Thank you for trying Sticky AMP!!

নদীতে বাঁধ দিয়ে বালু বিক্রি 

ঢেপা নদীতে বাঁধ দিয়ে অবৈধভাবে বালু বিক্রি করছেন আওয়ামী লীগ নেতা তোফাজ্জল হোসেন। এতে ওই এলাকায় নদীভাঙন শুরু হয়েছে।

নদীতে আড়াআাড়ি বাঁধ দিয়ে বালু পরিবহনের জন্য রাস্তা তৈরি করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা। গত সোমবার দুপুরে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার কুড়িটাকিয়া গ্রামে

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ ও কাহারোল উপজেলায় পাাউবোর অধীনে ঢেপা নদীর খননকাজ শুরু হয়েছে গত বছর ১ ফেব্রুয়ারি থেকে। তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে এই খননকাজ করছে। পাউবোর সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী খননের পর উঠানো বালু নদীর দুই ধারে স্তূপ করার কথা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর। পরে ওই বালু নিলামে বিক্রি করবে পাউবো। তবে খননের শুরু থেকে নিলাম ছাড়াই বালুগুলো বিক্রি করে দিচ্ছেন এব আওয়ামী লীগ নেতা। ওই বালু  ট্রাক ও ট্রলিতে পরিবহনের জন্য তিনি নদীতে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করেছেন। ওই বাঁধের কারণে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় ওই এলাকায় ভয়াবহ নদীভাঙন শুরু হয়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, বীরগঞ্জ উপজেলার পাল্টাপুর ইউনিয়নের কুড়িটাকিয়া গ্রামের তোফাজ্জল হোসেন শ্রমিক নিয়োগ করে অবৈধভাবে বালু বিক্রি করছেন। তিনি পাল্টাপুর    ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য। তাঁর দলীয় পদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকারিয়া জাকা।

বালু পরিবহনের জন্য বাঁধ নির্মাণের কারণে নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন ব্যক্তি বলেন, স্থানীয় প্রশাসন ও পাউবোর কয়েকজন কর্মকর্তাকে খুশি করে তোফাজ্জল হোসেন দেদার বালু বিক্রি করছেন। 

পাউবোর দিনাজপুর কার্যালয় সূত্র জানায়, ‘দিনাজপুর শহর রক্ষা প্রকল্পের পুনর্বাসন এবং দিনাজপুর শহরসংলগ্ন ঢেপা ও গর্ভেশ্বরী নদী সিস্টেম ড্রেজিং/খনন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ঢেপা ও গর্ভেশ্বরী নদীর ৯ দশমিক ৪ কিলোমিটার পুনঃখননের কাজ করা হচ্ছে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ কোটি ১৮ লাখ ২২ হাজার টাকা। গত বছর ১ ফেব্রুয়ারি কাজ শুরু হয়। শেষ হবে চলতি বছরের জুন মাসে। ঢাকার মেসার্স এসআরডি, নোনা ও পিভিএল নামের তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খননকাজ করছে। খননকাজ শুরুর কয়েক মাস পর থেকে বীরগঞ্জ উপজেলার ঢেপা নদীর সাড়ে চার কিলোমিটার জায়গার বালু বিক্রি করছেন তোফাজ্জল হোসেন। 

গত সোমবার বীরগঞ্জ উপজেলার কুড়িটাকিয়া এলাকায় নদীর খনন করা জায়গা ঘুরে দেখা যায়, বালু নেওয়ার জন্য নদীর আড়াআড়িভাবে বালু ফেলে ২০০ মিটার দীর্ঘ রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ। ডাম্প ট্রাক ও ট্রাক্টর বোঝাই করে বালু পরিবহন করায় পাড়সংলগ্ন আলু-ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের খেত ভেঙে পড়ছে নদীতে। 

বীরগঞ্জ উপজেলার কুড়িটাকিয়া গ্রামে ঢেপা নদীতে বাঁধ দেওয়ায় ভাঙন শুরু হয়েছে

কুড়িটাকিয়া এলাকার কয়েকজন জানান, প্রতিদিন অর্ধশতাধিক ডাম্প ট্রাক ও শতাধিক ট্রাক্টরে বালু নিয়ে যাওয়া হয়। এক ডাম্প ট্রাক বালু  পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা এবং এক ট্রাক্টর বালু ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এভাবে প্রতিদিন বালু বিক্রি করে তিন লাখ টাকা আয় করছেন তোফাজ্জল হোসেন। 

অবৈধভাবে বালু তোলার অভিযোগের বিষয়ে তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘যাঁরা কাজ পেয়েছেন, তাঁদের কাছে সাবকন্ট্রাক্ট নিয়ে খননকাজ করছি। তাঁদের অনুমতি সাপেক্ষে খননকৃত বালু বিক্রি করা হচ্ছে। নদীর মাঝখানে রাস্তা তৈরির বিষয়ে তিনি বলেন, ওই রাস্তার মধ্যে কালভার্টের মতো করা হয়েছে। পানিপ্রবাহ বন্ধ করা হয়নি।  

পাউবোর দিনাজপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘নিলাম ব্যতীত খননকাজের বালু বিক্রির সুযোগ নেই। চুক্তিবদ্ধ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পাউবোর অনুমতি ব্যতীত কাউকে সাবকন্ট্রাক্টও দিতে পারবেন না। তোফাজ্জল নামের এক ব্যক্তি নদীর বালু তুলে বিক্রি করছেন বিষয়টি শুনেছি। ইউএনওকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।’ পাউবো কর্মকর্তাদের কেউ জড়িত আছেন কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যদি তা হয়ে থাকে, তবে তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।