Thank you for trying Sticky AMP!!

তোমরা চেঞ্জমেকার, তোমরাই পরিবর্তন আনবে

সাভারের ব্র্যাক সিডিএমে ব্র্যাকের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী তারুণ্যের উৎসব ‘কার্নিভ্যাল অব চেঞ্জ ২০২৪’ অনুষ্ঠানে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনে কাজ করা তরুণ-তরুণীদের ‘আমরা নতুন ইয়াং চ্যালেঞ্জারর্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৪’ প্রদান করা হয়

‘নতুন প্রজন্ম নতুনভাবে ভাববে, নতুনভাবে সমস্যার সমাধান দেবে, তারা তাদের উদ্যমী উদ্ভাবনী প্রাণশক্তি দিয়ে সমাজকে পরিবর্তন করবে। সেই পরিবর্তনে ভূমিকা রাখবে চেঞ্জমেকাররা। তোমরা চেঞ্জমেকার, তোমরাই পরিবর্তন আনবে।’

ঢাকার সাভারের ব্র্যাক সিডিএমে ব্র্যাকের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী তারুণ্যের উৎসব ‘কার্নিভ্যাল অব চেঞ্জ ২০২৪’ অনুষ্ঠানে আজ শনিবার এসব কথা বলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ সব সময় মনে করতেন, সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই তাঁর জীবনের লক্ষ্য। সে লক্ষ্য নিয়েই তিনি কাজ করেছেন। ব্র্যাক ‘আমরা নতুন নেটওয়ার্কের’ মাধ্যমে জলবায়ু সংকট মোকাবিলা, শিক্ষা, সচেতনতা, লিঙ্গবৈষম্যের বিষয়ে তরুণদের প্রশিক্ষিত করছে। ব্র্যাক বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে তরুণদের যে ভূমিকা রাখার সুযোগ করে দিচ্ছে, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয় ও কার্যকর। এভাবেই তরুণসমাজ তাদের জ্ঞান, বিজ্ঞানমনস্ক চিন্তা, ডিজিটাল প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে মানবিক সমাজ বিনির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।

আজ শনিবার ব্র্যাক সিডিএমের ওপেন ডেক অডিটরিয়ামে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ইতিবাচক নানা সামাজিক পরিবর্তনে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের (ইয়াং চেঞ্জমেকার) সামাজিক উদ্যোগ ও তাঁদের উৎপাদিত পণ্যগুলো বিভিন্ন স্টলে প্রদর্শিত হয়। বিকেল চারটার দিকে সিডিএম সেন্টারের মূল অডিটরিয়ামে বিভিন্ন উদ্ভাবনীমূলক ধারণার মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনে কাজ করা তরুণদের ‘আমরা নতুন ইয়াং চেঞ্জারর্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৪’ প্রদান করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সূচনা বক্তব্য দেন ব্র্যাকের মাইগ্রেশন অ্যান্ড ইয়ুথ প্ল্যাটফর্মের সহযোগী পরিচালক শরিফুল হাসান। এ বছর ‘আমরা নতুন নেটওয়ার্ক’-এর আওতায় নির্ধারিত কমিউনিটিভিত্তিক প্রকল্পগুলোর মধ্য থেকে উদ্ভাবনীমূলক ধারণা উপস্থাপনের মাধ্যমে শীর্ষ ১০টি প্রকল্প নির্বাচিত হয়। এর মধ্য থেকে এবার অনুষ্ঠানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কাজ করা ‘ওয়েস্ট টু রিসোর্স’, নারীদের দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করা ‘উদ্যমিতা’, জলবায়ু মোকাবিলায় কাজ করা ‘উজ্জীবন’, সব আকারের মানুষের পোশাক নিয়ে কাজ করা ‘মুক্ত’ ও নারীদের আইটি প্রশিক্ষণ বিষয়ে কাজ করা ‘খাদিজা’ প্রকল্পকে ‘ইয়াং চেঞ্জমেকার্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৪’ দেওয়া হয়। পরে রাবা খান ইয়াং চেঞ্জমেকার্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৪ পাওয়া সেরা ৫ প্রকল্পের চেঞ্জমেকারদের সঙ্গে সমাজ বদলের গল্প শুনতে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন।

যা রয়েছে প্রকল্পগুলোতে: ‘ওয়েস্ট টু রিসোর্স’ প্রকল্পটি নিয়ে ছয়জনের একদল তরুণ বরিশালের বঙ্গবন্ধু কলোনিতে টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করছে। কলোনি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে তা থেকে সার উৎপাদন করা হয়। সেই সার ওই এলাকার কৃষকেরা বিনা মূল্যে পাচ্ছেন। অনেকে কিনে নিচ্ছেন।

‘উদ্যমিতা’ প্রকল্পে ময়মনসিংহের বিহারিপল্লিতে নারীদের স্বাবলম্বী করতে কাজ করছেন একদল তরুণ-তরুণী।। নারীদের ‘ব্লক বাটিক কাপড় তৈরির’ জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের উৎপাদিত পণ্যগুলো বাজারজাত করছেন তাঁরা। বিহারিপল্লির অর্ধশত নারীকে এ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। ‘উজ্জীবন’ প্রকল্পে খুলনা অঞ্চলের কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সচেতন করতে এবং তাদের ক্লাইমেট আইডল হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করা হয়েছে। এ ছাড়া এ প্রকল্পে পরিবেশবান্ধব পণ্য, কাগজের তৈরি কলম, কলমদানি প্রভৃতি উৎপাদন করা হয়েছে। আবহাওয়া, জলবায়ু, পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করতে কাজ করছেন এই প্রকল্পের উদ্যোক্তারা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষার্থীর ‘মুক্ত’ প্রকল্পে পোশাক কিনতে গিয়ে বিপণিবিতানগুলোতে প্লাস সাইজের নারীদের বডি শেমিংসহ মেয়েদের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে সে অনুযায়ী পোশাক তৈরি এবং প্লাস-সাইজ পোশাকের প্রচারণায় কাজ করছে।

‘খাদিজা’ প্রকল্পের মধ্য দিয়ে রাজশাহীতে নারীদের আধুনিক আইটি ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে তাদের স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করা হচ্ছে এ প্রকল্পে। প্রকল্পটিতে মাদ্রাসার নারীদের ক্ষমতায়ন করার লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যে প্রশিক্ষণ নিয়ে ২৩ নারী শিক্ষার্থী ফ্রিল্যান্সিং করে নিজেরা আয় করছেন।

সন্ধ্যায় অডিটরিয়ামে ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ ইয়াং চেঞ্জমেকারদের সঙ্গে টাউন হল সেশনে অংশ নেন। তরুণদের ‍উদ্দেশে আসিফ সালেহ্ বলেন, ‘যে কাজটা করবে, মনেপ্রাণে করবে, যাতে অনেক বেশি মানুষের জীবনে প্রভাব রাখতে পারো। তোমার স্বপ্নটা যেন বড় হয়, খাঁটি হয়। আর জোট বেঁধে কাজ করবে। একজন কোনো ভালো কাজে এগিয়ে এলে আরও অনেকে আসে। এ জন্যই আমরা নতুন নেটওয়ার্ক করেছি, যাতে আমরা একজন আরেকজনের পাশে থাকতে পারি।’

পরে একই স্থানে ইয়াং চেঞ্জমেকারদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীতশিল্পী মিনার ও মাশার গান পরিবেশন করেন।
কাল রোববার দ্বিতীয় দিনে জলবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশ-সচেতনতা, ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব, পারস্পরিক সহমর্মিতাসহ নানা সামাজিক বিষয়ে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আলোচনা অনুষ্ঠান হবে।