Thank you for trying Sticky AMP!!

ইসির তালিকাভুক্ত হিডসের সাইনবোর্ড ছাড়া কিছু নেই ময়মনসিংহে

হিডসের কার্যালয়ে সারা বছর তালা ঝোলে। শুধু বছরে দুবার মালিক রুহুল আমিন বাড়ি এলে সেটি কয়েক দিনের জন্য খোলা হয়।

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলায় হিউম্যান ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির কার্যালয়। গতকাল দুপুরে উপজেলার মইষাদিয়া গ্রামে

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষক হিসেবে নিবন্ধনযোগ্য ৬৮টি সংস্থাকে প্রাথমিকভাবে তালিকাভুক্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) ওই তালিকায় নাম আছে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলায় অবস্থিত হিউম্যান ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (হিডস) নামের একটি প্রতিষ্ঠানের। কিন্তু স্থানীয় লোকজন বলছেন, এলাকায় হিডসের কোনো ধরনের কার্যক্রম নেই। নামমাত্র একটি কার্যালয় আর সাইনবোর্ড থাকলেও নেই কোনো কর্মী। সারা বছর কার্যালয়ে তালা ঝুলে থাকে।

মুক্তাগাছা উপজেলা সদর থেকে সাত কিলোমিটার দূরে মইষাদিয়া গ্রামে হিডসের প্রতিষ্ঠাতা রুহুল আমিনের বাড়ি। সেখানেই হিডসের কার্যালয়। গতকাল বুধবার বেলা ১১টায় ওই কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, তালা ঝুলছে। এক ঘণ্টা অবস্থান করেও কাউকে সেখানে যেতে দেখা যায়নি। হিডসের কার্যালয় তথা রুহুল আমিনের বাড়ির কাছে একটা ধানের বীজতলাকে জাল দিয়ে বেড়া দিয়ে রাখা। ওই বীজতলার ভেতর ছোট্ট একটা ঘরের সামনে সাইনবোর্ড ঝোলানো। ওই সাইনবোর্ডটিই হিডসের। সেখানে লেখা আছে হিডসের প্রতিষ্ঠাকাল ১৯৯৪ সাল।

ওই ঘরের বারান্দার সামনে লাকড়ির স্তূপ। সামনে বীজতলা ও আগাছা দেখে বোঝা যায়, ঘরটিতে দীর্ঘদিন ধরে কেউ যায় না। রুহুল আমিনের এক স্বজন লুৎফুর রহমান বাড়িতে থাকলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তিনি পরিবারসহ আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গেছেন বলে জানান প্রতিবেশীরা।

রুহুল আমিনের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে কথা হয় ওই গ্রামের তিনজন মানুষর সঙ্গে। তাঁরা বলেন, এ ঘরটি কখনোই খোলা হয় না। শুধু বছরে দুবার ঈদে রুহুল আমিন বাড়ি এলে সেটি কয়েক দিনের জন্য খোলা হয়। রুহুল ঢাকায় থাকেন।

জামাল উদ্দিন নামে ৭০ বছর বয়সী একজন বলেন, ‘আমরা জানি রুহুল আমিন ঢাকায় থাকেন। তিনি বড় বড় ব্রিজ (সেতু) তৈরির ঠিকাদার। এখানে কোনো এনজিও আছে বলে জানি না।’

আবদুল খালেক নামের একজন বলেন, গ্রামে কোনো বেসরকারি সংস্থার কার্যালয় আছে বলে তিনি জানেন না। তবে অনেক বছর আগে রুহুল আমিন গ্রামে একটি গভীর নলকূপ বসিয়েছিলেন সেচের জন্য। এখন আর সেটি চালু করা হয় না।

রুহুল আমিনের বাড়ির পাশেই রঘুনাথপুর পুরোনো বাজার। সে বাজারে গিয়েও হিডসের কার্যক্রম নিয়ে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে। তাঁরা কেউ হিডসের কোনো কর্মীকে কোনো দিন দেখেননি, হিডসের কাজের কথাও শোনেননি।

জুলহাস উদ্দিন নামের একজন বলেন, ‘এখানে কোনো ধরনের এনজিওর কাজের বিষয় আমরা জানি না।’

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মুঠোফোনে কথা হয় হিডসের প্রতিষ্ঠাতা রুহুল আমিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষকের তালিকায় তাঁর প্রতিষ্ঠানের নাম থাকার বিষয়টি পত্রিকায় দেখেছেন। তিনি এ জন্য কোনো তদবির করেননি। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনেও তাঁর প্রতিষ্ঠান পর্যবেক্ষক হিসেবে ছিল। ঢাকায় এ প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় রয়েছে বলে দাবি করেন রুহুল আমিন।

প্রতিষ্ঠানের কোনো কার্যক্রম ও কর্মী নেই—তাহলে কীভাবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করা হবে, এমন প্রশ্নের উত্তর রুহুল আমিন বলেন, এর আগেও মুক্তাগাছার কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কাজ করেছেন। তখন কিছু লোক নিয়োগ করেছিলেন। এবারও তিনি শুধু মুক্তগাছায় কাজ করবেন। নির্বাচনের আগে এ কাজের জন্য কিছু লোককে নিয়োগ দেবেন।

মুক্তাগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ কে এম লুৎফর রহমান বলেন, মুক্তাগাছায় হিডস নামের কোনো এনজিও নির্বাচন নিয়ে কাজ করে বলে তাঁরা জানা নেই। কিছুদিন আগেও মুক্তাগাছায় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন হয়েছে। সেখানেও এ নামের কোনো প্রতিষ্ঠান কাজ করেনি। বিষয়টি তিনি খোঁজ নিয়ে জানবেন।