Thank you for trying Sticky AMP!!

৫ মাস ধরে ট্রেন চলাচল বন্ধ, যাত্রীদের ভোগান্তি

যাত্রীদের রেলের তুলনায় বাসে তিন থেকে পাঁচ গুণ বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থী ও নিম্ন আয়ের মানুষের পকেটে টান পড়ছে।

নারায়ণগঞ্জ জেলার মানচিত্র

পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগ স্থাপন এবং ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথে উন্নয়নকাজের জন্য ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ পাঁচ মাস ধরে। এতে ভুগতে হচ্ছে এই রেলপথের নিয়মিত যাত্রীদের। তাঁদের অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে বাসে যাতায়াত করতে হচ্ছে। বেশি ভুগতে হচ্ছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, পেশাজীবী, নিম্ন আয়ের মানুষদের।

গত বছরের ৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ রেলওয়ে জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সরকারের ফাস্ট ট্র্যাকযুক্ত প্রকল্প ও পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে গেন্ডারিয়া অংশে তিনটি পৃথক রেললাইন নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে।

কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী সব ট্রেন সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এই লাইনে পুনরায় ট্রেন চলাচল শুরু হবে। সে সময় তিন মাসের মধ্যে ট্রেন চালু করা হবে বলে জানিয়েছিল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

গত রোববার দুপুরে চাষাঢ়া রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, স্টেশন মাস্টারের রুম তালাবদ্ধ। কিছু মানুষ বসে দাবা খেলছেন, কিছু মানুষ অলস সময় কাটাচ্ছেন। স্টেশন মাস্টার কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দ্রুতই ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথে ট্রেন চলাচল শুরু হবে বলে তাঁদের জানানো হয়েছে। ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় এখানকার জনবল নিয়ে ঢাকার বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে কাজে লাগানো হচ্ছে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথে প্রতিদিন আট জোড়া ট্রেন চলাচল করত। প্রতিদিন এই রেলপথে ১০ থেকে ১২ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতেন। ট্রেনে বেশির ভাগ যাত্রী ছিলেন বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার্থী, অফিস-আদালতগামী যাত্রী, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের কর্মজীবী মানুষ। ট্রেনে ভাড়া ছিল ১৫ টাকা করে। ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় রেলের যাত্রীদের বাসে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এই রুটে চলাচলকারী বাসগুলোর মধ্যে আছে বিআরটিসি দোতলা বাস, উৎসব, বন্ধন, হিমাচল, আনন্দ এবং শীতাতপনিয়ন্ত্রিত শীতল পরিবহনের বাস। বিআরটিসি বাসে ভাড়া ৫০ টাকা, অন্যান্য বাসে ৫৫ টাকা। শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বাসে চড়লে ভাড়া গুনতে হয় ৮০ টাকা। রেলের তুলনায় বাসভাড়া সাড়ে তিন গুণ থেকে পাঁচ গুণ বেশি।

প্রতিদিন নারায়ণগঞ্জ থেকে ট্রেনে ঢাকায় যাতায়াত করতেন আবুল বাশার। তিনি ঢাকার মতিঝিলে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে অফিস সহকারী হিসেবে কাজ করেন। বাসে যাতায়াত করতে গিয়ে তাঁর খরচ বেড়ে গেছে। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আবুল বাশার বলেন, ট্রেনে যাতায়াত করলে ভাড়া কম লাগত। এখন বাসে যাতায়াতে কয়েক গুণ বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে।

ট্রেনে যাতায়াত করলে অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি যানজটের বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় বলে জানান ব্যবসায়ী শামীম মিয়া। তিনি বলেন, ঢাকায় পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীরা বেশি বিপাকে পড়েছেন। কোনো অদৃশ্য কারণে ট্রেন বন্ধ দীর্ঘায়িত করা হচ্ছে কি না, সেটি নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে।

পাঁচ মাসেও ট্রেন চলাচল শুরু না হওয়ায় যাত্রী ভোগান্তির বিষয়টি উল্লেখ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ট্রেন বন্ধ থাকায় নারায়ণগঞ্জের যাত্রীদের ভোগান্তি এখন চরমে পৌঁছেছে। আমরা গত ডিসেম্বর মাসে ঢাকায় রেলের পরিচালকের সঙ্গে দেখা করে দ্রুত ট্রেন চলাচলের দাবি জানালে তিনি মার্চের মধ্যে চালু হবে বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু তা এখনো হয়নি। এখন দ্রব্যমূল্যের বাজারে অতিরিক্ত টাকায় বাসে যাতায়াত করতে গিয়ে মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। আমরা অতি দ্রুত ট্রেন চালুর দাবি জানাচ্ছি।’

২০১৪ সালের ১ জুলাই ৩৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনের সমান্তরাল একটি ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর। এর মধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ আগামী বছরের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

প্রকল্পের কাজ ৮২ শতাংশ শেষ হয়েছে জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. সেলিম রউফ জানান, আগামী বছরের জুনে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, প্রকল্পের সময় বাড়লেও ব্যয় বাড়েনি। তবে পুরোনো মিটারগেজ লাইনকে ডুয়েল গেজ লাইনে রূপান্তরের জন্য আরও ২৭৯ কোটি টাকা প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।

সেটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। ডুয়েল গেজ লাইন চালু হলে প্রতিদিন ৩২ জোড়া ট্রেন চলাচল করতে পারবে। আগামী এক মাসের মধ্যে এই লাইনে ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রকল্প পরিচালক।