Thank you for trying Sticky AMP!!

শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জয় করে খামার গড়েছেন হুমায়ুন

নিজের খামারের গরুগুলোকে ঘাস খাওয়াচ্ছেন খামারি মো. হুমায়ুন কবির। সম্প্রতি কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার মিথিলাপুর গ্রামে

সময়টা ছিল ২০১৫ সালের জুলাই মাস। হঠাৎ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয় মো. হুমায়ুন কবিরের। তখন তাঁর বয়স ৩৮ বছর। চাকরি করতেন একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে। মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণের পর ডান হাত প্রায় অক্ষম হয়ে যায়। কথায় জড়তা চলে আসে। চাকরি ছেড়ে ফিরে আসেন কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের মিথিলাপুর গ্রামে।

বাড়িতে ফিরে আসার পর মো. হুমায়ুন কবিরের উপার্জনহীন দিনকাল ভালো কাটছিল না। দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে আর্থিক সংকটে পড়েন। ২০১৮ সালের শেষ দিকে একটি গরু কেনেন। ওই গরু মোটাতাজা করা শুরু করেন। এভাবে একটি গরু থেকে ১১টি গরু বাড়িয়ে তিনি একটি সমন্বিত খামার তৈরি করেন। তিনটি পুকুর নিয়ে আছে একটি মাছের খামার। চাষবাদ করেন সবজিও। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা মাড়িয়ে হুমায়ুন এখন আদর্শ খামারি। সফল উদ্যোক্তা। খামার ঘিরেই কেটে যায় তাঁর দিনরাত।

ষোলনল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেন বলেন, হুমায়ুনের কথা বলতে সমস্যা হয়। এক হাত অকেজো। এরপরও তিনি দিনরাত পরিশ্রম করে এগিয়ে যাচ্ছেন।

হুমায়ুন কবির চাকরি থেকে আসার পর নিজেই উদ্যোক্তা হয়েছেন। তাঁর এ ধরনের কর্মতৎপরতা দৃষ্টান্ত হতে পারে বলে মন্তব্য করেন ষোলনল ইউনিয়নের সোনার বাংলা কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজা সৌরভ।

সম্প্রতি এক সকালে মিথিলাপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, হুমায়ুন কবির জমি থেকে ঘাস তুলছেন। ৪০ শতাংশ জমিতে তিনি ঘাসের চাষ করছেন। ওই ঘাস খামারের গরুর জন্য তুলছেন। বেলা বাড়ার পর তিনি সবজিখেতে যান। সেখানে ঢ্যাঁড়স, করলা ও চালকুমড়ার পরিচর্যা করেন। এরপর ৬৫ শতাংশের তিনটি পুকুরে মাছের খাবার ছিটান। পুকুর তিনটি রুই, কাতলা ও পাঙাশ মাছ আছে। মাছগুলো খাবার পেয়ে ছোটাছুটি করছে। এ কাজে তাঁর সঙ্গে হাত মেলান ছোট ভাই সাইদুল কবির। সমন্বিত এই খামারের আয় দিয়েই চলছে তাঁর গোটা পরিবার।

হুমায়ুন কবিরের বয়স এখন ৪৬ বছর। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও মনের জোরে তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে হুমায়ুন সবার বড়। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে প্রাণিবিজ্ঞানে মাস্টার্স করেছেন তিনি। পরে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেন। তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আরও বড় জায়গা নিয়ে খামার করা। গ্রামের শিক্ষিত বেকার, অর্ধশিক্ষিতদের কর্মসংস্থান করা। এই খামারকে তিনি একটি মডেল খামার করতে চান। কারও কাছে হাত না পেতে তিনি খামার সম্প্রসারণ করেছেন।

প্রতিবেশী জামাল হোসেন বলেন, অসুস্থ হওয়ার পর হুমায়ুন কবির তাঁর খামার নিয়ে পড়ে আছেন। দিনে দিনে তাঁর খামারের কলেবর বাড়ছে।

হুমায়ুন কবির বলেন, ডান পা কোনোরকমে চালাতে পারেন। ডান হাতে বোধ কম। কথায় জড়তা আছে। ভাবলেন, এভাবে বসে থেকে তো লাভ নেই। কিছু একটা করতে হবে। এরপর অনেক চেষ্টায় পাঁচ বছরে গড়ে তুলেছেন এই সমন্বিত খামার। এর মাধ্যমে পরিবারের সবজি ও মাছের চাহিদা মেটে। সেই সঙ্গে বিক্রি করে সংসারও চলে।