Thank you for trying Sticky AMP!!

‘কুনু রকমে বাঁইচা আছি আর কী!’

দিনমজুর পবিত্র কুমার ঘোষ

শরীর আর আগের মতো চলে না। সিঁড়ি মাড়িয়ে দোতলা-তিনতলা উঠতে কষ্ট হয়। আছে উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যা। একনাগাড়ে কিছুক্ষণ কাজ করলেই হাঁপিয়ে ওঠেন। এ কারণে অনেকে এখন কাজেও নিতে চান না। মাঝেমধ্যে কাজ মিললেও শ্রম অনুযায়ী পারিশ্রমিক পান না। বয়স যত বাড়ছে, তাঁর আয় তত কমছে। তার ওপর জিনিসের দাম বেড়েছে। সব মিলিয়ে দুরবস্থায় পড়েছেন দিনমজুর পবিত্র কুমার ঘোষ।

গতকাল রোববার রাত ১২টার দিকে সিলেট নগরের পনিটুলা এলাকায় পবিত্রর সঙ্গে কথা হয়। কথায় কথায় পবিত্র বলেন, তাঁর ৫৫ বছর বয়স। বাসা নগরের পনিটুলা এলাকায়। সত্তরোর্ধ্ব মা সুষমা রানী ঘোষ, স্ত্রী কুলরানী ঘোষ, ছেলে প্রলয় কুমার ঘোষ ও মেয়ে অর্পিতা রানী ঘোষকে নিয়ে তাঁর সংসার। পরিবারে তিনিই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। মাসে তাঁর আয় হয় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। এই আয়ে চলে পাঁচজনের সংসার।

পবিত্র কুমার ঘোষ বলেন, দেড় শতাংশ জায়গার ওপর তাঁর নিজের বাসা। তাই ঘরভাড়া দিতে হয় না। তাঁর দুই সন্তান এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে। বাসা থেকে আধা কিলোমিটার দূরে তাদের বিদ্যালয়। তাই হেঁটে হেঁটেই সন্তানেরা বিদ্যালয়ে যায়। গত দুর্গাপূজায় পরিবারের সবার জন্য পোশাক কিনেছিলেন। এরপর টাকার অভাবে দুই সন্তানের স্কুলের পোশাক ছাড়া কোনো পোশাক কেনা হয়নি।

সাধ্যমতো সপ্তাহে একবার মাছ আর ১৫ দিনে মাংস কেনেন জানিয়ে পবিত্র বলেন, ‘যে টাকা কামাই করি, তা দিয়েই চলতে হয়। যখন যে সবজির দাম কম, তাই কিনি। কুনু রকমে বাঁইচা আছি আর কী! এখন যেভাবে মাছ, মাংসের দাম বাড়তাছে; সেই সব আর কুনু দিন কিইন্যা খাওয়ন যাইত না মনে হয়!’ কথা প্রসঙ্গে জানালেন, মুদিদোকানে ৪ হাজার টাকা বাকি পড়েছে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। দিনমজুর হিসেবে যে দিন কাজ পান না, সে দিন স্থানীয় এক চায়ের দোকানে টুকটাক কাজ করে কিছু টাকা পান।

আলাপে আলাপে পবিত্র বলেন, তিনি যখন ২০ বছরের যুবক, তখন আনারস গাছের পাতার খোঁচা লাগে তাঁর বাঁ চোখে। যথাযথ চিকিৎসা করাতে পারেননি। সেই থেকে তিনি ওই চোখে ঝাপসা দেখেন। জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি তাঁকে যতটা কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলেছে, বয়স বেড়ে যাওয়ায় কাজ কম পাওয়াও ততটা দুশ্চিন্তায় ফেলেছে তাঁকে।