Thank you for trying Sticky AMP!!

হেনা দাস ছিলেন একটি প্রজন্মের বাতিঘর

হেনা দাসের শততম জন্মবর্ষ উদ্‌যাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ জেলা শাখা ও নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন লেখক, গবেষক ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক

হেনা দাস ছিলেন আজন্ম সংগ্রামী এক যোদ্ধা। একাধারে শিক্ষা ও সংস্কৃতির জন্য তিনি লড়াই করেছেন। পাশাপাশি নারী মুক্তি, চা-শ্রমিক ও কৃষকদের অধিকার আদায়ে আজীবন তিনি সংগ্রাম করেছেন। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ তাঁর জীবদ্দশায় হওয়া বাঙালির সব মুক্তিসংগ্রামে তিনি সক্রিয় ছিলেন। হেনা দাস ছিলেন একটি প্রজন্মের বাতিঘর।

আজ সোমবার নারায়ণগঞ্জে বিপ্লবী নারীনেত্রী হেনা দাসের জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বক্তারা। সন্ধ্যায় আলী আহাম্মদ চুনকানগর মিলনায়তনে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখা যৌথভাবে প্রয়াত এই নারীনেত্রীর জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠান আয়োজন করে।

এর আগে সকালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কেন্দ্রীয় মহাশ্মশানে হেনা দাসের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, মহিলা পরিষদ, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি শাহ আলম, মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম ও সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

বিকেলে জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানে মহিলা পরিষদের জেলা সভাপতি লক্ষ্মী চক্রবর্তী সভাপতিত্ব করেন। জোটের সাবেক সভাপতি ভবানী শংকর রায়ের সঞ্চালনায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী; মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি, লেখক ও গবেষক মফিদুল হক; সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি; হেনা দাসের মেয়ে দীপা ইসলাম ও নাতনি নবনীতা ইসলাম; নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম; মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি রীনা আহমেদ এবং শিক্ষক সমিতির জেলা প্রতিনিধি হাসিনা পারভীন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

মফিদুল হক তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘হেনা দাস ছিলেন আজন্ম সংগ্রামী এক যোদ্ধা। তিনি শিক্ষা ও সংস্কৃতির জন্য লড়াইয়ের পাশপাশি নারী মুক্তি, চা-শ্রমিক ও কৃষকদের অধিকার আদায়ে আন্দোলন করেছেন। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ আমাদের ইতিহাসের বিভিন্ন পর্বের সংগ্রামের সক্রিয় যোদ্ধা তিনি। নারায়ণগঞ্জের সঙ্গে তাঁর নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। এখানকার বিভিন্ন কর্মে তাঁর স্বাক্ষর ছড়িয়ে আছে।’

হেনা দাসের সঙ্গে নিজের স্মৃতিচারণা করে সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, ‘১৯৮৫ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন যেতে তিনি আমাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন। হেনা দাসের মতো মহীয়সীদের আমি সব সময় অনুসরণ করার চেষ্টা করি। তিনি নারায়ণগঞ্জের গর্ব।’

১৯২৪ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত ভারতের সিলেটে জন্ম গ্রহণ করেন হেনা দাস। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ–অভ্যুত্থান, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামসহ তাঁর জীবদ্দশায় হওয়া সব মুক্তির আন্দোলনে তিনি সক্রিয় ছিলেন। বাংলাদেশের প্রথম শিক্ষা কমিশনেরও অন্যতম সদস্য ছিলেন হেনা দাস। ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টি ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের নেতৃত্বে। ২০০৯ সালের ২০ জুলাই ৮৫ বছর বয়সে তিনি ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

সাংস্কৃতিক কর্মী রফিউর রাব্বি বলেন, ‘হেনা দাস ছিলেন আমাদের একটি প্রজন্মের বাতিঘর। বিনয় ও দৃঢ়তার এক অপূর্ব সমন্বয় ছিল তাঁর চরিত্রে। তাঁর লেখা চার পুরুষের কাহিনিতে যেমন প্রতিফলিত হয়েছে, একটি সময়ের উত্থান পর্ব, আবার অন্য সব গ্রন্থে উঠে এসেছে একটি মুক্ত মানবসমাজ গঠনের সংগ্রামের উপাখ্যান।’

অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক জোটের শিল্পীরা হেনা দাসের স্মরণে সংগীত পরিবেশন করেন। পরে হেনা দাসকে নিয়ে প্রামাণ্য চলচ্চিত্রকার মানজারে হাসিন নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘অভিযাত্রী’ দেখানো হয়।