Thank you for trying Sticky AMP!!

মো. শফিকুল ইসলাম

ঝরার সঙ্গে খরা যুক্ত হলে গাছ আম ঝরিয়ে দেয়

এবার এমনিতেই রাজশাহীতে গাছে আম এসেছে কম। যা আছে, তাতে পোকার উপদ্রব। আবার সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে দাবদাহ। এতে ঝরে যাচ্ছে আম। এসব বিষয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলামের সঙ্গে।

প্রশ্ন

আমচাষিরা বলছেন, এবার হপার পোকার উপদ্রব বেশি। কীটনাশক দিয়েও দমন করা কঠিন হয়ে পড়ছে। কেন এমনটি হচ্ছে?

শফিকুল ইসলাম: সাধারণত হপার পোকার উপদ্রব হয়ে থাকে মুকুল অবস্থায় আর আমের গুটি যখন কচি অবস্থায় থাকে তখন। এই পোকা রস চুষে খেলে গুটি আসে না। ছোট গুটির রস চুষে খেলে বা মধুরস ছড়ালে মুকুলও ঝরে যায়। এই অবস্থাকে ‘ঝুল রোগ’ বলা হয়। আবার এই সময় ‘অ্যানথ্রাকনোজ’ রোগও হয়। এতে মুকুল ও গুটি নষ্ট হয়। এ ক্ষেত্রে অনুমোদিত মাত্রায় ছত্রাকনাশক ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। আমের মার্বেল স্টেজের পর এই রোগ আর ক্ষতি করতে পারে না।

প্রশ্ন

চাষিরা বলছেন, বেশির ভাগ গাছে আম নেই। সেই গাছের মালিকেরা এবার বাগানের পরিচর্যাও করছেন না। কীটনাশক ছিটানোর পর আবার সেই বাগানের পোকা এসে আক্রমণ করছে। সেটা ঠেকানো যাচ্ছে না। এমনটি কি হতে পারে?

শফিকুল ইসলাম: এটা হতে পারে। কারণ, পোকা দমনের মূলনীতিই হচ্ছে বাগানের সব গাছে একসঙ্গে ওষুধ ছিটাতে হবে। তিনটা গাছে আম আছে, ওই তিনটাতেই ওষুধ দিলাম আর বাকি দুটিতে দিলাম না; তাহলে হবে না। পাশের বাগানমালিক যদি পরিচর্যা না করেন, তাহলে এককভাবে এই পোকা দমন করা কঠিন হয়ে যায়।

প্রশ্ন

এবারের বাস্তবতা কী?

শফিকুল ইসলাম: এবারের বাস্তবতা চাষিরা যেটা বলছেন, সেটাই।

প্রশ্ন

এই পর্যায়ে আর কোনো পোকার উপদ্রব হতে পারে?

শফিকুল ইসলাম: এখন ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ দেখা দিতে পারে। তবে ফল গবেষণা কেন্দ্রের বাগানে এখনো দেখা যায়নি। অন্য কোথাও হয়েছে, এমন খবরও পাওয়া যায়নি; হলে অনুমোদিত মাত্রায় ওষুধ ছিটালে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

প্রশ্ন

আম পরিপক্ব হলে কি নতুন কোনো পোকার আক্রমণ হতে পারে?

শফিকুল ইসলাম: পরিপক্ব আমে মাছি পোকার আক্রমণ হতে পারে। সে ক্ষেত্রেও অনুমোদিত মাত্রায় ওষুধ প্রয়োগ করলে প্রতিকার পাওয়া যায়।

প্রশ্ন

এবার রাজশাহীতে আম কম হওয়ার কারণ কী?

শফিকুল ইসলাম: আসলে রাজশাহীতে এবার আমগাছে মুকুল যা ছিল, সেই পরিমাণ আম হলেই অনেক হতো। কিন্তু গত ২০ মার্চের বৃষ্টির কারণে পরের মুকুলগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু আগে যেসব গাছে মুকুল এসেছিল, সেগুলোর কোনো ক্ষতি হয়নি। এই বৃষ্টির কারণেই আম কম মনে হচ্ছে। যেমন চাঁপাইনবাবগঞ্জে রাজশাহীর চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। আবার যত দক্ষিণে যাবেন, তত এই বৃষ্টির ক্ষতি কম পাবেন। কারণ, ওই দিকে মুকুল আগে এসেছিল।

প্রশ্ন

ওষুধ ব্যবহার করেও উপকার না পাওয়ার কী কারণ থাকতে পারে?

শফিকুল ইসলাম: বাজারে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ আছে। সব ওষুধের যে কার্যকারিতা আছে, তা–ও বলা যাবে না। আবার অনেকেই অনুমোদিত মাত্রায় ওষুধ দেন না। এসব কারণে ওষুধ ছিটিয়ে ফল পাওয়া যায় না।

প্রশ্ন

প্রাকৃতিকভাবে ঝরে যাওয়া বা ন্যাচারাল ফ্রুট ড্রপস বলতে কী বোঝানো হয়?

শফিকুল ইসলাম: গাছের একটি বোঁটায় অনেকগুলো আম থাকে। এত আম এলে গাছ রাখতে পারে না। সে হয়তো একটি আম রেখে চারটি ঝরিয়ে দেয়। এটাকে আমরা ন্যাচারাল ফ্রুট ড্রপস বলে থাকি। এতে আমের উৎপাদনের কোনো ক্ষতি হয় না। এটা প্রাকৃতিকভাবেই হয়। কিন্তু এর সঙ্গে দাবদাহ যুক্ত হলে আমের বোঁটায় নির্মোচনীয় স্তর তৈরি হয়। এটা হলে আর আম বোঁটায় থাকতে পারে না, ঝরে যায়। অর্থাৎ তখন সব আম ঝরিয়ে দিয়ে নিজেকে বাঁচায়।

প্রশ্ন

এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কী?

শফিকুল ইসলাম: একটাই উপায়, বৃষ্টি। বৃষ্টি হলেই মাটিতে রস ফিরে আসবে। তাহলেই এই অবস্থা কেটে যাবে। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত আমরা চাষিদের সেচ দিতে বলি। সেচ দিলে মাটি রস ধরে রাখতে পারে।

প্রশ্ন

আমের কোয়ালিটি ভালো রাখার জন্য করণীয় কী?

শফিকুল ইসলাম: আমের কোয়ালিটি ভালো করতে হলে শুরু থেকে সুন্দরভাবে হপারকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পুরো বাগান নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। তাহলে আমের গায়ে দাগ পড়বে না। আমের কোয়ালিটি ভালো থাকবে।