Thank you for trying Sticky AMP!!

ঐতিহাসিক হাজীগঞ্জ দুর্গ

প্রত্নতত্ত্বের নিদর্শন নারায়ণগঞ্জের হাজিগঞ্জ দুর্গ। সম্প্রতি তোলা ছবি

শীতলক্ষ্যা নদীর পশ্চিম তীরে ঐতিহাসিক হাজীগঞ্জ দুর্গের অবস্থান। দুর্গটি মোগল আমলের স্থাপত্যশিল্পের অনন্য নিদর্শন। তবে অযত্ন–অবহেলায় এটি নষ্ট হতে চলেছে। অনেক আগেই দর্শনীয় এই স্থাপনার প্রধান ফটক খুলে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। ওয়াচ টাওয়ারটি ভেঙে পড়েছে। দুর্গের আশপাশের কিছু জায়গা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দখলে চলে গেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ শহরের এই দুর্গ ঘিরে পর্যটনশিল্প বিকাশের সম্ভাবনাকে মেরে ফেলা হচ্ছে, এমন অভিযোগ স্থানীয় সচেতন মহলের। তাঁরা জানান, দুর্গটিকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হলে মানুষ ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারবে। তাঁরা দুর্গটিকে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জানান।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সূত্রমতে, হাজীগঞ্জ দুর্গের পাশ দিয়ে একসময় শীতলক্ষ্যা নদী প্রবাহিত হতো। বর্তমানে দুর্গ থেকে নদী অনেকটা দূরে সরে গেছে। দুর্গ নির্মাণের তারিখ, এর নির্মাতা কে ছিলেন তা সঠিকভাবে জানা যায় না। তবে দুর্গটি মোগল আমলের সপ্তদশ শতকে নির্মিত হয়েছিল বলে নানাভাবে জানা যায়। আরাকানি (মগ) জলদস্যুদের আক্রমণ প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে এটি নির্মিত হয়েছিল। অসমান বাহু ও ছয় কোণবিশিষ্ট দুর্গের উত্তরে রয়েছে তোরণযুক্ত প্রধান প্রবেশপথ। প্রবেশপথের সিঁড়িতে রয়েছে ১৯টি ধাপ। দুর্গের ছয় কোনায় নির্মিত বুরুজগুলো সম-আকৃতির নয়, তুলনামূলক দক্ষিণের বুরুজ দুটি বড়।

প্রাচীরবেষ্টিত দুর্গের মধ্যভাগে কোনো স্থাপনা নেই। দুর্গের ভেতরে পূর্ব দিকে বর্গাকার উঁচু একটি ওয়াচ টাওয়ার আছে। দুর্গের জমির পরিমাণ ১৯ দশমিক ৬৪ একর। ১৯৫০ সালের ১৬ নভেম্বর এটিকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি ঘোষণা হয়। এটি খিজিরপুর দুর্গ নামেও পরিচিত।

বাংলাপিডিয়ার তথ্যমতে, মোগল সুবাদার ইসলাম খান ঢাকায় রাজধানী স্থাপন করেন। সম্ভবত এর কিছু দিন পরে নদীপথে আসা মগ ও পর্তুগিজ জলদস্যুদের আক্রমণ প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে দুর্গটি নির্মিত হয়। নদীর দিকের দুর্গের একমাত্র প্রবেশপথ থেকে বোঝা যায়, শুধু নদীপথেই দুর্গের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা ছিল।

হাজীগঞ্জ দুর্গের মতোই শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব পারে সোনাকান্দা এলাকায় রয়েছে আরেকটি দুর্গ। সেটির নাম ‘সোনাকান্দা দুর্গ’। জলদস্যুদের আক্রমণ প্রতিহত করতে নারায়ণগঞ্জ ছাড়া এমন আরেকটি ‘জলদুর্গ’ রয়েছে মুন্সিগঞ্জে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, হাজীগঞ্জ দুর্গের ওয়াচ টাওয়ারটির কিছু অংশ ধসে পড়েছে। আশপাশে কিছু ঝোপ–ঝাড় গজিয়েছে। অনেক স্থানে পলেস্তারা খসে পড়ছে।

দুর্গটি দেখতে পরিবার নিয়ে এসেছিলেন বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা লোকমান হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ঐতিহ্য হিসেবে দুর্গটিকে যেভাবে সংরক্ষণ করা দরকার, সেভাবে তা করা হচ্ছে না। কিছু মানুষ ওয়াচ টাওয়ারের ইট খুলে নিয়ে যাচ্ছে। সেটি আর মেরামত করা হচ্ছে না। পরিবেশকে ভালো ও আকর্ষণীয় করা প্রয়োজন। তাহলে দর্শণার্থীরা স্বচ্ছন্দে দুর্গটি ঘুরে দেখতে পারবেন।

দুর্গ দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের চুক্তিভিত্তিক কর্মী মো. রায়হান। তিনি জানান, তাঁরা সাধ্যমতো এর রক্ষণাবেক্ষণ করছেন।

দুর্গটি সংরক্ষণের জন্য আন্দোলন করে আসছে হাজীগঞ্জ দুর্গ রক্ষা সংগ্রাম কমিটি। ওই কমিটির সদস্য সচিব হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দুর্গের কিছু জায়গা দখল হয়ে গেছে। সেসব জায়গা উদ্ধারসহ দুর্গটির সংস্কার ও সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।

একই দাবি জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক শাহীন মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেশের ইতিহাস–ঐতিহ্যের নিদর্শনগুলোকে সংরক্ষণ করা উচিত।