Thank you for trying Sticky AMP!!

বোরো ধানে তেমন লাভ পাচ্ছেন না কৃষক 

এবারে প্রতিমণ (২৮ কেজি) বোরো ধানে উৎপাদন খরচ পড়েছে ৬৪৫ টাকা। গত মৌসুমে ছিল ৪৭২ টাকা। 

জমিতে বোরো ধান কাটছেন কৃষক

রংপুরের বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জে বোরো ধান চাষে তেমন লাভ পাচ্ছেন না কৃষকেরা। তাঁরা বলছেন, চলতি মৌসুমে বোরো ধানের উৎপাদন খরচ ও বর্তমানে এর বাজারদর প্রায় সমান। এতে সংসারের খরচ ও আসন্ন আমন চাষ করা নিয়ে তাঁরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

দুটি উপজেলার অন্তত ৪০ জন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারে প্রতিমণ (২৮ কেজি) বোরো ধানে কৃষকের উৎপাদন খরচ পড়েছে ৬৪৫ টাকা। গত বোরো মৌসুমে তা পড়েছিল ৪৭২ টাকা। এ হিসাবে দেখা যায়, প্রতি মণ বোরো চাষে কৃষকের এবার উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে ১৭৩ টাকা। বর্তমানে বাজারে আগাম জাতের প্রতিমণ বোরো ধান বিক্রি হচ্ছে ৬৭০ টাকা।

ওই কৃষকদের মতে, এবার রাসায়নিক সার কীটনাশক, সেচ খরচ, শ্রমিকের মজুরিসহ অন্যান্য খরচ বেড়ে যাওয়ায় বোরোতে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে।

কৃষকদের তথ্যমতে, চলতি বোরো মৌসুমে প্রতি একরে ধান উৎপাদনে খরচ পড়েছে প্রায় ৫১ হাজার টাকা। এ পরিমাণ জমিতে আগাম জাতের ধান ফলেছে গড়ে ৮০ মণ (প্রতিমণ ২৮ কেজি)। বর্তমান বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে প্রতিমণ ৬৬০-৬৭০ টাকা। এ হিসাবে দেখা যায়, প্রতি একরে ৮০ মণ ধান বিক্রি করে কৃষক পাচ্ছেন ৫৩ হাজার ৬০০ টাকা। এতে বোরো চাষ করে কৃষকের তেমন কিছুই থাকছে না। গত বোরো মৌসুমে প্রতি একরে ধান উৎপাদনে কৃষকের গড়ে উৎপাদন খরচ পড়েছিল ৪০ হাজার টাকা।

বদরগঞ্জের আমরুলবাড়ি গ্রামের কৃষক মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এবার আকাশের পানি হয় নাই। পানি ছেকিয়া (সেচ) আবাদ কইরবার নাগছে। এক বিঘাত (৬০ শতক) ধান আবাদ করি খরচ হইছে ৩১ হাজার ৩০০ টাকা। ধান বেচেয়া পাছি ৩৩ হাজার ১০০ টাকা। এ্যালা কনতো হামরা সংসার চলাই কেমন করি, ফির ধান (আমন) নাগার (লাগানোর) টাকা পামো কোনটে? হামার মরণ ছাড়া বুদ্ধি নাই।’

তারাগঞ্জের ছুটমেনানগর গ্রামের কৃষক আজহারুল ইসলাম এবারে ৫০ শতক জমিতে আগাম জাতের ধান চাষ করে পেয়েছেন ৪০ মণ। টাকার প্রয়োজন হওয়ায় সেই ধান প্রতি মণ ৬৬৫ টাকা দরে বিক্রি করে পেয়েছেন ২৬ হাজার ৬০০ টাকা। কিন্তু ওই ধান উৎপাদনে খরচ হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার টাকা।

তারাগঞ্জের ফকিরপাড়া গ্রামের কৃষক তালেব আলী জানান, এবারে ২৫ শতক জমিতে বোরো চাষে চারা লেগেছে ১ হাজার টাকার, জমি চাষ করতে ১ হাজার ৫০০, চারা রোপণে শ্রমিক খরচ ১ হাজার ২০০, রাসায়নিক সার ২ হাজার, কীটনাশক ১ হাজার ৫০০, নিড়ানী ১ হাজার, সেচ ২ হাজার, কাটা–মাড়াই ২ হাজার ৭০০ টাকা। এতে ব্যয় হয়েছে ১২ হাজার ৯০০ টাকা। ধান পেয়েছেন ২০ মণ। এতে দেখা যায়, প্রতি মণ বোরো ধান উৎপাদন খরচ পড়েছে ৬৪৫ টাকা। ওই কৃষকের মতে, গত বছরে ওই জমিতে বোরো চাষে তাঁর খরচ পড়েছিল ৯ হাজার ৯০০ টাকা। ধান পেয়েছিলেন ২১ মণ। তখন প্রতি মণে খরচ পড়েছিল প্রায় ৪৭২ টাকা।

পোদ্দার পাড়া গ্রামের কৃষক মজিবর রহমান বলেন, ‘শুনেছি, সরকার নাকি ধানের দাম বাড়াইছে। কিন্তুক খাদ্যগুদামোত ধান এ্যালাও কিনা শুরুই করে নাই।’

কৃষকেরা বলছেন, গত বোরো মৌসুমের চেয়ে এবার বোরো চাষে প্রতি একরে ব্যয় বেড়েছে ১০ হাজার টাকারও বেশি। এবার আগাম জাতের বোরো ধান একরে ৮০ মণ পর্যন্ত হয়েছে।

বদরগঞ্জের লালদিঘী গ্রামের কৃষক হারুন অর রশিদ বলেন, ‘সংসারোত ছইল-পইলসহ পাঁচজন খাই। দুই বিঘাত (১২০ শতক) ধান নাগেয়া লাভ হইছে ৩ হাজার ৬০০ টাকা। এ্যালা কনতো হামার কি বাঁচার উপায় আছে? সউগ জিনিসোত আগুন নাগছে। ছইলের ঘরে নেকাপড়ার খরচ, জামা–কাপড়, চিকিৎসা, কারেন্টের বিল, পেত্যেক দিন খাওয়া-দাওয়ার খরচ কোনটে পাই? ফিরতো ধান নাগাইতে অনেক টাকা নাগবে। হামার মরণ ছাড়া উপায় নাই।’

তবে রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল জানান, এবার প্রতি একরে বোরো চাষে কৃষকের খরচ পড়েছে ৫৭ হাজার ৪৯৯ টাকা।

বোরো চাষে কৃষকের উৎপাদন ব্যয় বাড়ায় সরকারও প্রতিকেজি ধানে তিন টাকা বাড়িয়েছে। সব মিলে উৎপাদন ব্যয় কিছু বাড়লেও কৃষকের বোরো চাষে লাভ থাকছে।