Thank you for trying Sticky AMP!!

৩৮ শতাংশ বাড়ছে পানির দাম

ছয় মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার বাড়ছে পানির দাম। চলতি বছরের জানুয়ারিতে একবার বেড়েছিল।

বাজারে চাল, তেল, সবজি, মাছসহ প্রায় সব নিত্যপণ্যের দামই বাড়তি। বৈশ্বিক সংকটের কারণে বেড়েছে গ্যাস ও বিদ্যুতের দামও। এবার ছয় মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার বাড়ছে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির দাম; এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে একবার বাড়ানো হয়েছিল। এখন ওয়াসা কর্তৃপক্ষ আবাসিকে প্রতি ইউনিটে (এক হাজার লিটার) ৫ টাকা ও বাণিজ্যিকে ৫ টাকা ১৮ পয়সা বাড়াচ্ছে।

অর্থাৎ প্রতি ইউনিটের জন্য আবাসিক গ্রাহকের পানির দাম ১৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৮ টাকা ও বাণিজ্যিকে ৩১ টাকা ৮২ পয়সা থেকে ৩৭ টাকা করা হচ্ছে। সেই হিসাবে আবাসিকে পানির দাম এক লাফে বাড়ল ৩৮ শতাংশ আর বাণিজ্যিকে ১৬ শতাংশ। এটি আগামী সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হওয়ার কথা।

ওয়াসার কর্মকর্তারা জানান, আইন অনুযায়ী প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে পানির দাম বাড়াতে পারে কর্তৃপক্ষ। এ ক্ষেত্রে বোর্ড সদস্যদের অনুমোদন নিতে হয়। আর ৫ শতাংশের বেশি বাড়াতে চাইলে নিতে হয় সরকারের অনুমোদন। সম্প্রতি আবাসিকে পানির দাম ১৮ টাকা ও বাণিজ্যিকে ৫০ টাকা করার জন্য সরকারের কাছে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ অনুমোদন চায়। সরকার আবাসিকে পানির দাম ১৮ টাকাই রেখেছে। আর বাণিজ্যিকে দাম ধরেছে ৩৭ টাকা। সম্প্রতি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির দাম বাড়ার বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে।

পানির দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, পানির উৎপাদন খরচ এখন অনেক বেশি পড়ছে। আবার আগামী বছর থেকে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে হবে। ফলে খরচ আরও বেড়ে যাচ্ছে। তাই পানির দাম বাড়াতে হচ্ছে। তবে চেষ্টা থাকবে বিভিন্ন খাতের খরচ কমাতে। এ ছাড়া হিউম্যান ও সিস্টেম লসও কমানো হবে।

ওয়াসা সূত্র জানায়, বর্তমানে ওয়াসার আবাসিক গ্রাহক সংযোগ আছে ৭৮ হাজার ৫৪২টি ও বাণিজ্যিক সংযোগ সংখ্যা ৭ হাজার ৭৬৭টি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ১৩ বছরে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির দাম বেড়েছে ১২ বার। মাঝে গত বছর করোনা মহামারির কারণে ওয়াসা পানির দাম বাড়ায়নি।

ওয়াসার হিসাবে, ২০০৯ সালে আবাসিকে প্রতি ইউনিট পানির দাম ছিল ৫ টাকা ৪১ পয়সা, বাণিজ্যিকে ১৫ টাকা ৩২ পয়সা। পাঁচ বছর পর অর্থাৎ ২০১৪ সালে আবাসিকে পানির দাম হয় ৬ টাকা ৯০ পয়সা, বাণিজ্যিকে ১৯ টাকা ৫৯ পয়সা। আর ২০২০ সালে এসে আবাসিকে পানির দাম দাঁড়ায় ১২ টাকা ৪০ পয়সা আর বাণিজ্যিকে ৩০ টাকা ৩০ পয়সা। এটি চলতি বছরের (২০২২) জানুয়ারিতে করা হয় আবাসিকে ১৩ টাকা ও বাণিজ্যিকে ৩১ টাকা ৮২ পয়সা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওয়াসার দুই কর্মকর্তা বলেন, আগে ওয়াসা বেশির ভাগ পানিই সরবরাহ করত গভীর নলকূপ থেকে। এখন পরিবেশের সুরক্ষায় গভীর নলকূপ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। বেশ কিছু নলকূপ ইতিমধ্যে বন্ধও হয়েছে। এখন বেশির ভাগ পানিই সরবরাহ করা হচ্ছে নদী থেকে। এসব পানি প্রক্রিয়াজাত করতে অনেক খরচ পড়ে যাচ্ছে। ওই কর্মকর্তারা বলেন, বড় বড় বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ এখন চলছে। এসব প্রকল্প হচ্ছে ঋণের টাকায়। ঋণের টাকা পরিশোধের বিষয়ও রয়েছে। এ কারণে পানির প্রকৃত উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে বিক্রয়মূল্যের সামঞ্জস্য রাখা ও ঋণ পরিশোধে জটিলতা এড়াতে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছিল। সরকার সব দিক বিবেচনা করে অনুমোদন দিয়েছে।

তবে ওয়াসার পানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন। তিনি বলেন, ঋণ করে প্রকল্প নেওয়ার আগে গ্রাহকদের সঙ্গে আলোচনা করেনি ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। এখন ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পানির দাম বাড়াচ্ছে। আগে সিস্টেম লস ও অন্যান্য খরচ কমানো উচিত ওয়াসার।