Thank you for trying Sticky AMP!!

নওগাঁর ‘মাতাজীর স্পঞ্জ মিষ্টি’ মুখে দিতেই গলে যায়

নওগাঁর মহাদেবপুরের মাতাজীহাটের স্পঞ্জ রসগোল্লা

নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার একটি বাজারের নাম মাতাজীহাট। সেই বাজারে এক বিশেষ ধরনের রসগোল্লা পাওয়া যায়। স্পঞ্জের মতো নরম সেই মিষ্টি মুখে দিতেই গলে যায়। স্পঞ্জের মতো নরম আর মাতাজীহাটে পাওয়া যায় বলে স্থানীয় লোকজনের কাছে সেই মিষ্টি ‘মাতাজীর স্পঞ্জ মিষ্টি’ নামে পরিচিত।

৫০ বছরের বেশি সময় ধরে স্থানীয় লোকজন নিজেদের আনন্দ উদ্‌যাপনে কিংবা অতিথি আপ্যায়নে ‘মাতাজীর স্পঞ্জ মিষ্টি’ বেছে নেন।

মাতাজীহাটের বিভিন্ন মিষ্টির দোকানের মালিক ও কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মহাদেবপুর উপজেলার কুন্দনা গ্রামের গণেশ চন্দ্র মণ্ডল নামের এক ব্যক্তি প্রতি বুধবার হাটের দিন মাতাজীহাটে দোকান বসিয়ে মিষ্টি বিক্রি করতেন। তিনিই প্রথম স্পঞ্জের মতো নরম রসগোল্লা বিক্রি করতেন। ধীরে ধীরে তাঁর স্পঞ্জ রসগোল্লার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর মিষ্টির বিক্রি বেড়ে যায়। একসময় মাতাজীহাটে মাটির ঘর করে সেখানে মিষ্টি বিক্রির দোকান খুলে বসেন তিনি।

Also Read: শত বছর ধরে মানুষের মুখে মুখে ভাঙ্গার ‘অনিল দাসের রসগোল্লা’

স্থানীয় কয়েক মিষ্টি কারিগর বলেন, গণেশের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে ফটিক চন্দ্র মণ্ডল ও রূপক চন্দ্র মণ্ডল ১০ বছর ধরে মিষ্টির ব্যবসা করছেন। আগে দোকানটির কোনো নাম ছিল না। স্থানীয় লোকজন দোকানটিকে গণেশের মিষ্টির দোকান বলেই চিনতেন। ছেলেরা দোকানটির নাম দেন ‘মা মিষ্টান্ন ভান্ডার’। গণেশের কাছ থেকে অনেকেই স্পঞ্জ মিষ্টি তৈরির কৌশল রপ্ত করে নিজেরা দোকান দেন। তবে গণেশের দোকানের মিষ্টির চাহিদাই বেশি।

Also Read: ঝালকাঠির ‘রসে ভরা রসগোল্লা’ একবার খেলে বারবার খেতে মন চায়

মা মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিক ফটিক চন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘আমার বাবাই এ অঞ্চলে প্রথম স্পঞ্জের রসগোল্লা তৈরি করেন। ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি, আমাদের বাড়িতে অনেক গরু লালন-পালন করা হয়। এখনো আমাদের বাড়িতে ২০টির বেশি গরু লালন-পালন করছি। নিজেদের গাভির পাশাপাশি স্থানীয় গোয়ালাদের কাছ থেকে দুধ নিয়ে প্রতি দিন ৪০ থেকে ৫০ কেজি দুধ কাঠের চুলায় জ্বাল দিয়ে ঠান্ডা করা হয়। সেই দুধের ছানা কাটা হয়। ছানার পানি ঝরে গেলে ছানা কিছুটা ঝরঝরে হয়ে ওঠে। এরপর সেই ছানা দিয়ে বানানো হয় গোল গোল মিষ্টি। সেগুলো জ্বাল দেওয়া চিনির তৈরি শিরায়। এভাবেই তৈরি হয় নরম আর সুস্বাদু রসগোল্লা। মিষ্টিগুলো হাতের আঙুল দিয়ে চাপ দিলে কিংবা মুখে নিয়ে কামড় দিলে স্পঞ্জের মতো নরম লাগে।’

স্পঞ্জের মতো নরম আর মাতাজীহাটে পাওয়া যায় বলে স্থানীয় লোকজনের কাছে সেটি ‘মাতাজীর স্পঞ্জ মিষ্টি’ নামে পরিচিত

ফটিক চন্দ্র মণ্ডল বলেন, তাঁদের দোকানে বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ৭০ কেজি মিষ্টি বিক্রি হয়। এ ছাড়া আশপাশের উপজেলার মিষ্টির দোকানগুলোতে তাঁদের মিষ্টি নিয়ে বিক্রি করা হয়। বিয়ের অনুষ্ঠান কিংবা অন্য কোনো অনুষ্ঠান থাকলে তাঁদের এখানে বেশি পরিমাণে মিষ্টির অর্ডার আসে। সব মিলিয়ে বর্তমানে প্রতিদিন তাঁদের দোকানে পাঁচ থেকে ছয় মণ স্পঞ্জ রসগোল্লা তৈরি হয়ে থাকে।

Also Read: কম মিষ্টি আর ছানার ঘ্রাণে অনন্য ফরিদপুরের ‘খোকা মিয়ার রসগোল্লা’

রাইগাঁ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও রাইগাঁ কলেজের অধ্যক্ষ আরিফুর রহমান বলেন, মাতাজীর রসে ভরা স্পঞ্জ রসগোল্লা একটি ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি। একবার খেলে বারবার খেতে মন চায়।

রাজবাড়ীর বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম নওগাঁয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনি বলেন, ‘নওগাঁ থেকে যখন রাজবাড়ীতে যাই, তখন পরিবারের সদস্যদের জন্য এই রসগোল্লা নিয়ে যাই। এই মিষ্টি যে একবার খাবে, বারবার খেতে চাইবে।’

Also Read: স্বাদে-মানে প্রিয় হবিগঞ্জের ‘আদি গোপালের রসগোল্লা’