Thank you for trying Sticky AMP!!

বেশিরভাগ খেতের ধান পেকে যাওয়ায় হাসি ফুটেছে কাউয়াদীঘি হাওরাঞ্চলের কৃষকদের মুখে। সম্প্রতি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার রসুলপুরের পানিধার বন্দে

হাওরের মাঠে মাঠে হাসছে ‘আন্দোলনের’ সোনালী ফসল

পানিতে ডুবেছিল খেত। আমন ধান রোপণের সময় ফুরিয়ে যাচ্ছিল। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ছিলেন চাষিরা। উপায় না দেখে আন্দোলনে নামেন তাঁরা। স্মারকলিপি প্রদান, মানববন্ধন, মিছিল-সমাবেশ করেন। একপর্যায়ে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সেচের ব্যবস্থা হয়। খেত থেকে দূর হয় জলাবদ্ধতা। স্বস্তি ফেরে চাষিদের মনে। এরপর ১ হাজার ৩০০ হেক্টরে রোপণ করা হয় আমন ধানের চারা।

সেই আন্দোলনের সোনালি ফসল এখন হাসছে মৌলভীবাজারে মনু নদ সেচ প্রকল্পের আওতায় মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কাউয়াদীঘি ও রাজনগর হাওরাঞ্চলে। হাসি ফুটেছে চাষিদের মুখেও। কোথাও পাকা ধান কাটা শুরু হয়েছে; কোথাও আবার ধানে সোনালি আভা এসেছে। চলছে ধানের খলা (ধান শুকানোর স্থান) তৈরিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি।

মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বড়কাঁপন গ্রামের কৃষক ইন্তাজ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ছয় কিয়ার (বিঘা) জায়গায় ধান ফলাইছি। ধান ভালাই অইছে। এর মধ্যে দেড় কিয়ার জায়গার ধান কাটছি। বাকিডা আরও ৮ থেকে ১০ দিন বাদে কাটমু। ধান রোয়ার (রোপণ) সময় পানি থাকায় নিন জমিত (নিচু জমিতে) ধান লাগাইতাম পারছি না। আন্দোলনের পর সেচ দেওয়ায় পানি কমায় কিছু জায়গাত ধান লাগাইতাম পারছিলাম। আর না অইলে এখন ধান তো স্বপ্নেও দেখতাম না।’

দশহাল গ্রামের নাদির মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবার বাতে বাতে (সময়ে সময়ে) বৃষ্টি অইছে (হয়েছে)। ধান বাম্পার অইছে।’

কাউয়াদীঘি হাওরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সদর উপজেলার একাটুনা, বড়কাঁপন, বুড়িকোনা, বিরইমাদসহ অনেক মাঠের ধান পেকে গেছে। কোথাও কোথাও মাঠ থেকে কেটে নেওয়া হয়েছে ধান। কোনো কোনো খেতে রয়েছে আধা পাকা ধান। এক থেকে দেড় সপ্তাহের মধ্যে সেসব ধান পাকবে। এসব খেতে পানি থাকায় আমনের চারা রোপণের বিষয়টি অনিশ্চিত ছিল। পানি সেচের পর চারা রোপণে দেরি হওয়ায় ধান পাকতে সময় লাগছে।

হাওর রক্ষা সংগ্রাম কমিটি ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ–সংকটে মনু নদ সেচ প্রকল্পের কাশিমপুরে পাম্প হাউস নিরবচ্ছিন্নভাবে চালাতে পারছিল না পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো-যান্ত্রিক)। কৃষকদের দাবি ছিল পাম্প হাউস ২৪ ঘণ্টা চালু রেখে ফসলি জমি থেকে পানি সরানোর ব্যবস্থা করা। এ দাবিতে হাওর রক্ষা সংগ্রাম কমিটির ব্যানারে স্মারকলিপি প্রদান, মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন কাউয়াদীঘি হাওরাঞ্চলের চাষিরা।

অনেক খেতে রয়েছে আধাপাকা ধান, যা পাকতে আরও সাত থেকে ১০ দিন লাগবে

এদিকে কৃষি ও কৃষক রক্ষা কমিটির ব্যানারে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে এসে কৃষক সমাবেশ ও জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন রাজনগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষক। এর পরিপ্রেক্ষিতে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো), পাউবো ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাশিমপুর পাম্প হাউসে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়।

পাম্প হাউসের আটটি পাম্প দিয়ে সেচ কার্যক্রম চালানো হয়। খেতে জমে থাকা পানি কমতে থাকে। কৃষকেরা আমনের চারা রোপণে নেমে পড়েন। অনেকের হালি চারা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তাঁরা বিভিন্ন স্থান থেকে তা সংগ্রহ করেন। সেই চারাই এখন সোনালি ধান হয়ে দুলছে হাওরাঞ্চলের মাঠে মাঠে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের উপপরিচালক সামছুদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাউয়াদীঘি হাওরাঞ্চলে সেচের পর ১ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আমনের চাষ হয়েছে। ফলনও ভালো হয়েছে। হেক্টর প্রতি পাঁচ থেকে ছয় মেট্রিক টন ধান পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। সারা জেলায় এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আমন ধানের আবাদ হয়েছে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, জেলায় এবার ১ লাখ ১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ৪০০ হেক্টর।

রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁওয়ের কানিকিয়ারি গ্রামের মনু মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘সার, ওষুধ দিতে দিতে বেতক্ত (বিরক্ত)। পরিশ্রম করছি। কিন্তু ধান ভালা অওয়ায় এখন কষ্ট নাই। ধান বাইর অই গেছে। ১০ দিন পর কাটা যাইব।’

হাওর রক্ষা সংগ্রাম কমিটি মৌলভীবাজার সদর উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাজন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বছর লোডশেডিংয়ে পাম্প নিয়মিত চালানো হচ্ছিল না। জলাবদ্ধতায় আমনের আবাদ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। কৃষকদের নিয়ে আন্দোলনে নামা হলে পাম্প চালু রেখে খেতে জমে থাকা পানি সরানো হয়েছে। এতে কিছুটা দেরিতে হলেও কৃষকেরা আমনের আবাদ করতে পেরেছেন। ফলনও যথেষ্ট ভালো হয়েছে।’