Thank you for trying Sticky AMP!!

খেতের গম কাটছেন একজন কৃষক। গত মঙ্গলবার বিকেলে যশোরের অভয়নগর উপজেলার বগুড়াতলা গ্রামের বিলে

গমের আবাদে ফিরছেন কৃষক

যশোরে ব্লাস্ট রোগ থেকে রেহাই পেতে ২০১৬-২০১৭ মৌসুমে গম চাষ নিরুৎসাহিত করতে মাইকিং ও প্রচারপত্র বিলি করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। বন্ধ করে দেওয়া হয় কৃষকদের মধ্যে সরকারি বীজ সরবরাহ। পরের মৌসুমে গম চাষের কোনো লক্ষ্যমাত্রাও নির্ধারণ করেনি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। ওই মৌসুমে জেলায় গমের আবাদ গিয়ে ঠেকে মাত্র ৬৮ হেক্টর জমিতে।

এর মধ্যে বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট ব্লাস্ট–প্রতিরোধী দুটি গমের জাত উদ্ভাবন করেছে। গম চাষে উৎসাহী করতে আবার কৃষকদের ব্লাস্ট–প্রতিরোধী গমের বীজ ও সার দিয়েছে কৃষি বিভাগ। তাতে যশোরে আবার গমের আবাদ বেড়েছে। চলতি ২০২৩-২০২৪ মৌসুমে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে।

কৃষকেরা বলেন, গত বছর গমের ফলন ভালো হয়েছিল। স্থানীয় বাজারে গমের দামও ভালো ছিল। এ কারণে তাঁরা এবার গম চাষে আগ্রহী হয়েছেন। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া গম চাষের জন্য ভালো ছিল। রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয়েছে। ফলনও তাঁরা ভালো পাচ্ছেন। তবে বাজারে এবার গমের দাম কিছুটা কম।

মনিরামপুর ও অভয়নগর উপজেলার কয়েকটি মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, মাঠের সব গম পেকে গেছে। অনেক খেতের গম কাটা হয়েছে। বেশির ভাগ খেতে গম কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত কৃষক। মনিরামপুর উপজেলার ভোজগাতী গ্রামের কৃষক রাসেল উদ্দীন বলেন, ‘এবার ৩ বিঘা জমিতে বারি গম ৩৩ জাতের গমের চাষ করেছি। গমে কোনো ব্লাস্ট রোগ লাগেনি। এবার আমার সব মিলিয়ে ৪৭-৪৮ মণ গম হবে। বাজারে এবার গমের দাম কিছুটা কম। এখন ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা মণ দরে গম বিক্রি হচ্ছে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৫-২০১৬ মৌসুমে জেলায় গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে। চাষ হয়েছিল ৪ হাজার ৪০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ৩৭৫ হেক্টর জমির গমখেত ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়। এরপর গমের ব্লাস্ট রোগ থেকে রেহাই পেতে গম চাষ না করার জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে এলাকায় এলাকায় মাইকিং করা হয়। কৃষক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠান, উঠান বৈঠক, অনানুষ্ঠানিক সভা ও প্রচারপত্র বিলি করে গম চাষে নিরুৎসাহিত করা হয়।

সূত্র জানায়, ২০১৮-২০১৯ মৌসুম থেকে জেলায় গমের আবাদ অল্প অল্প করে বাড়তে থাকে। ২০২০-২০২১ মৌসুমে আবাদ বেড়ে দাঁড়ায় ৭৪৫ হেক্টর জমিতে। ২০২২-২০২৩ মৌসুমে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৫৪০ হেক্টর, কিন্তু চাষ বেড়ে হয় ৬২৪ হেক্টর জমিতে। চলতি ২০২৩-২০২৪ মৌসুমে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে, কিন্তু আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে। এবার জেলার ২ হাজার কৃষককে ২০ কেজি করে বীজ এবং ১০ কেজি করে ডিএপি ও ১০ কেজি করে এমওপি সার দেওয়া হয়।

কৃষি বিভাগ থেকে বীজ ও সার পেয়ে গমের চাষ করেছেন অভয়নগর উপজেলার বগুড়াতলা গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম শেখ। তিনি বলেন, ‘আমি ১০ কাঠা জমি বর্গা নিয়ে বারি গম ৩৩ জাতের গমের চাষ করেছি। গম ভালো হয়েছে। গম কেটেছি। অন্তত আট মণ গম হবে।’

গমগবেষকেরা বলছেন, গমের ব্লাস্ট একটি ক্ষতিকর ছত্রাকজনিত রোগ। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশে এ রোগ দেখা দেয়। দেশের যশোর, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, বরিশাল ও ভোলা জেলায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ৭টি জেলার প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমির গম ব্লাস্ট রোগের আক্রমণের শিকার হয়। কৃষকেরা মূলত বারি গম ২৬ জাতটি বেশি পরিমাণে চাষ করেন। ওই জাতের গমে ব্লাস্ট ব্যাপক আকারে আক্রমণ করে। প্রধানত গমের শিষে ছত্রাকের আক্রমণ হয়।

বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের যশোর আঞ্চলিক কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. ইলিয়াছ হোসেন বলেন, ‘২০১৬ সালে প্রথম গমের ব্লাস্ট রোগটি আমাদের দেশে দেখা দেয়। গমে এই রোগ দেখা দেওয়ার পর গবেষণা শুরু হয়। এরপর বারি গম ৩৩ নামে নতুন ব্লাস্ট রোগপ্রতিরোধী একটি জাত উদ্ভাবন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ব্লাস্ট–প্রতিরোধী বিডব্লিউএমআরআই গম-৩ জাতটি উদ্ভাবন করা হয়েছে। এ বছর যশোরে বেশির ভাগ জমিতে বারি গম ৩৩ জাতের আবাদ হয়েছে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ের উপপরিচালক সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, গম চাষে খরচ কম। ধানের চেয়ে গম চাষে লাভ বেশি। যশোর জেলায় আগে প্রচুর গমের চাষ হতো। ২০১৬ সালে গমখেতে ব্লাস্ট রোগ দেখা দেওয়ায় পরের মৌসুমের শুরুতে গম চাষ না করতে নানাভাবে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়। কৃষকেরা গম চাষের পরিবর্তে অন্য ফসলের আবাদ শুরু করেন। এর ফলে গমের আবাদ একেবারেই কমে যায়। ব্লাস্ট–প্রতিরোধী বীজ উদ্ভাবনের পর জেলায় এবার গমের চাষ বেড়েছে। এবার আবহাওয়া গম চাষের জন্য ভালো ছিল। প্রতি হেক্টরে ৩ দশমিক ৬ মেট্রিক টন পর্যন্ত গম পাচ্ছেন কৃষকেরা।