Thank you for trying Sticky AMP!!

কফিগাছে পাকা ফল। গত মঙ্গলবার মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আকবরপুরে

টিলাজুড়ে কফি, ফলের গাছ

স্থানীয় বাসিন্দাদের নতুন ফলের সঙ্গে পরিচিত করে তুলতে অপরিচিত ফল-ফসল চাষের দিকেই তাঁর টান।

বাইরে থেকে বোঝার সুযোগ নেই সীমানাপ্রাচীরের ভেতরে টিলাজুড়ে কত জাতের গাছ। টিলার চারপাশে ছোট-বড় এসব গাছের কিছু চেনা, অনেকটাই অচেনা। স্থানীয়ভাবে নতুন, ব্যতিক্রমী এ রকম ফলগাছের সংখ্যাই অনেক। রামবুটান, ড্রাগন, আলুবোখারা, রঙ্গনা, অ্যাভোকাডো, আইসক্রিম—কত নামের গাছ বেড়ে উঠছে, দাঁড়িয়ে আছে। এসবের সঙ্গে পরিচিত আম-কাঁঠাল, লিচু-আনারস এসব তো আছেই, আছে কফিগাছের সারি।

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার গিয়াসনগর ইউনিয়নের আকবরপুরে এ রকম ব্যতিক্রমী একটি ফলের বাগান গড়ে তুলেছেন আবদুল মান্নান। স্থানীয় বাসিন্দাদের নতুন ফলের সঙ্গে পরিচিত করতে অপরিচিত ফল-ফসল চাষের দিকেই তাঁর টান। তাঁর স্বপ্ন একদিন এই ফলের গাছগুলো তাঁকে স্বস্তি দেবে, শান্তি দেবে।

গত মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আকবরপুরে ‘ট্রফিকানা হিল রিসোর্ট’ নামের ফলের বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, টিলাজুড়ে পরিচিত আম-কাঁঠাল, লিচু-আনারস এসব গাছতো আছেই। অপরিচিত অনেক গাছ। আবদুল মান্নান সেসব গাছের জাতপাত, পরিচয় চিনিয়ে দিতে থাকেন।

এর মধ্যে টিলার উত্তর পাশসহ অনেক জায়গায় সারিবদ্ধ ও বিচ্ছিন্নভাবে দাঁড়িয়ে আছে ছোট-বড় কফির গাছ। কোনো কোনো গাছে সবুজ পাতার ফাঁকে ফুল এসেছে। কিছু গাছে কফি ফল পেকে লাল হয়ে ঝুলছে। কিছু ফল তিনি তাৎক্ষণিক পেড়ে নেন। টিলার দক্ষিণ দিকে রামবুটান ফলের কিছু গাছ। অন্য পাশেও রামবুটান গাছ আছে। রয়েছে অনেক জাতের ছোট-বড় আমগাছ। বিভিন্ন জাতের লিচু ও পেয়ারাগাছও রয়েছে। টিলার ঢাল বেয়ে নেমেছে নতুন-পুরোনো আনারসের গাছ। সারি সারি ড্রাগনের গাছ রোদে ঝকমক করছে। চেনা–অচেনা রকমারি ফলের কোনোটি এরই মধ্যে ফল দিয়েছে। অন্য গাছে এই বর্ষাতেই নতুন ফল আসবে। এক-দুই বছরের মধ্যে কমবেশি সব গাছেই দেখা মিলবে ফলের।

মান্নান জানান, তাঁর বাড়ি সদর উপজেলার দশকাউনিতে। এই টিলা তাঁর যুক্তরাজ্যপ্রবাসী মামা সৈয়দ এরশাদ আলীর। মামার কাছ থেকে জায়গা পাওয়ার পর ২০১৯ সাল থেকে তিনি ফলের চারা রোপণ শুরু করেন। দুটি টিলা মিলে জায়গা ৫ একর ৪৪ শতাংশ। প্রশিক্ষণে কফির নাম শুনেছিলেন, তখনই কফি চাষে আগ্রহ তৈরি হয়েছিল তাঁর। আকবরপুর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র থেকে ১০ টাকা দরে ৫০০ চারা এনে রোপণ করেন। পরে সরকারিভাবে আরও ৩০০ চারা বিনা মূল্যে তাঁকে দেওয়া হয়। এর মধে৵ প্রায় ১০০ চারা মারা গেছে। এখন ৭০০ গাছ আছে। অ্যারাবিকা ও রোবাস্টা জাতের কফিগাছগুলো তরতাজা শরীর নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এবারই প্রথম কফিগাছ থেকে ফল পেড়েছেন মান্নান।

এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ কেজি ফল তুলেছেন। তবে স্থানীয়ভাবে কফি প্রক্রিয়াজাত করার সুযোগ নেই। কৃষি বিভাগের কাছে একটি প্রক্রিয়াজাত যন্ত্র চেয়েছেন তিনি। যন্ত্র পেলে তিনি কফির গাছ আরও বাড়াবেন। ২০২০ সালে লাল ও হলুদ রঙের ড্রাগন লাগিয়েছেন। ড্রাগনের ১ হাজার ৪০০ গাছ আছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৭০ হাজার টাকার ড্রাগন বিক্রি করেছেন তিনি। রামবুটানের গাছ আছে ১৬টি। গত মৌসুমে একটি গাছ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে সাড়ে ৩ হাজার টাকার রামবুটান বিক্রি করেছেন। আনারস বিক্রি করেছেন প্রায় লাখ টাকার। কাঁঠাল বিক্রি করেছেন প্রায় ৩০ হাজার টাকার। আলুবোখারা আছে ৮টি, রঙ্গনা আছে ২৮টি, লিচু ৭০টি, আইসক্রিম ৩টি। ব্যতিক্রমী ও নতুনসহ ১০৬ জাতের ফলের গাছ আছে তাঁর বাগানে।

মান্নান জানান, এ পর্যন্ত তাঁর বাগানে ফলের গাছ লাগানোসহ আনুষঙ্গিক খরচ হয়েছে প্রায় চার লাখ টাকা। আট হাজার টাকা মাসিক বেতনের দুজন নিয়মিত শ্রমিক আছেন। এ ছাড়া বছরে সার ও কীটনাশক ইত্যাদিতে আরও ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। তাঁর বাগানে বেড়ে ওঠা ফল গাছের মধ্যে আছে রেড থাই, পিঙ্ক, মালয়েশিয়ান-কোরিয়ানসহ দেশি কাঁঠাল; বোম্বেসহ তিন জাতের লিচু; আলফানসো, আমেরিকান ক্যান, আপেল, ব্যানানা, ব্রুনাই কিং, ব্ল্যাকস্টোন, চায়না ড্রপ, চেং মাই, মিয়াজাকি (সূর্য ডিম), গুড়পতি, গোপালভোগ,  কিং অব চাকাপাত, মল্লিকা, রেড আইভরি, কাটিমন, পোনাই, কিউজাই, নাগ, বোম্বে, আমলক্ষ্মী, পাকিস্তানিসহ দেশি জাতের স্থানীয় আম; থাই আমড়া, অ্যাপ্রিকট, অ্যাভোকাডো, বলসুন্দরী (বরই), গোলাপজাম, বিলম্বি, ব্রেডফুড, করোসলসহ ওই ১০৬ জাতের ফলের গাছ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত উপপরিচালক নীলুফার ইয়াসমিন মোনালিসা সুইটি গতকাল বুধবার  প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিদেশি অনেক ফল আছে তাঁর (মান্নানের) বাগানে। মৌলভীবাজারে এ রকম অনেক ফল নেই। তিনি খুবই উদ্যোগী ও কর্মঠ কৃষক। নতুন ফল-ফসল, প্রযুক্তিতে আগ্রহী। কৃষি বিভাগ থেকে আমরা তাঁকে সব ধরনের পরামর্শ দিচ্ছি।’