‘মেম্বার-চেয়ারম্যান হব না, বাহবা নেওয়ার প্রয়োজন নেই’
বর্ষা এলেই নাটোরের বড়াইগ্রাম, লালপুর ও পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার ছয়টি মৌজার দুই হাজার একর ফসলি জমি ও পাঁচ শতাধিক বসতবাড়ি পানিতে তলিয়ে যায়। পানি নামার পথ না থাকায় পুরো এলাকায় তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল খননের জন্য বিনা মূল্যে জমি দান করেছেন বড়াইগ্রামের দৌলতপুর গ্রামের কৃষক শামসুল ইসলাম ও ইসমাইল হোসেন। তাঁদের উদারতায় জলাবদ্ধতার ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেয়েছেন এলাকার অন্তত তিন শ কৃষক। ১৫ অক্টোবর ওই খাল খননের কাজ শেষ হয়েছে। গতকাল শনিবার জমিদাতা কৃষক শামসুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে প্রথম আলো।
বর্তমান সময়ে সামান্য জমি নিয়ে সংঘাতের ঘটনা ঘটে। এক ইঞ্চি জমিও কেউ কাউকে ছাড় দিতে চায় না। এমন অবস্থায় কী মনে করে খাল খননের জন্য জমি দান করলেন?
শামসুল ইসলাম: জলাবদ্ধতার কারণে হাজারো কৃষকের ধান পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছিল। কৃষকেরা পানি বের করতে বিভিন্ন জায়গায় ছোটাছুটি করছিলেন। কিন্তু সরকারি জমি না থাকায় খাল কেটে পানি বের করা সম্ভব হচ্ছিল না। প্রশাসনও নিরুপায় হয়ে পড়েছিল। বিষয়টি আমাকে বোঝানো হলে মনে দাগ কাটে। মানুষের কল্যাণে আমার ৪১ শতক জমির ওপর দিয়ে খাল কাটতে অনুমতি দিলাম।
আগেও প্রতিবছর বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা হতো।
শামসুল ইসলাম: আগে অন্য এক ব্যক্তির নিচু জমি দিয়ে মাঠের পানি নেমে যেত। এবার ওই জমির মালিক মাটি ভরাট করে নিচু জমি উঁচু করেছেন। এতে এবার পানি বের হতে পারছিল না। বিষয়টি জানার পর আমি খাল কাটতে অনুমতি দিই।
হাজারো কৃষকের উপকার করলে মানুষ ভালো বলবে—ভেবেই কি খাল কাটতে ব্যক্তিগত জমি দান করেছেন?
শামসুল ইসলাম: আমাকে কে ভালো বলল কি বলল না, তা নিয়ে আমি ভাবিনি। আমি মানুষের কল্যাণে জমি দান করেছি। আমি তো মেম্বার-চেয়ারম্যান হব না। তাই মানুষের বাহবা নেওয়ার প্রয়োজন আমার নেই।
আপনার অনুপস্থিতিতে আপনার ছেলেমেয়ে বা অন্য ওয়ারিশরা কি ভবিষ্যতে খালের জমি ফিরিয়ে নেবেন?
শামসুল ইসলাম: আমার এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে কোরআনের হাফেজ। মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করেই জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাঁরা আমার অনুপস্থিতিতে জমি ফিরিয়ে নেবে না।
খালের জন্য দেওয়া জমিটি সরকারকে দলিল করে দেবেন কি না?
শামসুল ইসলাম: হ্যাঁ, সরকার যদি খালটি পাকা করতে চায়, তাহলে আমি জমি দলিল করে দিতে প্রস্তুত আছি। যা দিয়েছি, তা ফিরিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছি না বা ভাবব না।
খাল কাটার পর কৃষকেরা কি আপনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন? আপনার কেমন লাগছে?
শামসুল ইসলাম: খাল কাটায় যাঁদের জমির পানি নেমে গেছে, তাঁদের অনেকেই আমার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। রাস্তাঘাটে দেখা হলে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন। তবে আবারও বলছি, আমি ধন্যবাদ পাওয়ার জন্য জমি দান করিনি।
জনস্বার্থে কিছু করার ক্ষেত্রে আপনার কোনো পরামর্শ আছে কি?
শামসুল ইসলাম: যে খালটি কাটা হয়েছে, তা অন্য একটি খাল হয়ে খলসিডাঙ্গা নদীর সঙ্গে মিশেছে। শুনেছি দু-এক জায়গায় ব্যক্তিগত জমি থাকায় পানি নির্বিঘ্নে যেতে পারছে না। তাঁদের প্রতি অনুরোধ, আপনারা পানি নামতে জমি ছেড়ে দেন। তাহলে আমরা সবাই জলাবদ্ধতা থেকে বাঁচতে পারব।