Thank you for trying Sticky AMP!!

ব্যবস্থাপক টাকা নিয়ে উধাও হওয়ার খবরে অনেক গ্রাহক ব্যাংকে ভিড় করেন। আজ মঙ্গলবার চাঁদপুর শহরের পূবালী ব্যাংক নতুন বাজার শাখায়

চাঁদপুরে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক উধাও, কয়েক কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ গ্রাহকদের

চাঁদপুর শহরের পূবালী ব্যাংক নতুন বাজার শাখার ব্যবস্থাপক শ্রীকান্ত নন্দী গ্রাহকদের কয়েক কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ খবর ছড়িয়ে পড়ায় আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে ব্যাংকের ওই শাখায় গ্রাহকেরা ভিড় করেন। শ্রীকান্ত নন্দীর নিখোঁজের ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

আজ দুপুর পৌনে ১২টায় পূবালী ব্যাংকের ওই শাখায় গিয়ে দেখা যায়, ব্যবস্থাপক টাকা নিয়ে উধাও হওয়ার খবর পেয়ে অনেক গ্রাহক টাকার জন্য ব্যাংকে ভিড় করছেন। কেউ তাঁদের এফডিআর তুলতে, কেউ একাউন্টে টাকা আছে কি না, তা খোঁজ করছেন। আবার কেউ কেউ পে–অর্ডারের টাকা অন্য ব্যাংকে বা অন্য গ্রাহক পাননি বলে অভিযোগ নিয়ে ভিড় করছেন। এর মধ্যে মেঘনা পেট্রোলিয়াম, যমুনা ও পদ্মা তেল কোম্পানির একাধিক কর্মকর্তারা এসে অভিযোগ করেন, তাঁদের এক কোটি টাকার ওপর পে–অর্ডারের টাকার কোনো খবর নেই। তাঁরা ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপকের সঙ্গে বাক্‌বিতণ্ডা করছেন।

এদিকে চাঁদপুর মডেল থানায় এসে ওকে এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী কাউছার হোসেনের পক্ষে জাহিদ হাসান বলেন, তাঁদের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবস্থাপক শ্রীকান্ত নন্দীর দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। শ্রীকান্ত নন্দী এর আগে কুমিল্লার দাউদকান্দি ও হাজীগঞ্জ পূবালী ব্যাংক শাখা ব্যবস্থাপক ছিলেন। যে কারণে তাঁদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বড় ধরনের লেনদেন হওয়ায় সু-সম্পর্ক গড়ে উঠে। ঈদের আগে তাঁদের প্রতিষ্ঠানের কাজে ২ কোটি ৮৪ লাখ ৪৮ হাজার ৫৬২ টাকা চেকের মাধ্যমে উত্তোলন করে তাঁদের একাউন্টে জমা দিতে বলেন। কিন্তু শাখা ব্যবস্থাপক শ্রীকান্ত নন্দী ওই টাকা উত্তোলন করে ওকে এন্টারপ্রাইজের একাউন্টে জমা না দিয়ে টাকা নিয়ে সপরিবার উধাও হয়ে যান।

পূবালী ব্যাংক নতুন বাজার শাখার নিখোঁজ ব্যবস্থাপক শ্রীকান্ত নন্দী

পূবালী ব্যাংকের নিয়মিত গ্রাহক স্থানীয় ব্যবসায়ী আকবর হোসেন বলেন, ওই ব্যাংকের ব্যবস্থাপক শ্রীকান্ত এই শাখায় যোগদান করার পর থেকেই তাঁর সঙ্গে পরিচয়। ঈদের আগে ব্যবস্থাপক টাকা ধার চাইলে তিনি ১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ধার দেন। কিন্তু সে টাকা ফেরত না দিয়ে ব্যবস্থাপক উধাও হয়ে যান। এই ঘটনায় তিনি ১৩ এপ্রিল চাঁদপুর সদর মডেল থানায় একটি জিডি করেছেন।

কচুয়া উপজেলার আশ্রাফুর এলাকার দলিল লেখক মো. মারুফ ব্যাংকের গ্রাহক। তিনি বলেন, ‘আমাকে অধিক মুনাফা দিবেন বলে ব্যবস্থাপক শ্রীকান্ত নন্দী ৭৫ লাখ টাকা ধার নেন। এখন তিনি নিখোঁজ।’

শ্রীকান্ত নন্দী নিখোঁজের পর পূবালী ব্যাংক নতুন বাজার শাখার ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পেয়েছেন মো. হুমায়ূন কবির। তিনি বলেন, শ্রীকান্ত নন্দী গত ১৪ জানুয়ারি এই শাখায় যোগদান করেন। যোগদানের তিন মাসের ভেতর এই ব্যাংকে কী কী ঘটনা ঘটেছে, তা এখনো বুঝে উঠতে পারছেন না তিনি। শ্রীকান্ত নন্দী নিখোঁজের ঘটনায় ৪ এপ্রিল চাঁদপুর সদর মডেল থানায় জিডি করেছেন। এসব ঘটনার বিষয়টি বর্তমানে ব্যাংকের আঞ্চলিক ও প্রধান কার্যালয় দেখছে।

এ ব্যাপারে পূবালী ব্যাংক কুমিল্লা রিজিওনাল অফিসের আরএম জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এখনো কোনো গ্রাহকের লিখিত অভিযোগ পাইনি। আমাদের অভ্যন্তরীণ গ্রাহকদের লেনদেনেও কোনো সমস্যা নেই। তবে ব্যবস্থাপক শ্রীকান্ত নন্দী সপরিবার নিখোঁজ রয়েছেন। আমাদের একাধিক দল বিষয়টি তদন্ত করছে।’

জানা গেছে, নিখোঁজ ব্যাংক ব্যবস্থাপক শ্রীকান্ত নন্দী (৪০) জেলার কচুয়া উপজেলার ঘাগড়া গ্রামের বাসিন্দা। তবে তিনি সপরিবার কুমিল্লায় থাকতেন। সেখান থেকে চাঁদপুরে এসে দায়িত্ব পালন করতেন তিনি।

এ বিষয়ে চাঁদপুর সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুর রাজ্জাক মীর বলেন, ব্যবস্থাপক শ্রীকান্ত নন্দীর নিখোঁজ হওয়া এবং একজন ব্যাংক গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করেছেন। তবে চাঁদপুর বা কুমিল্লায় ওই ব্যবস্থাপক বা তাঁর পরিবারকে পাওয়া যায়নি। তদন্ত শেষ হলে বাকি বিষয়ে তথ্য দেওয়া যাবে।