Thank you for trying Sticky AMP!!

প্রাণী রক্ষায় সড়ক ও রেলপথ সরানোর উদ্যোগ ভেস্তে গেছে

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভেতরে নির্মিত শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়ক। গত ২১ মে তোলা ছবি

মৌলভীবাজারে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান বিরল বন্য প্রাণী ও জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ একটি চিরহরিৎ বন। বনটি দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অভয়ারণ্য। কিন্তু এই বনের ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া রেলপথ ও সড়কপথ বন্য প্রাণীর জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায়ই দ্রুতগতির ট্রেন ও যানবাহনের নিচে চাপা পড়ে মারা যাচ্ছে বন্য প্রাণী। এ পরিস্থিতিতে বনের মধ্য দিয়ে যাওয়া রেল ও সড়কপথ বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছেন পরিবেশবাদীরা। বিকল্প সড়ক না হওয়া পর্যন্ত উদ্যান এলাকায় ট্রেন ও যানবাহনের গতি ২০ কিলোমিটারে রাখার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনোটিই কার্যকর হচ্ছে না।

গত ২০ মে ভোরে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এলাকায় গাছ পড়ে সিলেটমুখী আন্তনগর উদয়ন এক্সপ্রেস দুর্ঘটনাকবলিত হয়েছে। এতে ট্রেন উদ্ধারসহ জনসমাগমে বন্য প্রাণীর পরিবেশ বিঘ্নিত হয়েছে। অনেক দিন থেকেই লাউয়াছড়া থেকে সরিয়ে বিকল্প সড়কপথ নির্মাণের দাবি করা হচ্ছে।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সরকার ১৯৯৬ সালে লাউয়াছড়াকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করে। ১ হাজার ২৫০ হেক্টরের চিরহরিৎ ও মিশ্র চিরহরিৎ এই বনে উল্লুক, বানর, বিভিন্ন প্রজাতির সাপ, বনমোরগ, বনরুই, মায়া হরিণ, মেছো বাঘ, বন্য শূকর, অজগরসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদ আছে। অসংখ্য বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল ও প্রজননক্ষেত্র এটি।

বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উদ্যানের ভেতর দিয়ে শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়ক এবং ঢাকা-সিলেট রেলপথ চলে গেছে। এই দুই পথে প্রতিবছর অর্ধশতাধিক বিপন্ন, বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় বন্য প্রাণীর মৃত্যু ঘটছে। অনেক দিন ধরেই পরিবেশকর্মী, বন্য প্রাণী রক্ষার আন্দোলনে যুক্ত ব্যক্তিরা বিকল্প রেল ও সড়কপথ নির্মাণের দাবি করছেন। বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের পক্ষ থেকেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

পরিবেশকর্মীদের ওই দাবি ও চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বিকল্প রেল ও সড়কপথ নির্মাণ সময়সাপেক্ষ হওয়ায় উদ্যান এলাকার সাড়ে ৭ কিলোমিটারে ট্রেন ও যানবাহনের গতি ২০ কিলোমিটারে রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সিলেটের বিভাগীয় সাবেক বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ২০২১ সালের ১৪ নভেম্বর বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষককে দেওয়া এক চিঠিতে বলেন, লাউয়াছড়ার মধ্য দিয়ে একটি হাইওয়ে সড়ক ও রেলপথ চালু আছে। রেলপথ দিয়ে প্রতিদিনই অনেকগুলো এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল করে। ট্রেনের গতি বেশি থাকায় প্রায়ই ট্রেনের চাকায় পিষ্ট হয়ে বন্য প্রাণীর মৃত্যু হচ্ছে। রেললাইন পারাপারের সময়ই এই হতাহতের ঘটনা বেশি ঘটছে। এ ছাড়া রেললাইনে বিকট শব্দে দ্রুতগতির ট্রেন চলায় বন্য প্রাণীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রা, প্রজনন ও চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। বন্য প্রাণীর চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ট্রেন লাইনে সর্বোচ্চ গতি ২০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টার মধ্যে রাখা দরকার।

একইভাবে গত বছর ২৭ ফেব্রুয়ারি বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষককে আরেকটি চিঠি দিয়ে লাউয়াছড়ার অভ্যন্তরে ট্রেনের গতি কমানোর যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করা হয়। এই চিঠিসমূহের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রেনের গতি কমাতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে গত ২৫ জানুয়ারি রেলপথ মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়।

এরপর গত ২৯ জানুয়ারি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. তৌফিক ইমাম স্বাক্ষরিত একটি চিঠি বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালককে দিয়ে বলা হয়েছে, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে রেললাইনে বন্য প্রাণীর মৃত্যু রোধ ও এদের জীবনযাত্রা নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে বিদ্যমান রেলওয়ে দিয়ে চলাচলকারী সব ট্রেনের গতিসীমা ২০ কিলোমিটারের মধ্যে রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়।

এ বিষয়ে গত ২১ মে শ্রীমঙ্গল স্টেশনমাস্টার মো. শাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে বন বিভাগ একটি চিঠি দিয়েছে। রেল থেকে কোনো চিঠি পাইনি।’

গত বছরের ৩ মার্চ থেকে শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়কের লাউয়াছড়া এলাকায় যানবাহনের গতি ২০ কিলোমিটারে রাখার উদ্যোগ নেয় বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ। এ নিয়ে প্রচারও চালানো হয়। কিন্তু সড়কে যানবাহন আগের গতিতে চলছে। গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রায়ই বন্য প্রাণীর মৃত্যু হচ্ছে।

বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও উদ্ধারের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্ট্যান্ড ফর আওয়ার এনডেঞ্জার্ড ওয়াইল্ডলাইফের (সিউ) অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সোহেল শ্যাম গত ১৭ মে প্রথম আলোকে বলেন, ‘লাউয়াছড়ায় বন্য প্রাণীর মৃত্যু নিয়ে অনেকে কথা বলছেন। সড়কে ২০ কিলোমিটার গতি মানা হচ্ছে না। মানা হলে অনেক প্রাণী বেঁচে যেত।’