Thank you for trying Sticky AMP!!

চুয়াডাঙ্গার বাজারে উঠেছে সুস্বাদু হিমসাগর আম

চুয়াডাঙ্গার বাজারে এখন হিমসাগর আমের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। আজ মঙ্গলবার সকালে বড়বাজার ফলপট্টিতে

আঁটি, গুটি ও বোম্বাইয়ের পর গতকাল সোমবার থেকে চুয়াডাঙ্গার বাজারে পাওয়া যাচ্ছে হিমসাগর আম। এ বছর ফলন ভালো হওয়ায় প্রথম দিন থেকেই জেলার হাটবাজারগুলোয় বিপুল পরিমাণ হিমসাগর আম উঠেছে। তবে গত বছরের তুলনায় এবার আমের দাম কম বলে জানিয়েছেন বাগানমালিক ও ব্যবসায়ীরা।

জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের তৈরি করা ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ অনুযায়ী, ১৪ মে থেকে চুয়াডাঙ্গায় আম সংগ্রহ ও বাজারজাত শুরু হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে আঁটি, গুটি ও বোম্বাই আম বেচাকেনার পর দ্বিতীয় পর্যায়ে গতকাল থেকে হিমসাগর আম সংগ্রহ ও বাজারজাত শুরু হয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ে ২৫ মে বাজারে আসবে ক্রেতাদের অন্যতম পছন্দের আম ল্যাংড়া।

চুয়াডাঙ্গার আমের সবচেয়ে বড় মোকাম মাথাভাঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত বড়বাজার ফলপট্টি। আজ মঙ্গলবার সকালে বড়বাজার ফলপট্টি ঘুরে দেখা গেছে, ভোর থেকেই আম আমদানি ও বেচাকেনা শুরু হয়েছে। বাজারে বর্তমানে চার ধরনের আম থাকলেও হিমসাগরের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। বাগানমালিক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুমিষ্ট জাত হিসেবে মৌসুমের শুরুতে বোম্বাই আম প্রথম পাকে। এরপর এসেছে হিমসাগর। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এখনো আমের দাম কম বলে দাবি করছেন তাঁরা।

আজ সকালে বড়বাজারের ফাতেমা ফল ভান্ডারে দেখা যায়, আকার ও মান অনুযায়ী পাইকারি হিসেবে হিমসাগর আম প্রতি মণ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া বোম্বাই আম প্রতি মণ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা দরে এবং আঁটি ও গুটি আম ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

ফাতেমা ফল ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী মো. শুকুর আলী বলেন, গত বছর মৌসুমের শুরুতেই পাইকারি বাজারে প্রতি মণ হিমসাগর ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি মণ বোম্বাই আম ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এদিকে আঁটি ও গুটি আমের দাম ছিল ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকার মধ্যে।

অন্যান্য বছরের তুলনায় এখনো আমের দাম কম বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা

এদিকে জেলা শহরের খুচরা বাজারের দোকানগুলোয় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, প্রতি কেজি হিমসাগর মান অনুযায়ী ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, বোম্বাই ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং আঁটি ও গুটি আম ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাগানমালিকেরা দাবি করছেন, দাম না বাড়লে এবার আম চাষ করে তেমন লাভ হবে না। ১০ বিঘা জমিতে হিমসাগর, ফজলি, থাই ব্যানানা, হাঁড়িভাঙ্গা, আম্রপালি জাতের অন্তত ১ হাজার ২০০টি আমগাছ আছে গোলাম রসুলের। তিনি বলেন, গতকাল সোমবার তাঁর বাগান থেকে আম সংগ্রহ ও বাজারজাত শুরু হয়েছে। তবে গত বছর শুরুতেই প্রতি মণ হিমসাগর আম ২ হাজার টাকা দরে পাইকারি বিক্রি করেছিলেন। পরে ২ হাজার ৮০০ টাকায়ও বিক্রি হয়েছে। এ বছর ভালো মানের আমও ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাগান পরিচর্যায় যে পরিমাণ খরচ, তাতে এ বছর তেমন লাভ হবে না।

চুয়াডাঙ্গা জেলা ফল ও আম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস মহলদার বলেন, এ বছর ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার মেনে আম সংগ্রহ ও বাজারজাত করা হচ্ছে। প্রশাসনের পাশাপাশি সমিতির পক্ষ থেকে বিষয়টি নজরদারি করা হচ্ছে। তবে এখনো বাজারে লিচু, জাম, তালসহ মৌসুমি বিভিন্ন ফল পাওয়া যাচ্ছে। তাই বাজারে আমের চাহিদা এখনো কম।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (খামারবাড়ি) চুয়াডাঙ্গার উপপরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। সারা দেশের চিত্র প্রায় একই। চাহিদা বা ক্রেতার তুলনায় বাজারে বেশি ফল ওঠার কারণে দাম কিছুটা কম। তবে কিছুদিনের মধ্যে বাজার বাড়তির দিকে যাবে। আমের বেচাকেনাও বাড়বে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (খামারবাড়ি) চুয়াডাঙ্গার উপপরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় সব মিলিয়ে ২ হাজার ৪৬৫ হেক্টর জমিতে আমের বাগান আছে। এ বছর সেখানে ২৮ হাজার ২৬৫ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ২৫ মে ল্যাংড়া, ৫ জুন আম্রপালি ও বারি-৩, ২১ জুন ফজলি ও ১ জুলাই আশ্বিনা ও বারি-৪ আম সংগ্রহ এবং বাজারজাত করা হবে।