Thank you for trying Sticky AMP!!

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে শামীম ওসমান একাই সরব

শামীম ওসমান ছাড়া অন্য প্রার্থীদের তেমন কোনো নির্বাচনী কার্যক্রম নেই। সংসদীয় এলাকায় তাঁদের পোস্টার বা ব্যানার খুব একটা চোখে পড়ে না।

শামীম ওসমান

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে নির্বাচনী প্রচারে তৎপর আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। প্রতিদিনই তিনি, তাঁর স্বজন ও অনুসারীরা বিভিন্ন এলাকায় প্রচারে নামছেন। বিপরীতে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী সাত প্রার্থী সেভাবে প্রচারে নেই। অনেকটা নীরব রয়েছেন তাঁরা। ফলে আসনটিতে একতরফা নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

শামীম ওসমান আসনটিতে তিনবারের সংসদ সদস্য। আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ১৯৯৬ সাল এবং গত দুই জাতীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এবারও ওসমান পরিবারের এই সদস্যকে বেছে নিয়েছে আওয়ামী লীগ।

ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন শিল্প ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। এ আসনের মোট ভোটার ৬ লাখ ৯৬ হাজার ১৩৯ জন। এ নির্বাচনী এলাকায় বর্ষাকালে ডিএনডির জলাবদ্ধতার ভোগান্তি সবচেয়ে বড় সমস্যা। এ ছাড়া ফতুল্লাসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাঙাচোরা, কাঁচা রাস্তাঘাট এবং মাদক ও সন্ত্রাসের সমস্যাও প্রকট। 

এবার অনেক আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে দলের অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও নারায়ণগঞ্জ–৪ আসনে তা হয়নি। এ আসনে শামীম ওসমানের প্রতিদ্বন্দ্বীরা হলেন তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী (সোনালী আঁশ) আলী হোসেন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী (ডাব) গোলাম মোরশেদ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) প্রার্থী ছৈয়দ হোসেন (মশাল), জাকের পার্টির প্রার্থী (গোলাপ ফুল) মুরাদ হোসেন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (আম) শহীদ উন নবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (একতারা) সেলিম আহমেদ, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের (চেয়ার) হাবিবুর রহমান। মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন জাতীয় পার্টির ছালাউদ্দিন। পরে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে সরে দাঁড়ান তিনি।

যে প্রার্থীদের ভোটাররা চেনেন না, তাঁদেরকে ভোট দেওয়ার আগ্রহ ও উৎসাহ একেবারে কম হবে বলে আমার বিশ্বাস।
ধীমান সাহা, সুজনের জেলা কমিটির সভাপতি 

ভোটের মাঠে এসব প্রার্থীর তেমন কোনো কার্যক্রম নেই। উল্লেখ করার মতো নেই তাঁদের পোস্টার বা ব্যানার। জনসংযোগেও খুব একটা দেখা যায় না তাঁদের। ফলে নির্বাচনে শক্তিশালী কোনো প্রার্থীর বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে না শামীম ওসমানকে।

এ আসনের নির্বাচনের চিত্র তুলে ধরে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলা কমিটির সভাপতি ধীমান সাহা (জুয়েল) প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ আসনের নৌকার প্রার্থী শামীম ওসমান আলোচিত-সমালোচিত হওয়ার কারণে সে ক্ষেত্রে তাঁর একটি পরিচিতি আছে। তাঁর বিপক্ষে আমরা যে চিত্র দেখি, তা সারা দেশের ন্যায় কিংস পার্টির প্রার্থীদের একটি সম্মেলন। যাঁদের অনেককেই ভোটাররা চেনেন না। যে প্রার্থীদের ভোটাররা চেনেন না, তাঁদেরকে ভোট দেওয়ার আগ্রহ ও উৎসাহ একেবারে কম হবে বলে আমার বিশ্বাস।’

তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী আলী হোসেন দাবি করেন, তিনি ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাইছেন। জনগণের ভালো সাড়াও পাচ্ছেন। জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী এই প্রার্থী। পোস্টার না থাকা প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে আলী হোসেন বলেন, শুরুর দিকে সব পোস্টার লাগানোর কারণে অনেক পোস্টার নষ্ট হয়ে গেছে। প্রচার চালাতে গিয়ে বাধা পাওয়ার অভিযোগও করেন তিনি।

প্রচার চালানোর সময় নৌকার প্রার্থীর সমর্থকদের বাধার মুখে পড়েছিলেন এ আসনের সুপ্রিম পার্টির প্রার্থী সেলিম আহমেদ। তিনি বলেন, হেঁটে মোটামুটি প্রচার চালানো হচ্ছে। ভোটের কয়েক দিন আগে পোস্টার, ব্যানার লাগানো হবে। 

নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তোলার দাবি করেছেন ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের (চেয়ার) হাবিবুর রহমান। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু ভোট হবে, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে উৎসাহিত করে প্রচার চালানো হচ্ছে। 

তবে মাঠের চিত্র ভিন্ন। নৌকার প্রার্থী ও তাঁর লোকজনের বাইরে অন্যদের নিবাচনী কার্যক্রম নেই বললেই চলে। শহরের পঞ্চবটী এলাকা এ আসনের গুরুত্বপূর্ণ একটি এলাকা। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়াও অন্য কোনো প্রার্থীর পোস্টার চোখে পড়েনি। ওই এলাকায় চা–বিক্রেতা আলতাফ হোসেন এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘নির্বাচনের তো ভাও পাইতাছি না। প্রার্থীই তো নাই। কারও মুখ থেকে ভোট নিয়ে তো কিছু শুনি না। ভোট নিয়া মানুষের আগ্রহ নাই।’

ওই চায়ের দোকানেই কথা হলো আসনটির কয়েকজন ভোটারের সঙ্গে। তাঁদের একজন বলেন, ‘বড় দল (বিএনপি) তো আহে নাই। ভোট দিতে গিয়া কী হইব? এমপি সাহেবের (শামীম ওসমান) লগে যারা প্রার্থী হইছে, তারাও টিকবে না।’

তবে ভোটের মাঠ ফাঁকা নয় বলে দাবি করে শামীম ওসমান জানান, অনেক প্রার্থী রয়েছেন, তাঁরা প্রচার চালাচ্ছেন। প্রচার চালানোর সময় তাঁদের কয়েকজনের সঙ্গে তাঁর দেখাও হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনটা অদৃশ্য শক্তি বিএনপি-জামায়াত স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে। যে অদৃশ্য শক্তি চাচ্ছে মানুষ যাতে ভোট দিতে কেন্দ্রে না আসে, ভয়ভীতি দেখানো। আর আমাদের কাজ হচ্ছে ভোটারদের ভয়মুক্ত করে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসা। এখানে যে পাস করে করুক। আমি ভোটারদের কাছে ভোট চাইছি না। তারা ভোট দিতে কেন্দ্রে আসুক, যাকে খুশি তাকে ভোট প্রদান করুক।’