Thank you for trying Sticky AMP!!

১২ বছরে বিদ্যালয়টি বদলে দিলেন শিক্ষক

আগে উপস্থিতির হার ছিল ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ। এখন উপস্থিতি ৯৭ শতাংশ পর্যন্ত। ঝরে পড়ার হারও শূন্য।

দিলরুবা খাতুন

‘আমার মেয়ে ছুটি চায় না। রোজই যাইতে চায়। কখনো বলতে হয় না যে ইশকুলে যাও। হেডমাস্টার ইশকুলের পরিবেশটা সুন্দর কইরে তুলেছে।’ সোনিয়া খাতুনের মেয়ে ফারিহা তাসনিম রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার ধাদাশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। প্রধান শিক্ষক দিলরুবা খাতুনের নেতৃত্বে গত ১২ বছরে আমূল পরিবর্তন এসেছে বিদ্যালয়ে। উল্লেখযোগ্য হারে ঝরে পড়া কমানোয় তাঁর বিদ্যালয়টি জেলায় এবার শ্রেষ্ঠ হয়েছে।

পুঠিয়া উপজেলা সদর থেকে ১৪ কিলোমিটার পশ্চিমে ধাদাশ গ্রামে অবস্থিত এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩০৫। বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে প্রধান শিক্ষক দিলরুবা খাতুন এই বিদ্যালয়ে যোগ দেন। তখন গরমে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে বসে থাকা যেত না। এখন সেই প্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকক্ষ হয়ে উঠেছে জেলার মধ্যে সেরা। এখন দুটি কক্ষে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে ক্লাস নেওয়া হয়। বিদ্যালয়ে করা হয়েছে সততা স্টোর। প্রতিটি ক্লাসে প্রস্তুত রাখা হয় খাতা ও কলমের। যার কলম নেই, সে নির্ধারিত স্থান থেকে কলম বা খাতা নিয়ে লিখে আবার রেখে যায়।

প্রধান শিক্ষক দিলরুবা খাতুন বলেন, আগে একেকটি কক্ষে ৮০-৯০ জন শিক্ষার্থী গাদাগাদি করে বসত। ঘেমেনেয়ে একাকার হয়ে যেত তারা। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য তিনি শিক্ষার্থীদের মায়েদের নিয়ে সমাবেশ ডাকেন। বাচ্চাদের কষ্টের দৃশ্য দেখান ও বোঝান। এরপর ফ্যান ও নলকূপ কেনার জন্য মায়েরা খুশি হয়ে সামর্থ্য অনুযায়ী জনপ্রতি ২০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দেন। এ টাকায় বিদ্যালয়ে ১৬টি ফ্যান ও একটি নলকূপ হয়ে যায়।

দিলরুবা আরও বলেন, আগে উপস্থিতির হার ছিল ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ। এ বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী আগে ঝরে পড়ত। এখন ঝরে পড়ার হার শূন্য। উপস্থিতি ৯৭ শতাংশ পর্যন্ত। এবার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ঝরে পড়ার হার কমানোয় জেলায় বিদ্যালয়টি শ্রেষ্ঠ হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ করা ছিল তাঁর জন্য অনেক চ্যালেঞ্জের বিষয়। ঝরে পড়া রোধ ও শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ও অভিভাবকদের নিয়ে আলোচনা সভা করেন তিনি। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ছয়জন করে অভিভাবক প্রতি সপ্তাহে তাঁদের সামর্থ্য অনুযায়ী প্রত্যেক ক্লাসের শিক্ষার্থীদের জন্য উপহার নিয়ে আসবেন। হতে পারে তা বেলুন, চকলেট, বিস্কুট, খাতা বা কলম। অভিভাবকেরা সারা বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে উপহার নিয়ে বিদ্যালয়ে আসেন। এতে বিদ্যালয়টি শিক্ষার্থীদের কাছে আনন্দময় হয়ে উঠল।

তাঁর বিদ্যালয়ে আরও একটি সমস্যা ছিল। দুপুরে বাচ্চারা না খেয়ে থাকে বা খাওয়ার জন্য বাড়ি গিয়ে আর আসে না। এ জন্য তিনি মায়েদের মাধ্যমে সাধ্যমতো ‘মিড ডে মিল’–এর ব্যবস্থা করেন। এখন সব মা বাচ্চার সঙ্গে দুপুরের খাবার বেঁধে দেন। বাচ্চারা আর কেউ দুপুরে পালিয়ে বাড়ি যায় না।

প্রধান শিক্ষক দিলরুবা বলেন, ‘একটি বিদ্যালয়ের রূপকল্প প্রণয়নে একটি বাস্তবায়নযোগ্য স্বপ্নের দরকার। স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য ভেতরে আগ্রহ থাকা দরকার। আমি গ্রামের এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভালো মানুষ হয়ে উঠতে সব ধরনের সহযোগিতা করতে চাই।’

জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোফরান হালিম বলেন, প্রধান শিক্ষক দিলরুবা খাতুন বিদ্যালয়ের আমূল পরিবর্তন করে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।