Thank you for trying Sticky AMP!!

প্রতিমন্ত্রী ও বিদায়ী মেয়রের দ্বন্দ্বে বরিশালের রাজনীতিতে উত্তাপ

জাহিদ ফারুক ও সাদিক আবদুল্লাহ

বরিশালে সিটি নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যে বিভাজন দেখা দিয়েছিল, সংসদ নির্বাচনে তা চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-৫ (সদর) আসনে দলীয় মনোনয়ন চেয়েও পাননি মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বিদায়ী মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক।

এমতাবস্থায় সাদিক আবদুল্লাহকে স্বতন্ত্র প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগ। সিটি নির্বাচন ঘিরে বরিশালের রাজনীতিতে যে উত্তাপ ছড়িয়েছিল, সাদিক আবদুল্লাহর প্রতিদ্বন্দ্বিতার সিদ্ধান্ত সেই উত্তাপে ঘি ঢেলেছে।

Also Read: বরিশালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন সাদিক আবদুল্লাহ

নির্বাচনের ডামাডোলের মধ্যে গত বুধবার এক ‘শান্তি’ সমাবেশে দলীয় প্রার্থী জাহিদ ফারুক ও সিটি নির্বাচন নিয়ে ‘বিরূপ’ মন্তব্য করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর। এ ঘটনায় দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ তুলে জাহাঙ্গীরের বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন জাহিদ ফারুক ও সিটি মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহর অনুসারী নেতা-কর্মীরা।

আজ শনিবার জাহাঙ্গীরের বহিষ্কারের দাবিতে নগরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন জাহিদ ফারুকের অনুসারী নেতা-কর্মীরা। নগরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত সমাবেশে নগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আলজালুল করিমের সভাপতিত্বে নগর আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা লস্কর নুরুল হক, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক নিজামুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হক খান প্রমুখ বক্তব্য দেন।

Also Read: সাদিক আবদুল্লাহ এবারও নৌকা পাননি, হতাশ কর্মী-সমর্থকেরা

দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ তুলে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীরের বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে জাহিদ ফারুকপন্থীদের বিক্ষোভ সমাবেশ। শনিবার নগরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে

সমাবেশে বক্তারা বলেন, শান্তি সমাবেশে এ কে এম জাহাঙ্গীর সিটি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। দলের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির পদে থেকে তিনি যে কথা বলেছেন, তা দলের নীতি-আদর্শবিরোধী। দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে তিনি এমন মন্তব্য করতে পারেন না। এ জন্য তাঁকে মহানগর আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা উচিত।

জানতে চাইলে এ কে এম জাহাঙ্গীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচন শুরু হওয়ার আগেই তাঁরা দিশাহারা হয়ে গেছেন। তাঁরা যা বলেছেন, সেটা আমি শুনেছি। তবে এই মুহূর্তে আমি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। উপযুক্ত সময়ে কথা বলব।’

কী বলেছিলেন এ কে এম জাহাঙ্গীর

২৯ নভেম্বর দুপুরে ‘শান্তি’ সমাবেশে সিটি নির্বাচনকে ইঙ্গিত করে এ কে এম জাহাঙ্গীর বলেছিলেন, ‘সিটি নির্বাচনে আমাদের গাধা বানিয়েছে। আমাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করেছে। কিন্তু আমরা কোনো বহিরাগতকে আর সুযোগ দেব না। ওই নির্বাচনের মতো খালি মাঠে গোল দিতে দেব না।’ তিনি বলেন, ‘ফসল রোপণ করি আমরা। রোপণ থেকে পাকা পর্যন্ত আমরা পরিশ্রম করে যাই। আর সেই ফসল আরেকজন এসে কেটে নিয়ে ঘরে তুলবে, আমরা হতে দেব না। আমাদের কষ্টার্জিত ফসল আমাদের ঘরে রাখতে চাই। এবার খেলা হবে। প্রশাসন ব্যবহার করে বাক্স ভরবেন, সেই সুযোগ নেই।’

জাহিদ ফারুককে ইঙ্গিত করে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘বিরোধী দলের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামে বরিশালে থাকা সত্ত্বেও তাঁকে আমরা কোনো দিন পাইনি। নির্বাচিত হয়ে কোনো মানুষের কাছে যাননি। আমরা এই লোককে আর চাই না। যিনি জনগণের সঙ্গে থাকেন, জনগণের সঙ্গে ঘুমান, জনগণের সুখ-দুঃখে পাশে থাকেন, সেই সাদিক আবদুল্লাহকে আমরা চাই।’

Also Read: মেয়াদ শেষ হওয়ার চার দিন আগেই দায়িত্ব ছাড়লেন বরিশালের মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ

এ কে এম জাহাঙ্গীরের এই বক্তব্যে জাহিদ ফারুক ও খায়ের আবদুল্লাহর সমর্থক নেতা-কর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদও করেন। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ প্রতিবাদ করেননি। আজ অনেকটা আকস্মিকভাবেই জাহাঙ্গীরের বক্তব্যের জেরে বিক্ষোভ সমাবেশ করে বহিষ্কারের দাবি জানানো হয়।

জাহিদ ফারুকের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মীর আমিন উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, দলের একটি শীর্ষ পদে থেকে জাহাঙ্গীর যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা অন্তর্ঘাতমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এটা দলের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অবস্থান। তিনি গুরুতর শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন।

Also Read: বরিশালে দুটি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন মেনন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন সাদিক ও পংকজ

বরিশাল-৫ আসনে জাহিদ ফারুক আবার দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় নেতা–কর্মীরা তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। গত মঙ্গলবার বরিশাল জিলা স্কুল মোড়ে

আমিন উদ্দিন পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, তিনি (জাহাঙ্গীর) কোথায় ধান বুনেছেন? সবাইকে তিনি বহিরাগত বলছেন, কিন্তু তাঁর ভিটামাটি কোথায়? কোন আন্দোলনে তিনি কী ভূমিকা রেখেছেন, বরিশালবাসী জানে।

কারও নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, জাহাঙ্গীর একটি পরিবারের ব্যক্তিক বন্দনা করে দলে পদ পেয়েছেন। এ জন্যই প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করার দুঃসাহস দেখাতে পারছেন। সিটি নির্বাচনের সময়েও তিনি ইভিএমের কথা তুলে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে মতামত দিয়েছিলেন। অন্তর্ঘাতমূলক বক্তব্য দেওয়ার জন্য তাঁকে বহিষ্কারের পাশাপাশি আইনের আওতায় আনা উচিত।

সাদিকের স্বতন্ত্র নির্বাচনের সিদ্ধান্ত

সিটি নির্বাচনের পর সংসদ নির্বাচনেও সাদিক আবদুল্লাহ দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ায় হতাশ হন তাঁর অনুসারী নেতা-কর্মীরা। পরে তাঁকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত নেয় মহানগর আওয়ামী লীগ। এমন সিদ্ধান্তের পর ২৯ নভেম্বর সাদিক আবদুল্লাহর পক্ষে নেতারা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তাঁর মনোনয়নপত্র জমা দেন। ওই দিন দুপুরে নগরে শান্তি সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ। এ উপলক্ষে সাদিক আবদুল্লাহর নেতৃত্বে একটি বড় শোডাউন দেওয়া হয়।

সাদিকের প্রার্থিতার বিষয়ে এ কে এম জাহাঙ্গীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাদিক আবদুল্লাহকে সদর আসনে প্রার্থী করার বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যেহেতু দলীয়ভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি শিথিল করে দেওয়া হয়েছে, সে কারণে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

Also Read: সাদিক আবদুল্লাহ ও শাম্মী আহম্মেদের মনোনয়ন চাওয়া ঘিরে বরিশাল আওয়ামী লীগে উত্তাপ

স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সাদিক আব্দুল্লাহর পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন তাঁর অনুসারী মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা। গত মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে

সাদিক আবদুল্লাহ সিটি নির্বাচনে তাঁর ছোট চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে পাননি। সাদিকের কর্মী-সমর্থকেরা মনে করেন, সিটি নির্বাচনে খায়ের আবদুল্লাহর দলীয় মনোনয়ন থেকে শুরু করে তাঁকে জয়ী করার পেছনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। মেয়রের পদ থেকে সরার পর মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটিতে নিজের লোকজন বসিয়ে রাজনীতির মাঠ গুছিয়ে নিয়েছিলেন সাদিক। সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ার পর তিনি মাঠ ধরে রাখতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন। তাঁর সঙ্গে আছেন মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।

অন্যদিকে জাহিদ ফারুকের সঙ্গে আছেন সিটি মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ও সাদিকের প্রভাবে আওয়ামী লীগের কমিটি থেকে ছিটকে পড়া নেতা-কর্মীরা।