Thank you for trying Sticky AMP!!

শ্রীপুরে আশঙ্কাজনক হারে নামছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর

শ্রীপুরের কোথাও কেন্দ্রীয়ভাবে পানির সরবরাহব্যবস্থা নেই। পানির চাহিদা মেটাতে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ওপর নির্ভর করতে হয়।

গাজীপুর জেলার মানচিত্র

গত ২০১৬ সালে গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার গিলারচালা গ্রামের খন্দকার আসাদুজ্জামান ৬০ ফুট গভীর থেকে বৈদ্যুতিক মোটরে পানি তুলতে পারছিলেন। কিন্তু এ বছর মে মাস পর্যন্ত পানি পেতে ২ ধাপে আরও ২০ ফুট গভীরে মোটর স্থাপন করতে হয়েছে। পানির জন্য আসাদুজ্জামানের মতো এমন ভুক্তভোগীর সংখ্যা শ্রীপুর শিল্পাঞ্চলে অসংখ্য। বিষয়টি পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্যও হুমকি হয়ে দঁাড়িয়েছে।

সরকারের দায়িত্বশীল দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, শ্রীপুরে শিল্পাঞ্চলে প্রতিবছর গড়ে দেড় ফিট করে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। তাঁদের হিসাবে গত ১০ বছরে পানি স্তর নেমেছে ১৫ ফুট। কিন্তু সাধারণ মানুষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী পানির স্তর নেমে যাওয়ার হার আরও বেশি। আগামী ১৫ থেকে ২০ বছরের মাথায় এই শিল্পাঞ্চলে তীব্র পানির সংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই সংকটের অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে শিল্প কারখানাগুলোর অনিয়ন্ত্রিত পানি উত্তোলনকে। আবাসিক পর্যায়ে ব্যক্তিগতভাবে ইচ্ছামতো ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনও দায়ী।

শিল্পকারখানাগুলোকে সারফেস ওয়াটার ব্যবহারের জন্য বলা হয়। কিন্তু শ্রীপুর শিল্পাঞ্চলে সারফেস ওয়াটারের উৎস কম। এ ক্ষেত্রে করণীয় সম্পর্কে আমার জানা নেই।
মো. তরিকুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, শ্রীপুর

সরকারের কয়েকটি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পুরো গাজীপুরে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৫০০ শিল্পকারখানায় গড়ে উঠেছে। এগুলোর মধ্যে ৫৯০টি ডায়িং কারখানা। এসব ডায়িং কারখানার বেশির ভাগের অবস্থান শ্রীপুরের বিভিন্ন এলাকায়। শ্রীপুরের শিল্পঘন এলাকাগুলোর মধ্যে আছে গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী, ১ নম্বর সিঅ্যান্ডবি, নতুন বাজার, গিলারচালা, মাওনা, নয়নপুর, জৈনাবাজার। এ ছাড়া অন্য গ্রামগুলোতেও ডায়িং কারখানা আছে। শ্রীপুরের কোথাও কেন্দ্রীয়ভাবে পানির সরবরাহব্যবস্থা চালু নেই। ফলে এই অঞ্চলের পানির চাহিদা মেটাতে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের ওপর নির্ভর করতে হয়।

শ্রীপুর শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১০ সালে এখানে মাত্র ৫০ থেকে ৬০ ফুট গভীরেই মিলত পানির স্তর। স্বল্প ক্ষমতার বৈদ্যুতিক মোটরের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করা যেত। ২০১৩ সাল থেকেই পানি স্তর নিম্নগামী। প্রতি দুই বছর পর পর স্থানীয় বাসিন্দাদের পানি উত্তোলনের জন্য বৈদ্যুতিক সাবমার্সিবল মোটর ৫ থেকে ১০ ফুট নিচে নামাতে হচ্ছে। বর্তমানে কোনো কোনো এলাকায় পানি পেতে ৯০ ফুটের নিচেও মোটর স্থাপন করতে হচ্ছে।

নয়নপুর এলাকার বাসিন্দা মো. নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৪ সালে তাঁর বাড়িতে পানির স্তর ছিল ৬০ ফুট নিচে। ২০১৭ সালে পানি না পাওয়ায় মোটর আরও ১০ ফুট নিচে নামাতে হয়েছে। ২০২১ সালে পানিসংকট দেখা দিলে আরও ১০ ফুট নিচে মোটর স্থাপন করতে হয়। এ বছর এপ্রিল মাসে আবারও পানির সংকট দেখা দেয়। ফলে আরও ১০ ফুট নিচে মোটর স্থাপন করে সমস্যার সমাধান করেন নুরুল ইসলাম।

এমসি বাজার এলাকার বাসিন্দা আবু রায়হান বলেন, ‘২০১৯ সালে ৩০০ ফুট খনন করে রেখেছিলাম। ৬০ ফুট থেকে পানি উঠতো। এখন ৯০ ফুট থেকেও ভালো পানি পাওয়া যায় না।’

এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর গাজীপুরের উপপরিচালক মো. নয়ন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, শিল্পকারখানাগুলো সবচেয়ে বেশি ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে। এগুলোর মধ্যে ডায়িং কারখানা পানি উত্তোলন করে সবচেয়ে বেশি। ‘সারফেস ওয়াটার’–এর ওপর নির্ভরশীলতা না বাড়ালে শ্রীপুর শিল্পাঞ্চল তথা পুরো গাজীপুরের মানুষকে অচিরেই পানির মহাসংকটে ভুগতে হবে।

ভূগর্ভস্থ পানির তীব্র সংকটের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন শ্রীপুর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কর্মকর্তা মো. ফয়সাল খান। তিনি বলেন, প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করা হচ্ছে। ফলে প্রতিবছর দেড় ফুটের মতো নেমে যাচ্ছে পানির স্তর। এভাবে নামতে থাকলে আগামী ১৫ থেকে ২০ বছরের মধ্যে শ্রীপুর শিল্পাঞ্চলের মানুষ তীব্র পানির সংকটের মুখোমুখি হবে।

এই সংকট মোকাবিলা করতে এখন থেকেই ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ফয়সাল খান বলেন, কারখানাগুলোকে ভূ-উপরিভাগের নদ-নদী কিংবা খালের পানি ব্যবহারে উৎসাহী করা দরকার।

এ ছাড়া উন্নত দেশের মতো বৃষ্টির পানি জমিয়ে রেখে তা ব্যবহার করা যেতে পারে। ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করলেও তা পরিশোধনের মাধ্যমে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করা যায়। এই পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীলতা কমানো যেতে পারে।

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিল্পকারখানাগুলোকে সারফেস ওয়াটার ব্যবহারের জন্য বলা হয়। কিন্তু শ্রীপুর শিল্পাঞ্চলে সারফেস ওয়াটারের উৎস কম। এ ক্ষেত্রে করণীয় সম্পর্কে আমার জানা নেই।’