Thank you for trying Sticky AMP!!

রক্তচাপ কম, ভুগছেন পানিশূন্যতায়, তবুও দাবি না মানা পর্যন্ত স্যালাইন নেবেন না সামিউল

হামলার পর চিকিৎসাকেন্দ্রে আছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম। আজ বুধবার দুপুরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল মঙ্গলবার রাতে হামলার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে অবস্থান করছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম। চিকিৎসক বলছেন, সামিউলকে এই মুহূর্তে স্যালাইন নেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে তাঁর বমি ও খিঁচুনি হতে পারে। তবে সামিউল মীর মশাররফ হোসেন হলের অছাত্রদের হল থেকে বের না করা পর্যন্ত স্যালাইন নেবেন না বলে জানিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের উপপ্রধান মেডিকেল কর্মকর্তা বীরেন্দ্র কুমার বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ বুধবার সকালে ওই শিক্ষার্থীকে দুবার পর্যবেক্ষণ করেছি। তাঁর রক্তচাপ ৯০/৭৫ পর্যায়ে আছে। তাঁর ডিহাইড্রেশন (পানিশূন্যতা) আছে। এখন স্যালাইন নেওয়া প্রয়োজন। তা নাহলে খিঁচুনি, বমি ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে।’

তবে নিজের দাবি পূরণ হওয়ার আগপর্যন্ত স্যালাইন নেবেন না বলে জানান সামিউল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত রাতে আমার ওপর হামলা হয়। আমার সঙ্গে থাকা প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদেরও ওপরও হামলা হয়। তার পর থেকে চিকিৎসাকেন্দ্রে আছি। আমাকে ডাক্তার পরীক্ষা করে স্যালাইন নিতে বলেছেন। তবে অছাত্রদের বের না করা পর্যন্ত আমি স্যালাইন নেব না। আমি এখন চিকিৎসাকেন্দ্রে আছি। আমার সঙ্গে মার খাওয়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনে আবার অবস্থান নেব।’

Also Read: অনশনরত সামিউলের ওপর ছাত্রলীগের হামলা, বিছানায় আগুন

এদিকে গতকাল হামলার পর আগের তিন দফা দাবির সঙ্গে আরও দুটি দাবি যোগ করেছেন অনশনকারী শিক্ষার্থী সামিউল ও হামলার শিকার শিক্ষার্থীরা। নতুন দাবি দুটি হলো মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাব্বির আলম এবং প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসানকে অব্যাহতি দেওয়া এবং হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বের করে রাষ্ট্রীয় আইনে ব্যবস্থা নেওয়া।

সামিউল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ৪৯তম ব্যাচ এবং মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। গত বুধবার রাত থেকে তিনি মীর মশাররফ হোসেন হলের খেলার মাঠে অবস্থান নেন। তবে গতকাল সকাল থেকে তিনি হলের অফিসকক্ষের সামনে অবস্থান নিয়েছিলেন। তার আগের দাবি তিনটি হলো অছাত্রদের হল থেকে বের করা, গণরুম বিলুপ্ত করা এবং মিনি গণরুমে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের আসন নিশ্চিত করা।

Also Read: আজকের মধ্যে অছাত্রদের তালিকা তৈরির আশ্বাস উপাচার্যের

এদিকে গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে মীর মশাররফ হোসেন হল শাখা ছাত্রলীগের শতাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে অনশনরত শিক্ষার্থীকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে মারধরের অভিযোগ উঠে। একপর্যায়ে সামিউলের বিছানা-বালিশে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। অনশনরত সামিউলকে জোর করে অ্যাম্বুলেন্সে উঠিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় বাধা দিতে গেলে সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচীকে মারধর করা হয়। এ ছাড়া ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক আলিফ মাহমুদ, মাশিয়াত সৃষ্টি, মনিকা নকরেক ও শারমিন সুরকে হেনস্তা করা হয়। পরে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমের বাসভনের সামনে অবস্থান নেন প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা। পরে তাঁরা সামিউলের তিন দাবির সঙ্গে নতুন দুটি দাবি যোগ করে উপাচার্যকে ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানান। উপাচার্য আজ ডিসিপ্লিন বোর্ড ডেকে সিদ্ধান্ত নেবেন বলেন জানালে শিক্ষার্থীরা হলে ফিরে যান।

Also Read: সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকারের দাবিতে আমার এ কর্মসূচি

এদিকে ঘটনার সঙ্গে মীর মশাররফ হোসেন হলের ছাত্রলীগের কেউ জড়িত নন বলে দাবি করেছেন ওই হলের নেতা-কর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী বিপ্লব হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের যেকোনো উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। রাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই হলের নন, এমন শতাধিক শিক্ষার্থীকে হল থেকে চলে যেতে বলা হলে তাঁরা হলের সামনে চলে যান। এরপর শুনেছি আন্দোলনরত সামিউলের সঙ্গে থাকা প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হল থেকে বের হওয়া শিক্ষার্থীদের বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনার সময় ছাত্রলীগের কেউই সেখানে ছিলেন না।’