Thank you for trying Sticky AMP!!

মেসভাড়া বৃদ্ধি পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা বিপাকে 

পাঁচ শতাধিক ব্যক্তিমালিকানাধীন মেস রয়েছে। এসব মেসে প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষার্থী থাকেন। 

গাইবান্ধা শহরের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় প্রয়োজনীয় আবাসনের ব্যবস্থা নেই। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে হোস্টেল থাকলেও সেগুলো বন্ধ। এর ফলে দূরের শিক্ষার্থীরা মেসের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে মেসভাড়া কয়েক গুণ বেড়েছে। এতে ভাড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।

দুই–আড়াই বছর আগে করোনাকালে গাইবান্ধা সদর থানার পুলিশের এক জরিপ থেকে জানা গেছে, গাইবান্ধা শহরে পাঁচ শতাধিক ব্যক্তিমালিকানাধীন মেস রয়েছে। এসব মেসে প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষার্থী থাকেন। বিশেষত শহরের কলেজ রোড, থানাপাড়া, পলাশপাড়া, প্রফেসর কলোনি, সাদুল্লাপুর রোড, খানকাশরীফ ও গোডাউন রোডে মেসের সংখ্যা বেশি। গাইবান্ধা সরকারি কলেজ, আহমেদ উদ্দিন শাহ শিশুনিকেতন স্কুল ও কলেজ, গাইবান্ধা সরকারি মহিলা কলেজ, গাইবান্ধা সরকারি উচ্চ বালক ও বালিকা বিদ্যালয় ঘিরে এসব মেস গড়ে উঠেছে।

শহরের বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় আবাসনের ব্যবস্থা নেই। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের হোস্টেল থাকলেও তা বন্ধ রয়েছে। গাইবান্ধা সরকারি কলেজে শিক্ষার্থী ১৪ হাজার ১১৫ জন। এখানে ছাত্রীদের ১০০ আসনের আবাসিক হোস্টেল আছে। ছাত্রদের জন্য কোনো হোস্টেল নেই। তাঁদের জন্য ১০০ আসনের পাঁচতলা আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, এখনো হস্তান্তর করা হয়নি। এ সম্পর্কে কলেজটির অধ্যক্ষ খলিলুর রহমান বলেন, বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও ঠিকাদার ভবনটি হস্তান্তর করছেন না।

গাইবান্ধা সরকারি মহিলা কলেজে শিক্ষার্থীসংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৪০০। এখানে ৭৫ আসনের ছাত্রীনিবাস ছিল। দুই বছর আগে চার লেন সড়কের কাজের সময় হোস্টেলটি ভাঙা হয়। নতুন করে হোস্টেল নির্মাণের কোনো উদ্যোগে নেই।

গাইবান্ধা সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীসংখ্যা ১ হাজার ১৯০। এখানে দ্বিতল আবাসিক ভবনে ৭৫ জন শিক্ষার্থী থাকত। জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় ২০০০ সাল থেকে আবাসিক ভবনটি বন্ধ।

গাইবান্ধা সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১ হাজার ১৮০। বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দ্বিতল আবাসিক ভবন রয়েছে। এই ভবনে ৫১ জন শিক্ষার্থী থাকত। এটি তিন বছর বন্ধ ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক সুশান্ত কুমার দেব বলেন, পরিচালনার জন্য লোকবলের অভাবে আবাসিক ভবনটি চালু করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া আহমদ উদ্দিন শাহ শিশুনিকেতন স্কুল ও কলেজে ৪ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী থাকলেও আবাসনের নেই।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার নাকাইহাট এলাকার এক ছাত্রী গাইবান্ধা সরকারি মহিলা কলেজে পড়েন। বাড়ি থেকে কলেজের দূরত্ব ২০ কিলোমিটার। তিনি শহরে মেসে থাকেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘আমরা দুই ভাই ও দুই বোন। সবাই লেখাপড়া করি। বাবা কৃষক। সংসারের খরচ মিটিয়ে সবার পড়ার খরচ দেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। আমি এক বেলা প্রাইভেট পড়িয়ে মেসের খরচ চালাই। সম্প্রতি মেসভাড়া দ্বিগুণ হয়েছে। দুই বছর আগে প্রতি সিটের মাসিক ভাড়া ছিল ৩০০-৩৫০ টাকা। এখন ভাড়া বেড়ে ৭০০-১ হাজার ২০০ টাকা হয়েছে।

সাঘাটা উপজেলার এক ছাত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘আমি গাইবান্ধা সরকারি কলেজে অনার্সে পড়ি। বাড়ি থেকে কলেজের দূরত্ব ৪৫ কিলোমিটার। মেসভাড়া দেওয়ার সামর্থ্য নেই। এক আত্মীয়ের আর্থিক সহায়তা নিয়ে মেসে থাকি। কিন্তু মেস ভাড়া বেশি হওয়ায় সমস্যায় পড়েছি।’

শহরের কলেজপাড়ার মেসমালিক গোলাম মোস্তফা জানান, বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়েছে। বেড়েছে ঘরের রক্ষণাবেক্ষণ খরচ। তাই সামান্য পরিমাণে মেসভাড়া বাড়ানো হয়েছে।

গাইবান্ধা সদর থানার ওসি মাসুদ রানা বলেন, মানবিক কারণেই মেসমালিকদের ভাড়া কমানো উচিত। একই কথা বলেন গাইবান্ধা নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, মেসগুলোতে যাঁরা থাকেন, তাঁদের বেশির ভাগ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তাঁদের মেসভাড়া মানবিক কারণেই কমানো দরকার।