Thank you for trying Sticky AMP!!

লোকসান হওয়ায় চা–বাগান উপড়ে দুধ দিয়ে গোসল করলেন চাষি

পঞ্চগড়ে লোকসানের শিকার হয়ে চা বাগান উপড়ে দুধ দিয়ে গোসল করেন কৃষক শাহজালাল। বুধবার দুপুরে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার বেংহারি বনগ্রাম ইউনিয়নের তেপুকুরিয়া এলাকায়

পঞ্চগড়ে চা–পাতার ন্যায্যমূল্য না পেয়ে লোকসানের শিকার এক চাষি চা–বাগান উপড়ে ফেলে দুধ দিয়ে গোসল করেছেন। আজ বুধবার দুপুরে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার বেংহারি বনগ্রাম ইউনিয়নের তেপুকুরিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ওই কৃষকের নাম মো. শাহজালাল (৪৫)। প্রায় এক যুগ আগে তিনি চা–বাগানটি করেছিলেন।

শাহজালাল পঞ্চগড় পৌরসভার উত্তর জালাসী এলাকার বাসিন্দা। এ ছাড়া তিনি একজন গণমাধ্যমকর্মী। প্রায় এক যুগ আগে সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি সাত বিঘা জমিতে চা–বাগান গড়েন। ইতিমধ্যে বাগানের প্রায় চার বিঘার চা–গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে। বাকিটা উপড়ে ফেলতে শ্রমিকেরা কাজ করছেন।

স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা যায়, শাহজালাল প্রায় ১২ বছর আগে বোদা উপজেলার তেপুকুরিয়া এলাকায় সাত বিঘা জমি কিনে একটি চা–বাগান করেন। প্রথম দিকে সেই বাগান থেকে ভালোই লাভ হচ্ছিল তাঁর। তবে কয়েক বছর ধরে কাঁচা চা–পাতার দাম কমে যাওয়ায় তিনিসহ পঞ্চগড়ের সমতল ভূমিতে চা চাষ করা চাষিরা সবাই লোকসানের মুখে পড়েছেন। জেলা প্রশাসন নির্ধারিত প্রতি কেজি কাঁচা চা–পাতার দাম ১৮ টাকা ৫০ পয়সা হলেও চা প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানার মালিকেরা ১২ থেকে ১৫ টাকা দরে কাঁচা পাতা কিনছেন। সেখান থেকে আবার ভেজা, বড় ও খারাপ পাতা থাকার অজুহাতে প্রতি কেজিতে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বাদ দিয়ে চাষিদের দাম দেওয়া হচ্ছে। কোনো কোনো সময় কারখানার মালিকদের কাছে বাকিতেও চা–পাতা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা। এতে জেলার বেশির ভাগ চা–চাষি বিপাকে পড়েছেন।

শাহজালাল বলেন, ‘বাগানে উৎপাদন শুরুর প্রায় তিন থেকে চার বছর লাভের মুখ দেখেছি। এর পর থেকেই কারখানার মালিকদের সিন্ডিকেটের কারণে লোকসান গুনতে হচ্ছে। এই বাগান করতে গিয়ে কয়েক বছরে প্রায় ২০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে আমার। কারখানার মালিকেরা দিন দিন তাঁদের ব্যবসার পরিধি বাড়ালেও চাষিদের শোষণ করছেন।’

আক্ষেপ করে এ চাষি আরও বলেন, ‘প্রতি কেজি কাঁচা চা–পাতা উৎপাদন করতে গিয়ে আমাদের খরচ হয় প্রায় ১৮ টাকা। কিন্তু সেই চা–পাতা বিক্রি করতে গিয়ে কর্তনসহ মিলিয়ে কেজিপ্রতি মাত্র ৮ থেকে ১০ টাকা পাচ্ছি। এভাবে টিকে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের এই দুর্দশার বিষয়ে প্রশাসন বা চা বোর্ড কোনো পদক্ষেপও নিচ্ছে না। মনে হচ্ছে চা চাষ করে পাপ করেছি। এ জন্য এই চা–বাগান তুলে ফেলে দুধ দিয়ে গোসল করলাম।’

দুধ দিয়ে শাহজালালের গোসলের দৃশ্য দেখার জন্য বাগানের শ্রমিকেরা, স্থানীয় চা–চাষি ও স্থানীয় লোকজন আসেন। তাঁরা জানান, এই কষ্টটা শাহজালালের একার নয়। এমন কষ্ট পঞ্চগড়ের বেশির ভাগ চা–চাষির। বেশ কিছুদিন থেকে লোকসান গুনতে গুনতে আর সামলাতে না পেরে শাহজালাল বাগান তুলে ফেলছেন।

চা–চাষি সবদের আলী বলেন, ‘আমার নিজেরও ১২০ বিঘা জমিতে চা–বাগান ছিল। চা–পাতার দাম না পাওয়ায় কয়েক বছর ধরে লোকসান হওয়ায় ইতিমধ্যে আমিও ৫১ বিঘা জামির চা–বাগান উপড়ে ফেলেছি। বাকিটা রাখব কি না, সেই ভাবনায় আছি।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ চা বোর্ডের পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. আমির হোসেন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, পঞ্চগড়ের চায়ের গুণগত মান উন্নয়নে তাঁরা কাজ করছেন। ইতিমধ্যে চাষিদের মধ্যে প্ল্যাকিং মেশিন বিতরণ করা হচ্ছে। যার মাধ্যমে চাষিরা কারখানায় ছোট পাতা সরবরাহ করতে পারবেন এবং কারখানাগুলো ভালো মানের চা উৎপাদন করতে পারবে। ওই চা কর্মকর্তার প্রত্যাশা, দ্রুতই সমতলের চায়ের সুদিন ফিরে আসবে। এ জন্য চাষিদের নানাভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বাগান উপড়ে না ফেলতে চাষিদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।