Thank you for trying Sticky AMP!!

শিক্ষকতা ছেড়ে সফল উদ্যোক্তা হাওরের শায়লা

শায়লা আক্তার

হবিগঞ্জে একটি উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন হাওরের মেয়ে শায়লা আক্তার (৩২)। তবে তাঁর মন পড়ে ছিল সুই-সুতায়। ছোটবেলা থেকেই সেলাই আর হাতের কাজে বেশ পারদর্শী শায়লা। পারিবারিক চাপেই একসময় শিক্ষকতা শুরু করেছিলেন।

তবে ২০১৯ নিজের সিদ্ধান্তে ওই চাকরি ছেড়ে দেন। এরপর কিশোরগঞ্জের নিকলীতে বাড়িতে ফিরে নিজের প্রতিষ্ঠান চালু করেন শায়লা। তখন শায়লার পুঁজি মাত্র পাঁচ হাজার টাকা। সঙ্গে ছিলেন পাঁচজন কর্মী। মাত্র চার বছরের ব্যবধানে শায়লার অধীন কর্মীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪৫। তাঁর উৎপাদিত পণ্য বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে। পাশাপাশি দুবাই, সিঙ্গাপুর ও জর্ডানেও তাঁর পণ্যের বেশ চাহিদা আছে।

শায়লা শুধু নিজেকে স্বাবলম্বী করে বসে থাকেননি, পাশাপাশি গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত বেকার নারীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। শায়লার প্রতিষ্ঠিত ‘আশফিয়া প্রশিক্ষণকেন্দ্র’–এর মাধ্যমে প্রায় ৭০০ নারী বিনা মূল্যে সেলাই ও হাতের কাজ শিখেছেন। এর মধ্যেই অনেকেই এখন নিজেদের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। শায়লার অধীন এখন যাঁরা কাজ করেন, তাঁরাও এই কেন্দ্র থেকেই প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

কিশোরগঞ্জের নিকলী সদর ইউনিয়নের নগর গ্রামের মেয়ে শায়লা আক্তার। ঢাকার তিতুমীর কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন তিনি। এ ছাড়া তিনি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে সেলাই প্রশিক্ষণসহ ফ্যাশন ডিজাইনিং ও হ্যান্ডপেইন্টের বিষয়ে একাধিক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।

শায়লা বলেন, মূলত বড় বোনের কাছ থেকেই তিনি এসব কাজ শিখেছেন। এসএসসি পরীক্ষার পর অবসর সময়ে কিছু ওয়ালম্যাট তৈরি করেছিলেন তিনি। পরে সেগুলো আত্মীয়স্বজনকে উপহার দেন। তাঁর এ কাজ দেখে সবাই প্রশংসা করেন। তখন আত্মীয়স্বজনসহ প্রতিবেশীদের অনেকেই তাঁকে কাজের ফরমাশ দিতে শুরু করেন।

এর পর থেকেই টুকটাক কাজ করে বাড়তি আয় করতে শুরু করেন তিনি।
শায়লা তখন থেকেই এ কাজকে পেশা হিসেবে নিতে চেয়েছিলেন। তবে পরিবারের সদস্যরা এ বিষয়ে সমর্থন দিতেন না। পরে হবিগঞ্জে একটি উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন শায়লা। ২০১৯ সালে বাবাকে হারান তিনি। এরপর বাড়িতে ফিরে নিজের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন তিনি।

সম্প্রতি নিকলীর নগর গ্রামে শায়লার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ৫০ জন নারীকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন শায়লা। এ সময় জেসমিন আক্তার নামের এক প্রশিক্ষণার্থী বলেন, পড়ালেখার ফাঁকে ফাঁকে তিনি ছেলেমেয়েদের জামা ও কাঁথায় নকশা করা শিখছেন। এ কাজের মাধ্যমে ইতিমধ্যে তিনি আয় করতে শুরু করেছেন। গ্রামের অনেক মেয়ে এখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে আয়ের পথ খুঁজে নিয়েছেন। তাঁরা নিজেদের পড়াশোনার খরচ মিটিয়ে পরিবারকেও সহযোগিতা করছেন।

গ্রামের নারীদের বিনা মূল্যে সেলাই ও হাতের কাজের প্রশিক্ষণ দেন শায়লা

শায়লা বলেন, ‘এই প্রশিক্ষণকেন্দ্রে বুটিকস, কুশিকাটা, ব্লকপ্রিন্ট, হ্যান্ডপ্রিন্ট, নকশিকাঁথা ও সেলাইয়ের কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ২০১৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০০ জন নারীকে বিনা পয়সায় প্রশিক্ষণ দিয়েছি। প্রশিক্ষণ শেষ করে কেউ কেউ আমার অধীন কাজ করছেন। আবার অনেকেই স্বাধীনভাবে ব্যবসা করছেন। অনেক মেয়ে ঘর থেকে বের হতে চান না। তাঁরা বাড়িতে বসেই কাজ করতে চান। আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমি তাঁদের বাড়িতে গিয়ে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে আসি।’

শায়লার তৈরি হ্যান্ডপেইন্টের পাঞ্জাবি, জামা, কুশিকাটার পণ্য, নকশিকাঁথা ও বিছানার চাদর দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হয়। এ ছাড়া আশফিয়া ড্রিম ফ্যাশন নামের ফেসবুক পেজের মাধ্যমে অনলাইনেও বিক্রি হয় এসব পণ্য। শায়লা বলেন, ‘বর্তমানে আমার অধীনে ৪৫ জন কর্মী কাজ করছেন। তাঁদের নিয়মিত পারিশ্রমিক দেওয়ার পর প্রতি মাসে আমার ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় হয়। আমার কাছে কাজ শিখতে আসা মেয়েদের সব সময় বলি, “আপনারা কারও দয়া বা করুণায় চলবেন না। সবাই নিজেদের উপার্জনে চলবেন।” সেলাই কিংবা হাতের কাজ করলে বাড়িতে বসেই অনেক টাকা আয় করা যায়। গ্রামের অনেক মেয়ের অনেক প্রতিভা ও মেধা আছে। আমি চাই, এসব মেয়ে অবসরে মুঠোফোনে সময় নষ্ট না করে মেধা কাজে লাগিয়ে ভালো কিছু করুক এবং স্বাবলম্বী হোক।’

নিকলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. শাকিলা পারভীন বলেন, নিকলীর মতো প্রত্যন্ত এলাকার মেয়ে হয়েও শায়লা বিভিন্ন সামাজিক প্রতিবন্ধকতা জয় করে সফল হয়েছেন। তিনি এ এলাকার অন্য নারীদেরও স্বাবলম্বী করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর এ কার্যক্রম নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার।