Thank you for trying Sticky AMP!!

পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এই কক্ষে চার বছর ধরে তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে আধুনিক এক্স-রে যন্ত্রটি

চিকিৎসক–সংকট প্রকট, দুর্ভোগ

উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীর একটি অগ্রসরমাণ উপজেলা দুমকি। জেলার একমাত্র সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এই উপজেলাতেই অবস্থিত। অথচ স্বাস্থ্যসেবায় পিছিয়ে রয়েছে উপজেলাটি। কম খরচের চিকিৎসার জন্য উপজেলার প্রধান হাসপাতাল দুমকি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে এসে রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না। হাসপাতালটিতে চিকিৎসক-সংকট প্রকট। এখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার যন্ত্র থাকলেও রোগীদের বাইরের বেসরকারি রোগনির্ণয় কেন্দ্র থেকেই সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হচ্ছে। এতে তাঁদের অর্থ খরচ হচ্ছে অনেক বেশি।

ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ ময়তন বিবি (৬৫) বেশ কিছুদিন ধরে পেটের ব্যথায় ভুগছেন। তাঁর শরীর ফুলে যাচ্ছে। এ ছাড়া মাথা ঘুরে একবার পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। কম খরচের চিকিৎসার জন্য স্বজনেরা তাঁকে দুমকি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। চিকিৎসকেরা এক্স-রেসহ রক্তের নানা পরীক্ষা দেন। এসব পরীক্ষা বাইরে থেকে করাতে তাঁর ১ হাজার ৭০০ টাকা খরচ হয়েছে। হাসপাতালে ওষুধ না পাওয়ায় বাইরে থেকে ওষুধও কিনতে হয়েছে তাঁকে।

এখানে চিকিৎসক-সংকট আছে। এই অবস্থায় উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র থেকে চিকিৎসক এনে সেবা দেওয়া হচ্ছে। আমরা আধুনিক এক্স-রে মেশিন পেয়েছি। তবে রেডিওগ্রাফি টেকনিশিয়ান না থাকায় এক্স-রে চালু করা যাচ্ছে না। হাসপাতালে ওষুধ আছে। তবে যেটি নেই, সেটি বাইরে থেকে কেনার জন্য বলা হয়ে থাকে।
মীর শহিদুল হাসান, উপজেলা স্বাস্থ্য ওপরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, দুমকি

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, ২০০৪ সালের ১৬ জুন দুমকি উপজেলা শহরের তৎকালীন পাতাবুনিয়া সড়কের পোস্ট অফিসসংলগ্ন এলাকায় প্রায় তিন একর জমির ওপর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রথম থেকেই এটি ৩১ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হিসেবে চালু রয়েছে। এই হাসপাতালে চিকিৎসকের পদ ৯টি। কিন্তু এখানে কর্মরত আছেন দুজন। একজন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। অপরজন ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও)। শূন্য রয়েছে শল্যবিশেষজ্ঞ, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞ, দুজন মেডিকেল অফিসার ও দন্ত চিকিৎসকের পদ। আধুনিক এক্স-রে যন্ত্র থাকলেও স্থাপনের পর প্রায় চার বছর ধরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি কক্ষে তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় বেশি। আরএমওর একার পক্ষে হাসপাতালের বহির্বিভাগ, অন্তর্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এই অবস্থায় রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য উপজেলার আঙ্গারিয়া, লেবুখালী ও মুরাদিয়া—এই তিন ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের প্রেষণে এনে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।

এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চালু হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত কোনো বড় ধরনের অস্ত্রোপচার করা হয়নি। তবে গত দুই মাসে (জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি) ২৮টি স্বাভাবিক প্রসব হয়েছে। এ ছাড়া গত দুই মাসে বহির্বিভাগে ৭ হাজার ২২ জন, জরুরি বিভাগে ৬৮৮ জন রোগী চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন এবং অন্তর্বিভাগে ৩২৭ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেখা যায়, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্স-রের কক্ষটি দরজায় বাইরে থেকে তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। কক্ষটি খুলে দেওয়ার পর দেখা যায়, এক্স-রে যন্ত্র স্থাপন করা অবস্থায় রয়েছে। কক্ষটি বন্ধ থাকায় পুরো কক্ষটি স্যাঁতসেঁতে হয়ে পড়েছে। কক্ষটির ছাদে পলেস্তারা খসে পড়ছে।

হাসপাতালের তথ্যে জানা যায়, ২০২০ সালের ২৭ জানুয়ারি হাসপাতালে এক্স-রে যন্ত্রটি হস্তান্তর করা হয়। স্থাপনের পর থেকে এক্স-রে যন্ত্রটি চালু হয়নি। হাসপাতালে আসা রোগীদের বাড়তি টাকা খরচ করে বাইরে থেকে এক্স-রে করাতে হচ্ছে।

হাসপাতালের ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ১১ বছরের শিশু ইয়াসিনকে নিয়ে শয্যায় বসে আছেন তার নানি বকুল লতা (৬১)। বাড়ি তাঁদের দুমকিতে। ষাটোর্ধ্ব এই নারী জানান, সকাল থেকে বমি ও মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছে নাতি ইয়াসিন। একপর্যায়ে দুর্বল হয়ে পড়লে এই হাসপাতালে এনেছেন। স্যালাইন পেলেও ওষুধ বাইর থেকে কিনতে হয়েছে তাঁকে।

দুই দিন ধরে পেটব্যথা নিয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন উপজেলার শ্রীরামপুর এলাকার মো. আনোয়ার (৪০)। এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তিনি। তাঁকেও বাইরে থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হয়েছে এবং বেশির ভাগ ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে।

মামুনুর রহমান নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই হাসপাতালের কাছেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। উন্নত এই উপজেলার সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা অনেক পিছিয়ে রয়েছে। চিকিৎসক-সংকটের পাশাপাশি অন্যান্য সহায়তা এখান থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। সবকিছুই বাইরে থেকে করিয়ে আনতে হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দুমকি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মীর শহিদুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, এখানে চিকিৎসক-সংকট আছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। এই অবস্থায় উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র থেকে চিকিৎসক এনে সেবা দেওয়া হচ্ছে। রোগীদের বাইরে থেকে রক্ত পরীক্ষাসহ এক্স-রে করার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমরা আধুনিক এক্স-রে মেশিন পেয়েছি। পর্যাপ্ত ফিল্ম আছে। তবে রেডিওগ্রাফি টেকনিশিয়ান না থাকায় এক্স-রে চালু করা যাচ্ছে না।’ রক্ত পরীক্ষার বিষয়ে বলেন, ‘আমাদের এখানে ডিজিটাল মেশিন না থাকার কারণে সব কটি রক্তের পরীক্ষা এখানে করানো সম্ভব হয় না। হাসপাতালে ওষুধ আছে। তবে যেটি নেই, সেটি বাইরে থেকে কেনার জন্য বলা হয়ে থাকে।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন এস এম কবির হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসলেই আমাদের চিকিৎসক-সংকট রয়েছে। চিকিৎসকের জন্য বারবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি পাঠানো হচ্ছে।’ চিকিৎসকসহ অন্য শূন্য পদগুলো পূরণে উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।