Thank you for trying Sticky AMP!!

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর গহিনখালী খালের ওপর সেতুটি এখন বেহাল। গাছের গুঁড়ির সঙ্গে বেঁধে সেতুটি দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। সাম্প্রতিক ছবি

১২ বছর পরও মেরামত হয়নি ঝুঁকিপূর্ণ সেতু 

লোহার বিমের ওপর কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল সেতুটি। পাটাতনের কংক্রিটের ঢালাই এখন আর নেই। সেখানে বসানো হয়েছে কাঠের তক্তা। দুই পাশের লোহার রেলিংও ভেঙে গেছে। পানির ভেতরে বসানো লোহার বিমও নষ্ট হয়ে গেছে। সেখানে গাছের গুঁড়ি বসিয়ে সেতুটি কোনোরকমে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে।

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার গহিনখালী খালের ওপরে নির্মিত সেতুটি বর্তমানে বেহাল। স্থানীয় বাসিন্দারা সেতুটিকে রাঙ্গাবালী সেতু বলেন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) দীর্ঘ ১২ বছর আগে সেতুটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করলেও নতুন সেতু নির্মাণ করেনি।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রাঙ্গাবালী উপজেলার রাঙ্গাবালী সদর ও পার্শ্ববর্তী ছোট বাইশদিয়া ইউনিয়নের সঙ্গে সড়কপথে যোগাযোগ সহজ করতে এলজিইডি গহিনখালী খালের ওপরে সেতুটি নির্মাণ করে। এই সেতুর দক্ষিণ পারে রাঙ্গাবালীর বাহেরচর এবং উত্তর পারে ছোট বাইশদিয়ার গহিনখালী।

গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুটি দেখলে মনে হচ্ছে, গ্রামের লোকজন মিলে একটি সাঁকো নির্মাণ করেছেন। সেতুর লোহার বিম ভেঙে গেছে। বড় বড় গাছের গুঁড়ি খালে বসিয়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে কোনোরকমে সেতুটিকে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। পাশের লোহার রেলিং ভেঙে যাওয়ায় কাঠ দিয়ে রেলিং দেওয়া রয়েছে। কংক্রিটের পাটাতন ভেঙে যাওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা কাঠ দিয়ে পাটাতন বানিয়ে চলাচল করছেন।

স্থানীয় শাকিল আহমেদ বলেন, এই সেতুর অবস্থা এখন নড়বড়ে। যানবাহন চলাচলের সুযোগ নেই। শুধু পথচারী চলাচল করে। ব্যবসায়ীরা কাঠ ও গাছ দিয়ে জোড়াতালি দিয়ে কোনোমতে লোকজন পারাপারের উপযোগী করে রেখেছেন। তাঁরা চান, সরকারি উদ্যোগে এখানে একটি সেতু নির্মাণ করা হোক।

বাহেরচর বাজারের মুদিদোকানি আব্বাস হাওলাদার জানান, সপ্তাহে দুদিন সোম ও বৃহস্পতিবার বাহেরচরে হাট (বড় বাজার) বসে। খালের উত্তর পারের গহিনখালীসহ আশপাশের এলাকার মানুষ এ সেতু পেরিয়ে আগে হাটে আসতেন আর মালামাল নিয়ে যেতেন। এখন সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ। হেঁটে যাওয়াই ঝুঁকিপূর্ণ। এর ফলে এখন মানুষজন তাঁদের বাজারে কম আসছেন। এতে ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

শুধু ব্যবসায়ীরাই নন, দুর্ভোগে পড়েছে শিক্ষার্থীরাও। কারণ, ছোট বাইশদিয়া ইউনিয়নে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ নেই। তাই কলেজ ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের এই সেতু পেরিয়ে রাঙ্গাবালী এসে লেখাপড়া করতে হচ্ছে।

ছোট বাইশদিয়া ইউনিয়নের গহিনখালী এলাকার শিক্ষার্থী সামসুন্নাহার ও সোনিয়া আক্তার বলে, তারা রাঙ্গাবালী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ছে। পারাপারের সময় সেতু হেলেদুলে ওঠে, তখন খুব ভয় হয়। সেতু দিয়ে না এলে অন্তত দুই কিলোমিটার পথ ঘুরে স্কুলে আসতে হয়।

রাঙ্গাবালী মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসির উদ্দিন জানান, তাঁর স্কুলে ছোট বাইশদিয়ার গহিনখালী, চতলাখালী, পূর্ব চতলাখালী গ্রাম থেকে শতাধিক শিক্ষার্থী লেখাপড়া করতে সেতু পেরিয়ে স্কুলে আসে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও সেতুটি মেরামত কিংবা নতুন করে সেতুর নির্মাণকাজ শুরু না হওয়ায় খালের অপর পারের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া নিয়ে তাঁরা উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে বর্ষাকালে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমে যায়।

এলজিইডির রাঙ্গাবালী উপজেলা কার্যালয় সূত্র জানায়, রাঙ্গাবালী সেতুর দৈর্ঘ্য ৬৫ মিটার, চওড়া ২ মিটার। ১৯৯০ সালে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। ২০০২ সালে এলজিইডি সেতুটি সংস্কার করে। ২০১০ সালে সেতুর লোহার বিম, পিলার ভেঙে গিয়ে নড়বড়ে হয়ে হেলে পড়ে। এলজিইডি ২০১২ সালে এটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে।

ছোট বাইশদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) কামাল পাশা বলেন, আসলে দুই এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য, হাটবাজার, কৃষিকাজ ও লেখাপড়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাহেরচর বাজার এলাকার এই সেতু। ঝুঁকিপূর্ণ এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ এলাকার কয়েক হাজার বাসিন্দা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন। জনস্বার্থে দ্রুত সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হোক।

রাঙ্গাবালী ইউপির চেয়ারম্যান সাইদুজ্জামান মামুন বলেন, নতুন করে সেতু নির্মাণের জন্য বারবার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

এলজিইডির রাঙ্গাবালী উপজেলা প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ওই স্থানে একটি নতুন সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ‘অনূর্ধ্ব ১০০ মিটার সেতু নির্মাণ প্রকল্প’–এর আওতায় গহিনখালী খালের ওপর একটি সেতু নির্মাণের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটি অনুমোদন হলে দরপত্র আহ্বান করা হবে।