Thank you for trying Sticky AMP!!

গরু-ভেড়া-হাঁসের জিন নকশা উন্মোচন নিয়ে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার

বাংলাদেশের নিজস্ব সক্ষমতায় প্রথমবারের মতো ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজির (এনআইবি) গবেষকেরা দেশি জাতের গরু (মুন্সিগঞ্জ ক্যাটল বা মীরকাদিম গরু), ভেড়া ও হাঁসের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্স (জিন নকশা) উন্মোচন করেছেন। পুরো প্রক্রিয়াটি এনআইবির নিজস্ব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরাই করেছেন। এটি করা হয়েছে ‘সেন্টার ফর নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং অ্যান্ড অ্যানালিটিকস’ প্রকল্পের আওতায়। সার্বিক বিষয় নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে প্রকল্পের পরিচালক এনআইবির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) কেশব চন্দ্র দাসের সঙ্গে।

কেশব চন্দ্র দাস
প্রশ্ন

জিনোম সিকোয়েন্সিং বিষয়টা কী?

কেশব চন্দ্র দাস: জিনোম বলতে বোঝায় একটি জীবের বৈশিষ্ট্যের জেনেটিক বিন্যাস বা নকশা। অর্থাৎ, প্রাণীর বৈশিষ্ট্য এই জিনোমের নির্দিষ্ট বিন্যাস বা জেনেটিক কোডের ওপর নির্ভর করে। জেনেটিক কোড (ডিএনএর অংশ), যা নিউক্লিওটাইড বেজ (A, T, C and G) দ্বারা গঠিত এবং তা জীবের বিকাশ ও গঠনের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা বহন করে। এসব নির্দেশনার সমন্বয়ই হলো জিনোম। আর জিনোম সিকোয়েন্সিং হলো এই নির্দেশনা বা বৈশিষ্ট্য বহনকারী জেনেটিক কোড ও এর বিন্যাসের ক্রম নির্ণয় করার একটি পদ্ধতি। এটি একটি জীবের ক্রোমোজম, মাইটোকন্ড্রিয়াতে থাকা ডিএনএর জেনেটিক কোডের বিন্যাস ক্রমানুসারে অন্তর্ভুক্ত করে।

প্রশ্ন

বাংলাদেশের নিজস্ব সক্ষমতায় প্রথমবারের মতো এনআইবির গবেষকেরা দেশি জাতের গরু, ভেড়া ও হাঁসের পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্সিং বা জিন নকশা উন্মোচন করেছেন। শুরুটা কীভাবে করেছিলেন?

কেশব চন্দ্র দাস: করোনা মহামারির সময়ে প্রথম সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে এনআইবি SARS-CoV-2 ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন করে। ভবিষ্যতের দুর্যোগ মোকাবিলাসহ জিনোমিকসের বিশ্বমানের গবেষণা এবং এ–সংক্রান্ত সেবা প্রদানের লক্ষ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানের দিকনির্দেশনায় ‘সেন্টার ফর নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং অ্যান্ড অ্যানালিটিকস’ প্রকল্প শুরু করা হয়েছিল। গত ১২ জানুয়ারি তিনি এনআইবিতে এ–সংক্রান্ত গবেষণাগারটি উদ্বোধন করেন। তখন দেশি জাতের তিনটি প্রাণীর (গরু, ভেড়া ও হাঁসের) জিনোম সিকোয়েন্সিং কার্যক্রমের সূচনা হয়।

প্রশ্ন

প্রকল্পটি হাতে নেওয়ার কারণ কী? এই প্রকল্পের আওতায় আর কী কী কাজ করা হবে?

কেশব চন্দ্র দাস: স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রকল্পটির আওতায় মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়াসহ অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ জীবসম্পদের জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হবে। সেগুলো বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ও টিকা তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

প্রশ্ন

এই গবেষণায় আর কে কে যুক্ত ছিলেন?

কেশব চন্দ্র দাস: এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এনআইবির মহাপরিচালক মো. সলিমুল্লাহ, এনআইবির মলিকুলার, অ্যানিমেল ও বায়োইনফরমেটিকস বিভাগের বিজ্ঞানী ও মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নুসরাত জাহান (চলতি দায়িত্ব), সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আঞ্জুমান আরা ভূঁইয়া, ইউএস মাহজাবিন আমিন ও মো. মনিরুজ্জামান, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. হাদিসুর রহমান, মোহাম্মদ উজ্জ্বল হোসেন, ইসতিয়াক আহমেদ, তামিম আহসান, জিশান মাহমুদ চৌধুরী ও অরিত্র ভট্টাচার্য্য।

প্রশ্ন

জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের মধ্য দিয়ে কী কী তথ্য পেয়েছেন?

কেশব চন্দ্র দাস: জিনোম অ্যাসেমব্লি ও বিশ্লেষণ শেষে দেশীয় মীরকাদিম জাতের গরুটির জিনোমের দৈর্ঘ্যে ২২৩ কোটি ৪৫ লাখ ৩২ হাজার ৮৫৬ জোড়া নিউক্লিওটাইড পাওয়া গেছে। বাংলাদেশের মীরকাদিম জাতটি ভারতীয় জেবু জাতের গরুর সঙ্গে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। এই তথ্য প্রথমবারের মতো বাংলাদেশি একটি গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফল থেকে প্রমাণিত হলো। এ ছাড়া গবেষণায় গরুটির জিনোমে ১ কোটি ৮৯ হাজার ৪৫৩টি জেনেটিক পলিমরফিজম শনাক্ত করা হয়েছে, যা জাতটির জেনেটিক বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরেছে। এই গরুর জিনোমে মাংস উৎপাদনসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি জিন আমরা পেয়েছি এবং জিনগুলোর মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন শনাক্ত করা হয়েছে। এ গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল উচ্চ মাংস উৎপাদনক্ষম গরুর জাত নির্বাচনে সহায়তা করবে। ভেড়া ও হাঁসের জিনোম অ্যাসেমব্লি ও বিশ্লেষণ সম্পন্ন করা হয়েছে, যাতে ভেড়ার জিনোমের দৈর্ঘ্যে ২৮৬ কোটি ৯৪ লাখ ৭৯ হাজার ৯২৫ জোড়া নিউক্লিওটাইড এবং হাঁসে ১৩৩ কোটি ৬ লাখ ৫৪ হাজার ৭৩৫ জোড়া নিউক্লিওটাইড পাওয়া গেছে।

প্রশ্ন

কাজটি করতে গিয়ে কত সময়ের প্রয়োজন হলো? কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা ছিল কি?

কেশব চন্দ্র দাস: প্রায় ছয় মাসের এক বিরামহীন যাত্রা ছিল এই সফলতার পেছনে। নানাবিধ সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। প্রথমেই বলব বিদ্যুতের সমস্যার কথা। এর ফলে আমাদের রাতের পর রাত কাজ করতে হয়েছে। সময়মতো রাসায়নিক উপাদান পাওয়া ও জনবলের ঘাটতি আমাদের ভুগিয়েছে।

প্রশ্ন

জিনোম সিকুয়েন্সিং প্রযুক্তির অগ্রগতিতে ইতিমধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়েছে, এমন বিষয়গুলোর মধ্যে কী কী আছে?

কেশব চন্দ্র দাস: জিনোম সিকোয়েন্সিং প্রযুক্তির অগ্রগতি ইতিমধ্যে কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার ওপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। বিভিন্ন ফসল, পশুসম্পদ ও জীবাণুর জিনোম সিকোয়েন্স করার মাধ্যমে গবেষকেরা বিভিন্ন জীবের জেনেটিক গঠন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারছেন। এই তথ্য বিভিন্ন জীবের উৎপাদনশীলতা, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা এবং পুষ্টির মান উন্নত করতে সাহায্য করছে। বাংলাদেশ থেকে ইতিমধ্যে পাট, মহিষ, ইলিশ, করোনা ভাইরাসসহ বিভিন্ন জীবাণুর জিন নকশা উন্মোচন করা হয়েছে।

প্রশ্ন

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এর গুরুত্ব কী হতে পারে?

কেশব চন্দ্র দাস: এ ধরনের উন্নত জিনোম বিশ্লেষণ প্রযুক্তি দেশের প্রাণিসম্পদ শিল্পে গবাদিপশুর আরও সুনির্দিষ্ট উপায়ে প্রজনন, মাংস ও দুধের উৎপাদন বৃদ্ধি, পুষ্টিমানের উন্নয়নসহ দেশি গরুর জাত উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে সহায়তা করবে।