Thank you for trying Sticky AMP!!

অবরোধে বাসশ্রমিকদের দুর্দশা, সুদিন অটোরিকশাচালকদের

অবরোধে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভরসা হয়ে উঠেছে যাত্রীদের। গতকাল পাবনার বেড়া বাসস্ট্যান্ডে

অবরোধের কারণে পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার প্রায় দুই হাজার বাস-ট্রাকের শ্রমিক দুর্দশায় পড়েছেন। গাড়ি না চলায় গত দুই সপ্তাহের মধ্যে ৮ থেকে ১০ দিনই তাঁরা কোনো উপার্জন করতে পারেননি। এ অবস্থায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তাঁরা।

তবে উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও নছিমন-করিমনের মালিক ও শ্রমিকদের ক্ষেত্রে। অবরোধের কারণে যাতায়াতে তিন চাকার যানবাহনই এখন মানুষের প্রধান ভরসা। মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এখন এসব যানবাহন। চালকেরা ভাড়াও আদায় করছেন বেশি। ফলে তিন চাকার যানবাহনের মালিক-শ্রমিকদের উপার্জন আগের চেয়ে বেড়েছে।

জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের কর্মকর্তারা জানান, বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলায় দুই হাজারের বেশি বৈধ পরিবহনশ্রমিক রয়েছেন। বাস-ট্রাক চললে তাঁরা মজুরি পান; না চললে বন্ধ হয়ে যায় উপার্জন। বিএনপির গত ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের আগের দিন থেকেই দুই উপজেলায় গাড়ি চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। পরে একের পর এক অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা আসায় বাস-ট্রাক চলাচল এখন প্রায় বন্ধ। মাঝখানে বিরতি থাকলেও যাত্রী কম হওয়ায় ও মালিকেরা নিরাপত্তার কারণে গাড়ি ছেড়েছেন কম। ফলে গত দুই সপ্তাহের মধ্যে ৮ থেকে ১০ দিন ধরে বাস-ট্রাকের শ্রমিকেরা কর্মহীন অবস্থায় রয়েছেন। এ অবস্থায় খেয়ে না–খেয়ে কোনোমতে দিন কাটছে তাঁদের।

Also Read: বিএনপির হরতাল-অবরোধে ৯২ গাড়িতে আগুন: ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি

বেড়া বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে কথা হয় রাজশাহীগামী বাসের টিকিট প্রদানকারী মো. বাবুর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘টিকিট কাউন্টারে কাজ কইর‌্যা দৈনিক ৫০০ টাকার মতো আয় করত্যাম। অথচ ৮-১০ দিন ধইর‌্যা কুনু আয় নাই। অবরোধ আমাগরে পথে বসায়া দিছে। বাড়িতে এখন চুলা জ্বালানোই মুশকিল।’

বেড়া থেকে ঢাকায় চলাচলকারী বাস আলহামরা পরিবহনের চালকের সহকারী বাকি বিল্লাহ বলেন, ‘বাজারে সব জিনিসের দাম বেশি হওয়ায় এমনিতেই কষ্টে সংসার চালাত্যাম। এর ওপর প্রায় ১০ দিন ধইর‌্যা আয়-উপার্জন সব বন্ধ। এ অবস্থায় খায়া না–খায়া দিন কাটতেছে।’ বেড়া বাসস্ট্যান্ডে কর্মরত বাসের চেইন মাস্টার (সময় নিয়ন্ত্রণকারী) সানিবর হোসেন বলেন, বেড়া-সাঁথিয়ায় প্রায় দুই হাজার পরিবহনশ্রমিক রয়েছেন। অবরোধে বাস-ট্রাক না চলায় তাঁদের বেশির ভাগই মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন।

এদিকে বেড়া-সাঁথিয়ায় বাস না চলায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা হয়ে উঠেছে প্রধান গণপরিবহন। অবরোধের আগে মহাসড়কে এগুলো চলাচল করলে পুলিশ বাধা দিত। এখন কিছুই বলছে না। এগুলোর মাধ্যমে লোকজন শুধু কাছের এলাকাতেই নয়, দূরেও যাতায়াত করছে।

Also Read: রবি ও সোমবারও অবরোধের ঘোষণা বিএনপির

সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অটোরিকশার চালক ও মালিকদের এখন সব দিক দিয়েই ‘পোয়া বারো’। কারণ এখন অনেক যাত্রী। ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া মহাসড়কে চলাচলও করা যাচ্ছে নির্বিঘ্নে। এমনিতে বেড়া থেকে পাবনায় যাওয়ার ভাড়া যাত্রীপ্রতি ১০০ টাকা হলেও এখন ১২০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। বেড়া থেকে কাশীনাথপুরে যাওয়ার ভাড়া ২৫ টাকার জায়গায় ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, শাহজাদপুরে যাওয়ার ভাড়া ২০ টাকার জায়গায় ৩০ টাকা, কাজীরহাটে যাওয়ার ভাড়া ৫০ টাকার জায়গায় ৭০ থেকে ৭৫ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া নছিমন-করিমনে মালামাল পরিবহনেও ভাড়া বাড়ানো হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন।

বেড়া থেকে কাশীনাথপুরের মধ্যে চলাচলকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক রেজাউল ইসলাম বলেন, অবরোধের মধ্যে এই পথে তাঁরা ৫ টাকা ভাড়া বাড়িয়ে ২৫ টাকার জায়গায় ৩০ টাকা নিচ্ছেন।

বেড়া বাসস্ট্যান্ডে কর্মরত সিএনজিচালিত অটোরিকশার মাস্টার (নিয়ন্ত্রণকারী) মো. হারুণ বলেন, অটোরিকশার চালক ও মালিকদের এখন সুসময়। যাত্রী বেশি হওয়ায় সবারই আয় বেড়েছে। তবে কারও কাছ থেকেই বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না। অবরোধের আগের ভাড়াই নেওয়া হচ্ছে।

Also Read: ‘গাড়ি থাকলে যাত্রী নাই, যাত্রী থাকলে গাড়ি নাই’