Thank you for trying Sticky AMP!!

একেবারে শেষ সময়ে ভোট দিতে চান ভোটার ননী গোপাল। রোববার বেলা ৩টায় কয়রার মদিনাবাদ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রের সামনে

‘ভোট দিলেই তো দাম শেষ’

সেই সকাল আটটায় ভোটকেন্দ্রে এলেও ভোট দেননি খুলনার কয়রা উপজেলার মদিনাবাদ গ্রামের ননী গোপাল (৫৮)। আজ রোববার বেলা তিনটায় কয়রা মদিনাবাদ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

ভোটকেন্দ্রে হাজির হয়েও ভোট না দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে ননী গোপাল বলেন, ‘ভোট দিলে তো দাম শেষ। ভোট যতক্ষণ হাতে আছে, ততক্ষণ আমার মূল্য আছে। দেখেন না, সবাই কেমন আপ্যায়ন করছে, চা-পান খাওয়াচ্ছে। ভোট দেওয়া হয়ে গেলে আর কেউ ডাকবে না। সেই জন্য ভোট একেবারে শেষ সময়ে দেব। একেবারে চারটা বাজার এক মিনিট আগে।’

বেলা তিনটায় ওই কেন্দ্রে যখন কথা হয় ননী গোপালের সঙ্গে, তখন কেন্দ্রে নারী ও পুরুষ বুথে কোনো ভোটার নেই। অথচ কেন্দ্রের বাইরে রাস্তায় বেশ ভিড়। কেউ ভোট দিয়েছেন, কেউ অপেক্ষা করছেন। সবাই নানা আলোচনায় ব্যস্ত। বিভিন্ন প্রার্থীর সমর্থক স্থানীয় নেতা-কর্মীরা ভোটারদের আপ্যায়ন করছেন। তারপর স্লিপ দিয়ে পাঠাচ্ছেন ভোটকেন্দ্রে।

আরও পড়ুনঃ

ঈগল প্রতীকের সমর্থক মো. মাসুম বিল্লাহকে দেখা গেল ভোটারদের চা-পান খাইয়ে স্লিপ দিয়ে কেন্দ্রে পাঠাতে চাচ্ছেন। মাসুম বললেন, ‘সকালের দিকে মোটামুটি ভোটার এসেছিল। ভেবেছিলাম, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটারের সংখ্যা আরও বাড়বে। কিন্তু মানুষ কেন্দ্রে যাচ্ছে না। চা পান খেয়েও মানুষ দাঁড়িয়ে থাকছে কেন্দ্রের আশপাশে।’
দুই ঘণ্টা আগে কেন্দ্র এসে ভোট দেননি মদিনাবাদ গ্রামের আবুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘সময় তো এখনো শেষ হয়ে যায়নি। কেন্দ্র তো ভোটারই নেই। ভোটকেন্দ্রের ভাবগতি একটু দেখি। তারপর বুঝেশুনে ভোট দেব।’

শুধু মদিনাবাদ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রই নয়, রোববার সকাল থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত খুলনা-৬ (কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলা) আসনের ১৪টি ভোটকেন্দ্র ঘুরে ভোটার উপস্থিতি খুবই কম দেখা যায়। কোনো কেন্দ্রেই ভোটারদের লাইনে দাঁড়াতেই হচ্ছে না। ফাঁকা কেন্দ্রে দুই-একজন করে আসছেন, আর ভোট দিয়ে চলে যাচ্ছেন। কেন্দ্রের বাইরের সড়কে কিছু ভোটারের আনাগোনা রয়েছে সবখানেই।

কয়রার কালনা আমিনিয়া ফাজিল মাদ্রাসা ভোটকেন্দ্রের পাশেই আছে একটি মুদিদোকান। দোকানি মহসিন আলী একাই বসেছিলেন দোকানে। ভোট দিতে যাবেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভোট দিলেও কী, আর না দিলেও-বা কী! এমপি হওয়ার পর কেউ তো আর মানুষের চেনে না। তারপরও সময় শেষ হওয়ার আগে ভোট দিয়ে আসবানে।’

এ আসনের ১৪২টি কেন্দ্রে ভোটকক্ষ ৯২২টি। ৪ লাখ ৫ হাজার ৩১৬ ভোটারের এই আসনে এবার ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগের মো. রশীদুজ্জামান (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী জি এম মাহবুবুল আলম (ঈগল), জাতীয় পার্টির শফিকুল ইসলাম মধু (লাঙ্গল), তৃণমূল বিএনপির গাজী নাদির উদ্দিন খান (সোনালী আঁশ), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের নেওয়াজ মোরশেদ (নোঙর), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আবু সুফিয়ান (আম) ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের মির্জা গোলাম আজম (ডাব)।

সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কয়রা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সকালের দিকে ভোটার উপস্থিতি কম হলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিতি বাড়ছে। ভোট গ্রহণ অত্যন্ত সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হচ্ছে। ভোটারদের প্রতি আহ্বান, তাঁরা যেন নিশ্চিন্তে কেন্দ্রে গিয়ে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।