Thank you for trying Sticky AMP!!

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সুহিলপুর গরুবাজারের সরকারি জমিতে দোকান নির্মাণ করা হচ্ছে

ইজারা ছাড়াই সরকারি জমিতে দোকান নির্মাণ 

বাজারের উত্তর-পূর্বদিকে একটি পুকুর রয়েছে। পুকুর ঘেঁষে সেখানে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সাতটি দোকান নির্মাণ করছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সদর উপজেলার সুহিলপুর গরুর বাজারের সরকারি জমি ইজারা না নিয়ে দোকান নির্মাণ করে তা মোটা অঙ্কের টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এতে বাজার সংকুচিত হয়ে পড়েছে। স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন, চার জনপ্রতিনিধির আত্মীয়স্বজন ও ঘনিষ্ঠজনেরা এর সঙ্গে জড়িত। প্রায় দেড় মাস ধরে দোকান নির্মাণের এ কাজ চললেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, গরু বাজারের জায়গা কাউকে ইজারা দেওয়া হয়নি। দোকান নির্মাণকাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে এলাকাবাসী বলেন, কাজ এখনো চলছে। এ ঘটনায় গত ২২ জানুয়ারি সুহিলপুর গ্রামের আরিফুল হক চৌধুরী, আবদুল ছোবান, মো. কামাল ও শামিম জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। 

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের পশ্চিমপাশে সুহিলপুর গরুবাজার। বাজারের উত্তর-পূর্বদিকে একটি পুকুর রয়েছে। পুকুর ঘেঁষে সেখানে স্থানীয় প্রভাবশালীরা স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করছেন। সেখানে স্থাপনা নির্মাণের কাজ চলছে, সেখানকার জায়গাটি গরুর বাজারের অংশ। বাজারে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা গরু সেখানে বাঁশে বেঁধে রাখা হয়। 

নাম প্রকাশ না কারার শর্তে এক ব্যবসায়ী বলেন, সুহিলপুর গরুর বাজারে নির্মাণ করা প্রতিটি দোকানের জন্য চেয়ারম্যানকে ১২ লাখ টাকা করে দিয়েছেন তাঁরা। চেয়ারম্যানের কাছের লোকেরাই এসব দোকানের কাজ করছেন। 

জেলা প্রশাসনের কাছে দেওয়া অভিযোগে বলা হয়েছে, গরুবাজারটি প্রায় ১২৫ বছর পুরোনো। সপ্তাহের প্রতি বুধবার বসে গরুর বাজার। সদর উপজেলার সুহিলপুর ইউনিয়নের সুহিলপুর গরুর বাজারের উত্তর-পূর্বদিকের জায়গা দখল করে এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। যাঁরা দোকান নির্মাণ করছেন, তাঁরা কেউই বাজারের ব্যবসায়ী নন। সুহিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রশিদের নেতৃত্বে দীর্ঘ দেড় মাসের বেশি সময় ধরে এসব দোকান নির্মাণ করা হচ্ছে।

অভিযোগ সূত্রে আরও জানা গেছে, ইউপি চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত মোবারক হোসেন ও একটি সরকারি দপ্তরের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী শামীম রহমান, সুহিলপুর ইউনয়ন পরিষদের সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য নীপা দত্তের স্বামী মিন্টু রঞ্জন ও সংরক্ষিত আসনের আরেক মহিলা সদস্য সুমি বেগমের স্বামী জাকির হোসেন, ইউপি সদস্য মেজবাউল হকের ছেলে মো. রকি, স্থানীয় বাবুল মিয়া, কাসেম ও শফিকুল ইসলাম সুহিলপুর গরু বাজারের উত্তর দিকে সাতটি দোকান নির্মাণ করছেন। 

মোবারক হোসেন বলেন, ‘গরুর বাজারের উত্তর দিকের জায়গা পাঁচ-সাতজন মিলে ইজারা পেয়েছে। সেখানে সাতটি দোকান হবে। একটি আমার। বাকি দোকানগুলোর একেকজনের নামে হবে। তবে এখনো ভাগাভাগি হয়নি।’ দোকানের বিনিময়ে কত টাকা দিতে হয়েছে, সে বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সেটা আমি জানি না। তবে অফিস খরচ তো কিছু লাগবেই। এখনো ঠিক হয়নি, কে কত দেবে।’

অভিযোগের বিষয়ে সুহিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রশিদ ভূঁইয়া বলেন, ‘আমার নামে ইজারা আছে এমন প্রমাণ বা কাগজপত্র কেউ দেখাতে পারবে না। বাজারের ক্ষতিগ্রস্তসহ অন্য ব্যবসায়ীদের গরুর বাজারের উত্তর দিকের জায়গা দেওয়া হয়েছে। এসবের সঙ্গে আমি জড়িত নই।’

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সেলিম শেখ প্রথম আলোকে বলেন, গরুর বাজারের জায়গা কাউকে ইজারা দেওয়া হয়নি। তবে ওই জায়গা ইজারা নেওয়ার জন্য ১০ জন আবেদন করেছে। সরকারি জমিতে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের অভিযোগ পেয়ে কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। কেউ যদি সরকারি জায়গায় স্থাপনা নির্মাণের কাজ অব্যাহত রাখেন, তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।