Thank you for trying Sticky AMP!!

খাঁ খাঁ করছে পেঁয়াজের আড়ত

তিন দিনের ব্যবধানে পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম প্রতি মণে ১ হাজার ৬০০ টাকা বেড়েছে।

হাটবারেও পেঁয়াজের সরবরাহ নেই। গত মঙ্গলবার পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার করমজা চতুরহাটে

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলায় পেঁয়াজের মৌসুম শেষ। কৃষকেরা সপ্তাহ দুয়েক হলো আগাম পেঁয়াজের আবাদ শুরু করেছেন। এ সময় কৃষকের ঘরে দেশি পেঁয়াজের মজুত কম। তাঁরা পেঁয়াজ বিক্রি করতে হাটে যাচ্ছেন না। এতে দুই-তিন দিন ধরে উপজেলার হাটগুলোয় দেশি পেঁয়াজ তেমন উঠছে না।

এদিকে তিন দিনের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম প্রতি মণে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা বেড়েছে। গত শনিবার উপজেলার করমজা চতুরহাটে প্রতি মণ পেঁয়াজ ৩ হাজার ৬০০ থেকে ৩ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। পরদিন রোববার প্রতি মণের দাম ৪ হাজার ৮০০ টাকা হয়। গত মঙ্গলবার এই হাটে প্রতি মণ পেঁয়াজ ৫ হাজার থেকে ৫ হাজার ৪০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। হাটে পেঁয়াজের সরবরাহ ছিল একেবারেই কম।

বিভিন্ন হাটের পেঁয়াজের ব্যাপারীরা জানান, ৮-১০ দিন আগেও হাটে প্রচুর দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ ছিল। ওই সময় হাটে প্রতি মণ পেঁয়াজ ৩ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এর পর থেকেই হাটে পেঁয়াজ আসা কমতে থাকে। সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম। ভারতের বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ার খবরে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় বলে ব্যাপারীরা জানান। ব্যাপারীদের ভাষ্য, কৃষকেরা এখন ইন্টারনেটে অনেক খবর রাখেন। ভারতের বাজারে দাম বাড়লে দেশের বাজারেও দাম বাড়বে, এমন আশায় কৃষকেরা বাজারে পেঁয়াজ আনা প্রায় বন্ধ করে দেন।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সাঁথিয়া দেশের অন্যতম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী উপজেলা। সদ্য বিদায়ী মৌসুমে এ উপজেলায় ১৬ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়ে ১ লাখ ৮৮ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। সেই পেঁয়াজের ১২ হাজার টন এ উপজেলার (৩১ অক্টোবর পর্যন্ত) কৃষকের ঘরে মজুত রয়েছে। এই পেঁয়াজের তিন হাজার টন আগাম বা মূলকাটা পদ্ধতির আবাদে ব্যবহার করা হবে; অর্থাৎ খাওয়ার উপযোগী পেঁয়াজ আছে ৯ হাজার টন। ইতিমধ্যে উপজেলায় আগাম পেঁয়াজের আবাদ শুরু হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের শেষ বা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

গত মঙ্গলবার উপজেলার করমজা চতুরহাট ও বোয়ালমারী হাটে গিয়ে দেখা যায়, পেঁয়াজের সরবরাহ নেই বললেই চলে। একদিকে অবরোধ ও অন্যদিকে হাটে পেঁয়াজ না ওঠায় পেঁয়াজের আড়তগুলোতে নেই হাঁকডাক। আড়তে কর্মরত ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের অলস সময় কাটাতে দেখা যায়।

করমজা চতুরহাটে মঙ্গলবার ছিল হাটবার। ব্যাপারীদের ভাষ্য, এর আগে অফ সিজনে হোক আর হরতাল-অবরোধে, হাটবারে কমপক্ষে ১০ ট্রাক পেঁয়াজ (প্রতি ট্রাকে ১৫ টন) উঠতই। কিন্তু এই হাটে সব মিলিয়ে আধা ট্রাক পেঁয়াজও ওঠেনি। ১০-১২টি আড়তের বেশির ভাগেই একেবারেই পেঁয়াজ ঢোকেনি।

হাটে পেঁয়াজ কিনতে আসা উপজেলার করমজা গ্রামের পেঁয়াজের ব্যাপারী মোবারক হোসেন জানান, গত শনিবারের হাটেও ১৫ বস্তা (প্রতি বস্তায় দুই মণের কাছাকাছি) পেঁয়াজ কিনে ঢাকায় পাঠিয়েছেন। মঙ্গলবার কোনো পেঁয়াজই কিনতে পারেননি।

হাটের শ্রমিক খোকন মিয়া ও অন্তর হোসেন জানান, হাটের দিনে ৭০০-৮০০ টাকা রোজগার করেন তাঁরা। কিন্তু হাটে পেঁয়াজ না আসায় এক থেকে দেড় শ টাকার মতো রোজগার হয়েছে। এই টাকায় কীভাবে সংসারের কেনাকাটা করবেন, তা নিয়ে ভাবনায় পড়েছেন তাঁরা।

সততা পেঁয়াজের আড়তের আড়তদার মিলন হোসেন জানান, কৃষকেরা হাটে পেঁয়াজ একেবারেই অল্প এনেছেন। এতে তাঁর আড়তে কোনো বেচাকেনাই হয়নি। তাঁর আড়ত ছিল পেঁয়াজশূন্য।

 সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী বলেন, কৃষকের হাতে খুব সামান্য পেঁয়াজ আছে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের এ উপজেলার আগাম জাতের নতুন পেঁয়াজ বাজারে উঠবে বলে আশা করা যাচ্ছে।