Thank you for trying Sticky AMP!!

ঝিলি বেগম নির্বাক, মালাঞ্চা বেগমের কান্না থামছে না

সন্তানকে হারিয়ে নির্বাক শাকিল মণ্ডলের মা ঝিলি বেগম। মঙ্গলবার সকালে জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলায় দুরমুঠ ইউনিয়নের রুখনাইপাড়া গ্রামে

বাড়ির উঠানে শাকিল মণ্ডলকে কবর দেওয়া হয়েছে। পাশে কয়েকজন স্বজন কবরের বেড়া তৈরি করছেন। কবরের পাশে চেয়ারে বসা মা ঝিলি বেগম। তাঁর পাশে প্রতিবেশী কয়েকজন নারী। কোনো কথা বলছেন না ঝিলি বেগম। তিনি ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে সন্তানের কবরের দিকে। সংসারের হাল ধরতে আর কয়েক দিন পরই সৌদি আরব যাওয়ার কথা ছিল শাকিলের। সে সন্তানকে হারিয়ে নির্বাক ঝিলি বেগম।

পাশের বাড়িতে মো. মজিবুর রহমানের মা মালাঞ্চা বেগম কাঁদছেন। তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন স্বজনেরা। তবে কোনো কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। ভাই হারানোর আকস্মিকতায় বাক্‌রুদ্ধ হয়ে গেছেন বড় ভাই শাজাহান শেখ।

গত সোমবার দুপুরে জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলায় দুরমুঠ ইউনিয়নের রুখনাইপাড়া এলাকায় কানে হেডফোন লাগিয়ে দুই বন্ধু রেললাইনে বসে গান শুনছিলেন। জামালপুর থেকে দেওয়ানগঞ্জ স্টেশনগামী একটি কমিউটার ট্রেনে তাঁরা কাটা পড়ে মারা যান। ট্রেনে কাটা পড়ে একসঙ্গে দুই তরুণের মৃত্যুতে গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সোমবার রাতেই তাঁদের দুজনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।

নিহত দুজন হলেন রুখনাইপাড়া গ্রামের শাহাবুদ্দিনের ছেলে শাকিল মণ্ডল (১৮) ও শহিদ মিয়ার ছেলে মো. মজিবুর রহমান (১৭)। সম্প্রতি ইসলামপুর সরকারি কলেজ থেকে শাকিল এইচএসসি পাস করেছেন। শাকিল ও মজিবুর রহমান একে-অপরের আত্মীয় হওয়ার পাশাপাশি ছিলেন বন্ধু।  

তিন ভাই-বোনের মধ্যে শাকিল ছিলেন বড়। শাকিলের চাচাতো দুলাভাই মাঈনুদ্দিন হাসান বলেন, শাকিল অনেক মেধাবী ছাত্র ছিলেন। গত বছর এইচএসসি পাস করেছেন। সংসারের হাল ধরতে এই মাসের শেষের দিকে সৌদি আরবে যাওয়ার কথা ছিল। বিদেশে যাওয়ার সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, তিনি আর নেই।

মাঈনুদ্দিন হাসান আরও বলেন, এই এলাকায় বিভিন্ন সময় ট্রেনে কাটা পড়ে কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে রেললাইনে বসে গান শোনা বা আড্ডা দেওয়ার বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির দরকার আছে। যেসব গ্রামের মধ্য দিয়ে রেললাইন রয়েছে, সেই সব গ্রাম চিহ্নিত করে, ওই সব গ্রামে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য কাজ করা হলে, এভাবে হয়তো মৃত্যু না-ও ঘটতে পারে।

বিলাপ থামছে না মজিবুর রহমানের মা মালাঞ্চা বেগমের (গোলাপী শাল জড়ানো)

আর মো. মজিবুর রহমান রাজমিস্ত্রির কাজ করত। আগে সে ঢাকায় তার বড় ভাই শাজাহানের কাছে থাকত। কাজ করত ঢাকার একটি কাগজ কারখানায়। দেড় মাস আগে ওই কারখানায় আগুন লাগে। এরপর গ্রামে চলে আসে। বাবা-মায়ের দেখাশোনা করত মজিবুরই।

মজিবুরের মা বলেন, ‘আমার ছেলেটা খুব ভালো ছিল। পরিশ্রম করে, যা রোজগার করত, সেই টাকা আমার হাতে তুলে দিত। গত পরশু রাতে আমার হাতে এক হাজার টাকা দিয়ে বলল, “মা, তুমি এই টাকা দিয়ে বাজার কইরো।” আমার এই সন্তান এখন কবরে।’

মজিবুরের চাচা মো. সোহরাব আলী বলেন, শাকিল ও মজিবুর দুজন খুব ভালো ছেলে ছিলেন। তাঁরা আগে কখনো রেললাইনে এভাবে বসে আড্ডা দেননি। হঠাৎ সোমবার দুজনে একসঙ্গে কানে হেডফোন লাগিয়ে রেললাইনে বসে গান অথবা অন্য কিছু করছিলেন। মৃত্যুর পর মজিবুরের কানে হেডফোন পাওয়া গেছে। দুজনের এমন মৃত্যুতে গ্রামবাসী স্তব্ধ।

জামালপুর রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, দুজন নিহতের ঘটনায় থানায় অপমৃত্যুর মামলা করা হয়েছে। রেললাইনে বসে আড্ডা দেওয়া, কানে হেডফোন লাগিয়ে লাইনের ওপর দিয়ে চলাচল না করতে নির্বাচনের আগে বিভিন্ন এলাকায় সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কার্যক্রম চালানো হয়েছিল। কিন্তু নির্বাচনের কারণে সেটা এখন বন্ধ হয়ে গেছে। তবে এ ধরনের কার্যক্রম আবার শুরু করা হবে।

Also Read: রেললাইনে বসে হেডফোনে গান শুনছিলেন দুই বন্ধু, ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যু

জামালপুরের নাগরিক কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, দুই বন্ধুর মৃত্যুর বিষয়টি অনেকেই বলছেন, তাঁরা রেললাইনে ওপর পাবজি গেম খেলছিলেন, অনেকেই আবার বলছেন, গান শুনছিলেন। যেটাই হক, তাঁদের কানে হেডফোন ছিল। যে কারণে তাঁরা ট্রেনের হুইসেল শুনতে পাননি। ফলে অকালে তাঁদের মৃত্যুবরণ করতে হয়েছে। ফলে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের উচিত বিভিন্ন এলাকায় রেললাইনের ওপর দিয়ে চলাচলের সময় যাতে কানে হেডফোন না থাকে বা লাইনের ওপর বসে আড্ডা না দেওয়া হয়। সেই বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রচার-প্রচারণা চালানো উচিত ।