Thank you for trying Sticky AMP!!

জামায়াত মাঠে, অস্বস্তিতে আ.লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা

● কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

● বিরামপুরে প্রথম ধাপে আগামী ৮ মে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২২ এপ্রিল প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ১৫২টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলা পরিষদও রয়েছে। তফসিল ঘোষণার আগে থেকেই এই উপজেলায় আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। এই নির্বাচন ঘিরে বিএনপির নেতা-কর্মীদের কোনো তৎপরতা নেই। তবে এক প্রভাবশালী জামায়াত নেতা মাঠে নেমেছেন। বিষয়টি আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীদের জন্য বড় ধরনের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হবে চারটি ধাপে। ২১ মার্চ প্রথম ধাপের ১৫২টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এসব উপজেলায় ভোট গ্রহণ হবে আগামী ৮ মে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীরা শহর ও গ্রামের হাটবাজার, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও ইফতার মাহফিলে ভোটারদের সঙ্গে দেখা করছেন। সেসব স্থানে তাঁরা নিজেদের জন্য ভোট ও দোয়া চাইছেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ কারণে বিরামপুরে অনেক নেতাই চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে তফসিল ঘোষণার দুই মাস আগে থেকেই আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের তিন নেতা ভোটারদের কাছে দোয়া চাওয়াসহ নানা ধরনের তৎপরতা চালাচ্ছেন। তাঁরা হলেন উপজেলা কৃষক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ব্যবসায়ী মতিউর রহমান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পারভেজ কবীর ও জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি দেলোয়ার হোসেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান খায়রুল আলম ু। এই কারণে দলের শীর্ষ নেতাদের আশীর্বাদ হারিয়ে তিনি এখন কোণঠাসা। তিনি আগামী নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না, সেটি এখনো প্রকাশ করেননি। দুই মাস ধরে এলাকায় পোস্টার, ফেস্টুন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে ভোটারদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা চালাচ্ছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকের ঘনিষ্ঠ সহযোগী সোহেল রানা। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় ভোটারদের কাছে গিয়ে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন উপজেলা কৃষক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পারভেজ কবীর ও জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি দেলোয়ার হোসেন।

এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খায়রুল আলম রাজু প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি না। দলের পক্ষ থেকে আমরা সবাই পারভেজ কবীর ভাইকে প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দিয়েছি।’

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপির স্থানীয় নেতা–কর্মীদের মধ্যে কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি। এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্তের বাইরে আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত নেই। নির্বাচনে আসা স্থানীয় বিএনপির কোনো সিদ্ধান্ত নয়।’

তবে তফসিল ঘোষণার এক দিন আগে থেকেই জামায়াতে ইসলামীর দিনাজপুর দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার নায়েবে আমির মুহাদ্দিস এনামুল হক নির্বাচনী তৎপরতা শুরু করেছেন। হঠাৎ করে জামায়াতের এই নেতার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের কাছে অনেকটাই অস্বস্তি ফেলে দিয়েছে। কারণ, সাংগঠনিক দক্ষতা ও জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনে জয়ী হতে তাঁকে তেমন বেগ পেতে হবে না বলে স্থানীয় জামায়াত নেতাদের দাবি।

জানা গেছে, ২০১৪ সালের চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কাপ-পিরিচ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন জামায়াত নেতা মুহাদ্দিস এনামুল হক। ওই নির্বাচনে চারজন প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি। নির্বাচনে পড়া বৈধ ৯০ হাজার ১৪৫ ভোটের মধ্যে তিনি ২২ হাজার ১৪৫ ভোট পান। আর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পারভেজ কবীর ২৩ হাজার ৬০৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তবে ওই নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হলেও ভোট কারচুপির মাধ্যমে তাঁকে ১ হাজার ৪৬২ ভোটের ব্যবধানে হারানো হয়েছিল বলে অভিযোগ করেন জামায়াত নেতা মুহাদ্দিস এনামুল হক।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সম্ভাব্য চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী পারভেজ কবীর প্রথম আলোর কাছে দাবি করে বলেন, ‘এবার আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার সুযোগ নেই। তবে স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগের জেলা ও উপজেলা শাখা থেকে আমাকে সমর্থন দেওয়া হয়েছে। জামায়াত থেকে একজন নির্বাচনের জন্য মাঠে নেমেছেন। আর আওয়ামী লীগ থেকে চারজন। জামায়াত নেতার সঙ্গে মাঠে তো একটা লড়াই হবেই। তবে মাঠে নামলেই বোঝা যাবে কার কী অবস্থান।’

এ বিষয়ে জামায়ত নেতা ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী এনামুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্তে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার জন্য আমাকে বলা হয়েছে। গত বুধবার থেকে সাংগঠনিকভাবে নির্বাচনী মাঠে কাজ শুরু করেছি। নির্বাচন সামনে রেখে এলাকার সাধারণ ভোটারদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ থাকলে আমি ব্যাপক ভোটের ব্যবধানে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হব ইনশা আল্লাহ।’

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিরামপুর উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ৪৯ হাজার ৩৪৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭৪ হাজার ৫৪৮ আর নারী ভোটার ৭৪ হাজার ৭৯৫ জন। হিজড়া ভোটার রয়েছেন ৪ জন। ৮ মে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ১৫ এপ্রিল মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ। ২২ এপ্রিল প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। ২৩ এপ্রিল প্রতীক বরাদ্দ করা হবে।

এ বিষয়ে দিনাজপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’