেলপথ চালু হলে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, নড়াইল, যশোর দিয়ে ট্রেন খুলনায় যেতে পারবে। একইভাবে রাজবাড়ী হয়ে উত্তরবঙ্গের পথেও ট্রেন চলতে পারবে। ভবিষ্যতে বরিশাল হয়ে পটুয়াখালীর পায়রা পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা আছে সরকারের। এই রেলপথে আগামী নভেম্বর থেকে যাত্রী নিয়ে পুরোদমে ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে। শুরুতে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে তিনটি ট্রেন চলাচল করতে পারে। ঢাকা থেকে খুলনাগামী আন্তনগর ট্রেন সুন্দরবন এক্সপ্রেস পদ্মা সেতু হয়ে যাবে। ভাঙ্গা থেকে ট্রেনটি রাজবাড়ী, পাটুরিয়া, কুষ্টিয়ার পোড়াদহ ও যশোর হয়ে খুলনায় যাবে। বর্তমানে ট্রেনটি বঙ্গবন্ধু সেতু, ঈশ্বরদী, কুষ্টিয়া হয়ে চলাচল করে।

অন্যদিকে রাজশাহী থেকে ঢাকা পর্যন্ত একটি ট্রেন চালানোর প্রস্তাব রয়েছে। বর্তমানে রাজশাহী থেকে মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনটি ভাঙ্গা পর্যন্ত চলাচল করে। পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেনটি ঢাকা পর্যন্ত সম্প্রসারণের পরিকল্পনা আছে। এ ছাড়া ঢাকা-পদ্মা সেতু হয়ে রাজবাড়ী পর্যন্ত একটি কমিউটার ট্রেন চলাচলের পরিকল্পনা আছে।