Thank you for trying Sticky AMP!!

মাসে বিল আড়াই কোটি টাকা, মিলছে না গ্যাস 

  • ২০১২ সাল থেকেই মানিকগঞ্জে গ্যাসের সংকট চলছে।

  • ভোরে এক ঘণ্টা গ্যাস এলেও চাপ খুবই কম থাকে।

  • রান্নাসহ গৃহস্থালির কাজ সারতে হচ্ছে এলপিজি অথবা লাকড়িতে।

মানিকগঞ্জে তিতাস গ্যাসের আবাসিক গ্রাহকসংখ্যা ১২ হাজারের বেশি। এসব গ্রাহক প্রতি মাসে আড়াই কোটি টাকার বেশি গ্যাসের বিল দিচ্ছেন। বিনিময়ে গ্যাস মিলছে খুব সামান্য। গ্যাস–সংকটের কারণে চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন গ্রাহকেরা। গ্যাসের ব্যবস্থা না করে নিয়মিত বিল নেওয়ার বিষয়টিকে তিতাস কর্তৃপক্ষের একধরনের প্রতারণা হিসেবে উল্লেখ করেছেন অনেকে। বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতে রিট আবেদনও করেছেন ক্ষুব্ধ এক গ্রাহক।

মানিকগঞ্জ পৌরসভার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১২ সাল থেকেই মানিকগঞ্জে গ্যাসের সংকট চলছে। ২০১১ সাল পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্যাস পেলেও বর্তমানে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গড়ে ১ ঘণ্টাও গ্যাস পাচ্ছেন না আবাসিক গ্রাহকেরা। বাধ্য হয়েই রান্নাসহ গৃহস্থালির কাজ সারতে হচ্ছে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) অথবা লাকড়ির চুলায়। এতে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে গ্রাহকদের।

গ্যাসের ব্যবস্থা না করে নিয়মিত বিল নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতে রিট করেছেন মানিকগঞ্জ জেলা শহরের ক্ষুব্ধ এক গ্রাহক।

নিরবচ্ছিন্ন গ্যাসপ্রাপ্তির দাবিতে পৌর সামাজিক কল্যাণ সমিতি, গ্যাসপ্রাপ্তি নাগরিক সংগ্রাম কমিটিসহ বিভিন্ন ব্যানারে নানা সময়ে তিতাস গ্যাসের আঞ্চলিক অফিস ঘেরাও, মিছিল, মানববন্ধন, জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি পেশ, মহাসড়ক অবরোধসহ নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করে আসছেন গ্রাহকেরা। তবে এতেও কোনো কাজ হয়নি। মাঝেমধ্যে ভোরে এক ঘণ্টা গ্যাস এলেও চাপ খুবই কম থাকে।

তিতাস গ্যাসের মানিকগঞ্জের আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলায় মিটারবিহীন ১২ হাজার ১০২ জন আবাসিক গ্রাহক রয়েছেন। এসব গ্রাহকের লাইনে ১ হাজার ১৭০টি ১ চুলা (সিঙ্গেল) ও ২২ হাজার ৯৬০টি ২ চুলা (ডাবল) রয়েছে। প্রতি মাসে ১টি চুলার জন্য একজন গ্রাহককে ৯৯০ টাকা এবং ২টি চুলার জন্য ১ হাজার ৮০ টাকা দিতে হচ্ছে। এই হিসাবে প্রতি মাসে গ্রাহকদের বিল দিতে হয় ২ কোটি ৫৯ লাখ ৫৫ হাজার ১০০ টাকা। বছরে দাঁড়ায় ৩১ কোটি টাকার বেশি।

নিয়মিত বিল পরিশোধ করেও গ্যাস না পাওয়ায় গ্রাহকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় আন্দোলন-সংগ্রামও করেছেন গ্রাহকেরা। এ নিয়ে গত ১৪ ডিসেম্বর জেলা শহরের বেউথা এলাকার বাসিন্দা আরশেদ আলী নামের এক গ্রাহক উচ্চ আদালতে রিট করেছেন। তিনি বলেন, গ্যাস না দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে বিল নেওয়া প্রতারণা। গ্যাস না দিয়ে তিতাস কর্তৃপক্ষ গ্রাহকদের কাছ থেকে নিয়মিত বিল নিচ্ছে। এ বিষয়ে করা রিট আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানান আরশেদ আলী।

গ্যাস না দিয়ে বিল নেওয়া প্রসঙ্গে তিতাস গ্যাস অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড মানিকগঞ্জের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মো. আতিকুল হক সিদ্দিক বলেন, যেহেতু উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করা হয়েছে। আদালতেই এ বিষয়ে ব্যাখা দেওয়া হবে। গ্যাস–সংকট বিষয়ে এই দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা সমাধানের জন্য এলেঙ্গা থেকে মানিকগঞ্জ পর্যন্ত একটি নতুন সঞ্চালন লাইনের উদ্যোগ নিয়েছে তিতাস কর্তৃপক্ষ। এই কাজ শেষ হলেই গ্যাসের সমস্যা থাকবে না।

পৌর এলাকার সেওতা এলাকার গৃহিণী স্বপ্না আক্তার বলেন, ‘ভোরে কিছু সময়ের জন্য গ্যাস পাওয়া গেলেও চাপ না থাকায় চুলা জ্বলে না। বাধ্য হয়েই সিলিন্ডার গ্যাস কিনে রান্না করছি। এতে খরচ দ্বিগুণ লাগছে।’

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি গোলাম ছারোয়ার বলেন, গ্যাসের এই সমস্যা দীর্ঘদিনের। দীর্ঘদিন ধরে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাসের দাবিতে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন-সংগ্রাম করা হলেও কোনো সুফল মেলেনি। গ্যাস না পেলেও প্রতি মাসে গ্রাহকেরা আড়াই কোটি টাকার বেশি বিল দিয়ে আসছেন।