Thank you for trying Sticky AMP!!

৫৮ বছর ধরে মন ভরাচ্ছে মানিকগঞ্জের ‘নিজামের মিষ্টি’

মানিকগঞ্জের ঘিওরের তেরশ্রী বাজারে প্রায় ছয় দশক ধরে তৈরি করা হচ্ছে নিজামের মিষ্টি

স্বাদে আর মানে মানিকগঞ্জের মানুষের কাছে প্রিয় এক নাম ‘নিজামের মিষ্টি’। এই মিষ্টির কদর শুধু জেলাজুড়েই নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা ভোজনরসিকদের কাছেও।

জেলার ঘিওর উপজেলার তেরশ্রী এলাকায় নিজামের মিষ্টির কারখানা। মিষ্টি প্রস্তুতকারক মো. নিজামুদ্দিনের নামে এর নামকরণ হয়েছে। ৫৮ বছর ধরে তেরশ্রী বাজার এলাকার কারখানায় বানানো হচ্ছে মিষ্টি।

স্থানীয় তেরশ্রী ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক পাভেল ঠাকুর প্রথম আলোকে বলেন, প্রায় ছয় দশক ধরে তৈরি হচ্ছে নিজামের মিষ্টি, যা জেলায় একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। ছানার তৈরি এই মিষ্টির স্বাদ ও মান অনন্য হওয়ায় চাহিদাও বেশি।

Also Read: বদলগাছির ‘দাদুর সন্দেশ’ মন ভোলায় সবার

জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী নিজামুদ্দিনের বয়স ৯৩ বছর। সম্প্রতি তাঁর মিষ্টির কারখানায় তাঁর সঙ্গে আলাপ জমে। তিনি বলতে থাকেন, তাঁর পৈতৃক বাড়ি ছিল জেলার সাটুরিয়া উপজেলার দরগ্রাম গ্রামে। আট বছর বয়সে বাবা শামছুদ্দিন মারা যাওয়ার পর পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে চাচার সঙ্গে টানাপোড়েন শুরু হয়। পরে তিনি মায়ের সঙ্গে তেরশ্রী এলাকায় খালার বাড়িতে চলে আসেন। সেখানেই স্থায়ী হন। বাজারে চায়ের দোকান দেন।

নিজামুদ্দিন বলেন, ১৯৬৫ সালে একদিন চা তৈরির পর অনেক পরিমাণ দুধ থেকে যায়। সেই দুধ জাল দিয়ে মিষ্টির ওপর মাওয়ার প্রলেপ দিয়ে বিশেষ মিষ্টি তৈরি করলেন। সেই মিষ্টি খেয়ে সবাই প্রশংসা করলেন। সেই থেকে শুরু। পরের বছর (১৯৬৬ সাল) স্থানীয় তেরশ্রী কলেজে এক অনুষ্ঠানে যান অতিথিরা। তাঁদের নিজামের মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। স্বাদের ভিন্নতার কারণে অনেকেই মিষ্টির প্রশংসা করলেন। কেউ কেউ কিনে নিয়ে গেলেন। এভাবেই ধীরে ধীরে তাঁর মিষ্টির সুনাম ছড়ায়।

নিজামের মিষ্টি যার হাত ধরে এসেছে, নিজের মিষ্টির কারখানায় সেই মো. নিজামুদ্দিন

তেরশ্রী বাজার থেকে দুধ কিনে কারখানায় জ্বাল দিয়ে প্রথমে ছানা তৈরি করা হয়। এরপর সেসব ছানা চিনির শিরায় জ্বাল দিয়ে স্বাভাবিকভাবে মিষ্টি তৈরি করা হয়। মিষ্টি ঠান্ডা হলে মিষ্টির গায়ে দুধের মাওয়ার প্রলেপ দেওয়া হয়, যা নিজামের মিষ্টি বলে পরিচিত। এই মিষ্টি ছাড়াও কারখানায় মালাই চপ, শাহি চমচম, কিরিম চমচম, শাহি কদম মিষ্টি এবং সন্দেশ ও আফলাতুন ছানা তৈরি হয়। মিষ্টির ছানা দিয়ে শুকনাভাবে তৈরি করা হয় শাহি চমচম। দুধের শিরায় জ্বাল দিয়ে আবার দুধের মধ্যে ভিজিয়ে রেখে তৈরি করা হয় মালাই চপ।

নিজামের মিষ্টির কারখানায় এখন আটজন কারিগর কাজ করেন। তাঁদের সঙ্গে কাজের দেখভাল করেন নিজামুদ্দিনের ছোট ছেলে সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, গরমের সময় থেকে শীতকালে মিষ্টির চাহিদা বেশি থাকে। বর্তমানে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ১৮০ কেজি মিষ্টি তৈরি হয়। তবে শীতকালে ২২০ থেকে ২৫০ কেজি মিষ্টি বিক্রি হয়ে থাকে।

Also Read: ৮৫ বছর ধরে মানুষের মুখে মুখে ‘দত্তের মিষ্টি’র সুনাম

নিজামের মিষ্টির দুটি শোরুম আছে। একটি জেলা শহরের খালপাড় এলাকায় এবং অন্যটি ঘিওরের পঞ্চ রাস্তার মোড় এলাকায়। অনেকে অবশ্য ঘিওরের এই কারখানা থেকেও মিষ্টি কিনে নিয়ে যান। এখানে প্রতি কেজি শুকনা মাওয়া ৪০০ টাকা, শাহি চমচম ৬০০ টাকা, কিরিম চমচম ৪০০ টাকা ও শাহি কদম ৫০০ টাকায় বিক্রি করা হয়।