Thank you for trying Sticky AMP!!

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে বন্যার পর অসহায়দের ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন চৌধুরী জান্নাত। অসহায় এক পরিবারের সঙ্গে চৌধুরী জান্নাত। সম্প্রতি তোলা

অসহায়দের পাশে জান্নাত

গত জুনের বন্যায়ও তিনি এমন তৎপরতা চালিয়েছেন। সিলেটে বন্যা–পরবর্তী সময়ে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় পরিবারের পুনর্বাসনেও কাজ করছেন।

মেনুতে ভাতের সঙ্গে থাকে মাছ, মাংস, ডিম। কখনো থাকে পোলাও, বিরিয়ানি, খিচুড়ি। নিজেই রান্না করেন। পরে সেসব নিয়ে ছোটেন ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে। পরম যত্নে তাঁদের হাতে তুলে দেন খাবার। এভাবে দিনের পর দিন নীরবে–নিভৃতে অসহায় মানুষকে খাওয়ানোর কাজ করছেন চৌধুরী জান্নাত রাখী (৩২)।

সিলেটে গত জুন মাসের ভয়াবহ বন্যায়ও তিনি এমন তৎপরতা চালিয়েছেন। সিলেটে বন্যা–পরবর্তী সময়ে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় পরিবারের পুনর্বাসনেও কাজ করছেন।

চৌধুরী জান্নাত জানান, অসহায় ও গরিব মানুষকে খাওয়াতে তাঁর খুব বেশি আনন্দ হয়। ছোটবেলা তাঁর বাবাকে এমনটা করতে দেখেছেন। বাবার মতো তিনিও এখন তা করছেন। অসহায় মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণের পাশাপাশি সাত বছর ধরে তিনি নিয়মিত মৌসুমি ফল, পোশাক, ওষুধ ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করছেন। বিশেষত বস্তি এলাকায় তাঁর কার্যক্রম বেশি হয়ে থাকে। এ ছাড়া শিক্ষা উপকরণ ও শিক্ষাবৃত্তিও প্রদান করেন। একই সঙ্গে মাদকবিরোধী সচেতনতা তৈরিতেও তিনি কাজ করে চলেছেন।

জুনের মাঝামাঝি সিলেট অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হলে চৌধুরী জান্নাত ঝুঁকি নিয়ে সিলেট নগর থেকে শুরু করে সিলেট ও সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে রান্না করা খাবার বন্যাকবলিত ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ শুরু করেন। এ সময় খাদ্যসামগ্রী ও টাকাও দেন অনেককে। তাঁর সমাজসেবামূলক এসব কাজে স্বামী, ভাই, বোন, পরিবারের সদস্য, স্বজন, স্বামীর সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীরা নগদ টাকা দিয়ে সহায়তা করেন। এ ছাড়া স্বামীর দেওয়া হাতখরচের পুরো টাকাও তিনি এ খাতেই ব্যয় করেন।

চৌধুরী জান্নাত জানান, গত বন্যায় ১৫ লাখ টাকার খাদ্যসামগ্রী, হাঁড়িপাতিল, পোশাকসহ ত্রাণসামগ্রী তিনি সিলেট অঞ্চলে বিতরণ করেছেন। এ ছাড়া বন্যা–পরবর্তী পুনর্বাসনেও তিনি কাজ করছেন। এ পর্যন্ত সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পিঁপড়াখাই গ্রামে দুটি ও রনিখাই গ্রামে একটি ঘর তিনি নতুনভাবে নির্মাণ করে দিয়েছেন। এসব ঘর বন্যার পানিতে বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিল। গত কোরবানির ঈদে কোম্পানীগঞ্জের রনিখাই গ্রামে তিনি একটা গরু কোরবানি দিয়ে এসব মাংস গ্রামের অসহায় মানুষের মধ্যে বিতরণ করেছেন। মাংসের সঙ্গে তেল, আলু, পেঁয়াজ ও মসলাও দিয়েছেন। এ খাতে তাঁর ব্যয় হয়েছে দেড় লাখ টাকা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে চৌধুরী জান্নাতের বাড়ি। তাঁর স্বামী শামছ-ই-আরেফিন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী। স্বামীর চাকরির সুবাদে এখন সিলেটে থাকেন। এর আগে স্বামীর চাকরির সুবাদে হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে ছিলেন। শুরুতে জান্নাত নিজের বাসায় প্রতি মাসে রান্নাবান্না করে কয়েক শ ক্ষুধার্ত শিশুকে পর্যায়ক্রমে ডেকে এনে খাওয়াতেন। তিন বছর আগে তাঁর স্বামী সিলেটে বদলি হয়ে এলে তিনি রান্না করা খাবার নিয়ে শহরের বস্তিতে যান এবং অসহায় মানুষের মধ্যে বিতরণ করা শুরু করেন। প্রতি মাসে সমাজসেবামূলক এ কাজে তাঁর গড়ে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়।

চৌধুরী জান্নাত জানান, যেহেতু পরিবারের সদস্যদের অনুদানেই মূলত তাঁর সমাজসেবামূলক কাজ চলে, তাই তিনি তাঁর বাবার নামে করা ‘নূর ফাউন্ডেশন’ থেকে এখন এ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এ ছাড়া তরুণদের নিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘মাদক নির্মূল শক্তি’ নামের একটি সংগঠন। এর মাধ্যমে তিনি মাদকবিরোধী সেমিনার ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে থাকেন। তাঁর সমাজসেবামূলক কাজে স্বামী ও তিন সন্তান নিরন্তর সহায়তা করেন বলেও তিনি জানিয়েছেন।