চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম যাচ্ছে স্পেন, সুইজারল্যান্ড ও সুইডেনে
আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আম রপ্তানি শুরু হয়েছে। গত কয়েক দিনে নাচোল উপজেলা থেকে আম গেছে স্পেন, সুইজারল্যান্ড ও সুইডেনে। বিষয়টিকে সম্ভাবনার একটি নতুন দ্বার উন্মোচন হিসেবে দেখছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
নাচোলের কেনবোনা এলাকার আমচাষি রফিকুল ইসলামের আমবাগান থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ৮০০ কেজি হাঁড়িভাঙ্গা জাতের আম স্পেনের বার্সেলোনার উদ্দেশে পাঠানো হয়েছে। রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, কৃষি বিভাগের পরামর্শে উত্তম কৃষি পরিচর্যার মাধ্যমে রপ্তানি উপযোগী এ আম উৎপাদন করা হয়েছে। কৃষিপণ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ‘এমবিবি অ্যাগ্রো’র মাধ্যমে এ আম পাঠানো হয়েছে।
এর আগে গত সোমবার এ বাগান থেকে এক হাজার কেজি হাঁড়িভাঙ্গা আম সুইডেনে পাঠানো হয়েছে বলে জানান রফিকুল। এ ছাড়া গত বুধবার ৭১৮ কেজি ব্যানানা ম্যাংগো ও আম্রপালি আম ‘গ্লোবাল ট্রেড লিংক’ নামের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সুইজারল্যান্ডে পাঠানো হয়েছে।
গাছ থেকে আম নামিয়ে প্লাস্টিকের ঝুড়িতে প্যাকিং করে রপ্তানির উদ্দেশ্যে পাঠানোর প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণের জন্য গতকাল রফিকুল ইসলামের বাগানে এসেছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপপরিচালক পলাশ সরকার। সঙ্গে ছিলেন নাচোল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে পুষ্টি ও খাদ্যনিরাপত্তা জোরদারকরণ প্রকল্পের আঞ্চলিক সমন্বয়ক আমিনা খাতুন।
পলাশ সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন’ নামের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একটি প্রকল্প রয়েছে। এ প্রকল্পের সহায়তায় দক্ষ আমচাষি রফিকুল ইসলাম উত্তম কৃষি পরিচর্যার (জিএপি-গ্যাপ) মাধ্যমে তাঁর ৮৫০ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের রপ্তানিযোগ্য আম চাষ করেছেন। তাঁকে হটেক্স ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বিভিন্ন রপ্তানিকারকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তাঁরা রফিকুল ইসলামের বাগান পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আম রপ্তানির জন্য তিনি আরও সুযোগ পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। সামনের বছর তাঁর এ বাগানের সম্পূর্ণ আমই বিদেশে রপ্তানির সুযোগ পাবে বলেও আশা করা হচ্ছে।
Also Read: গরমে আগেই পেকেছে আম, দাম নিয়ে হতাশ চাষিরা
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আম রপ্তানির মাধ্যমে সম্ভাবনার একটি নতুন দ্বার উন্মোচিত হচ্ছে উল্লেখ করে পলাশ সরকার বলেন, শুধু রফিকুল ইসলামই নন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের দক্ষ আমচাষিদের এ প্রকল্পের আওতায় নিয়ে এসে গ্যাপের মাধ্যমে রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমের যে সুখ্যাতি রয়েছে, তা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।
রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এমবিবি অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী সুইডেনপ্রবাসী মো. বদরুদ্দৌজা প্রথম আলোকে বলেন, রফিকুল ইসলামের বাগান থেকে বৃহস্পতিবার যে ৮০০ কেজি হাঁড়িভাঙ্গা আম নেওয়া হয়েছে, তা স্পেনের বার্সেলোনার একটি আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি হবে। এ ছাড়া সোমবার এক হাজার কেজি আম সুইডেনে পাঠানো হয়েছে, তা সেখানকার পাইকারি ফলের মার্কেটে বিক্রি হবে।
মো. বদরুদ্দৌজা আরও বলেন, গত ৩ ও ৪ জুন চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিখ্যাত আম জিআই পণ্য (ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য) ক্ষীরশাপাতি পাঠানো হয়েছে সুইডেন ও যুক্তরাজ্যের লন্ডনে। পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৪০০ কেজি।
নাচোল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, নাচোল হচ্ছে উচ্চ বরেন্দ্রভূমি অঞ্চল। একে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় ‘ঠাঁ ঠাঁ বরিন্দ’। একসময় মনে করা হতো, এই শুষ্ক-রুক্ষ বরেন্দ্রভূমি আম ও অন্যান্য ফল চাষের জন্য অনুপযোগী। কিন্তু গত ১২ বছরে নাচোল ফলমূলে ভরে গেছে। আবাদযোগ্য ২৪ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে প্রায় এক-চতুর্থাংশই ফলের বাগান। এর মধ্যে আমের বাগানই বেশি। এ জমিতে উৎপাদিত ফলের মিষ্টতাও বেশি।
আরও পড়ুন
-
আজিজ আহমেদের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আগেই জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
-
রাষ্ট্রপতির ক্ষমা পেয়ে যেভাবে দেশ ছেড়েছিলেন আজিজ আহমেদের ভাই জোসেফ
-
আজিজ আহমেদের ভাই সন্ত্রাসী জোসেফের সাজা মওকুফ করতে যেভাবে তোড়জোড় হয়েছিল
-
আজিজের ওপর নিষেধাজ্ঞা দুর্নীতির কারণে: মির্জা ফখরুল
-
আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে ইসরায়েল ও হামাসের ওপর যে প্রভাব পড়বে