Thank you for trying Sticky AMP!!

পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়াই ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে ইট। গত বুধবার গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কিশামত সর্বানন্দ গ্রামে

বেশির ভাগ ইটভাটাই অবৈধ 

গাইবান্ধায় চলতি মৌসুমে জেলায় ১৭৩টি ভাটায় ইট পোড়ানো হচ্ছে। এর মধ্যে ১৫৭টিরই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। এসব অবৈধ ভাটার মধ্যে অন্তত ২৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে গড়ে তোলা হয়েছে।

অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এর ফলে ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। বিশেষত শিশুশিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে। পাশাপাশি ফসলি জমির ওপরের মাটি কেটে ইটভাটায় নেওয়া হচ্ছে। এতে জমির উর্বরতা কমছে।

এ বিষয়ে পরিবেশ আন্দোলন গাইবান্ধার আহ্বায়ক ওয়াজিউর রহমান বলেন, ভাটার কালো ধোঁয়া ও ইট পোড়ানোর গন্ধে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ। এগুলো উচ্ছেদে প্রশাসনের উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। অবৈধ ভাটা উচ্ছেদে বাধা কোথায়, তা বোধগম্য নয়।

তবে গাইবান্ধার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মশিউর রহমান বলেন, অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদে অভিযান শুরু করা হয়েছে। গত বুধবারও সুন্দরগঞ্জের একটি ভাটাকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। পর্যায়ক্রমে সব অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ করা হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তর রংপুর বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গাইবান্ধার সাতটি উপজেলার মধ্যে ভাঙনকবলিত ফুলছড়িতে কোনো ভাটা নেই। বাকি ৬টিতে ১৭৩টি ইটভাটা রয়েছে। বর্তমানে চলমান ১৭৩টি ভাটার মধ্যে ১৫৭টিই অবৈধ, ১৬টির পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র আছে। আইন অনুয়ায়ী, ইটভাটা স্থাপনের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে লাইসেন্স গ্রহণ বাধ্যতামূলক। লাইসেন্সের জন্য পরিবেশ ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক। সেই বিধান লঙ্ঘনের দায়ে ২ বছর কারাদণ্ড বা ২০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে।

গাইবান্ধা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কিশামত সর্বানন্দ গ্রাম। এই গ্রামেই গড়ে উঠেছে এফকেএম ইটভাটা। ভাটা থেকে প্রায় ৩০০ গজ দূরে খাজেমুল ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা ও ইমান উদ্দিন জামিউল হাফিজিয়া মাদ্রাসা। ভাটার কারণে পাঠদান ব্যাহত ও পরিবেশ দূষিত হচ্ছে বলে জানান মাদ্রাসা দুটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ইটভাটাটি দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসংলগ্ন। ভাটায় ইট পোড়ানো চলছে, কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে। শ্রমিকদের কেউ ইট তৈরি করছেন, কেউ কাঁচা ইট পোড়ানোর স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠ ঘেঁষে কাঁচা ইট রাখা হয়েছে। পাশেই শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদ্রাসার এক শিক্ষক বলেন, ‘পাঠদান চলাকালে যানবাহন চলাচলের সময় বালুঝড় হয়। শ্রেণিকক্ষের বারান্দা, চেয়ার–বেঞ্চ বালুতে ঢেকে যায়। এমনকি ইট ও মাটি পরিবহনের কারণে প্রতিষ্ঠানে ঢোকার কাঁচা রাস্তা নষ্ট হয়েছে। প্রতিবাদ করলেই হুমকি দেওয়া হয়। ভয়ে ভাটার লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে পারছি না।’

সর্বানন্দ গ্রামের কৃষক আবুল কাশেমের অভিযোগ, ভাটার কারণে জমির ফসল ও গাছপালা নষ্ট হচ্ছে।

এসব বিষয়ে এফকেএম ভাটার মালিক মহিউল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তিনি ফোন ধরেননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাঁর ভাটার এক কর্মচারী বলেন, ‘পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নেই। তবে অনুমতি নেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছি।’

একইভাবে সাদুল্লাপুর উপজেলার ইদিলপুর ইউনিয়নের সাদুল্লাপুর-ঠুঠিয়াপুকুর সড়কের পশ্চিম পাশে এসআরবি ইটভাটার অবস্থান। এর পূর্ব পাশে কুঞ্জমহিপুর দক্ষিণপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। যদিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক কিলোমিটারের মধ্যে ভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ।

এ বিষয়ে রংপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক সৈয়দ ফরহাদ হোসেন মুঠোফোনে বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও লাইসেন্স না থাকায় গত ২৯-৩১ জানুয়ারি গাইবান্ধার পলাশবাড়ী ও সাদুল্লাপুর উপজেলায় ৬টি ইটভাটার মালিককে ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এর মধ্যে পলাশবাড়ী উপজেলার মের্সাস জেবি ব্রিকসকে ৫ লাখ টাকা, মেসার্স টিবিএল ব্রিকসকে ৭ লাখ, মেসার্স বিবিএফ ব্রিকসকে ৬ লাখ, মেসার্স চৈতালি ব্রিকসকে (এমসিবি) ৮ লাখ; সাদুল্লপুর উপজেলার মেসার্স চৌধুরী ব্রিকসকে (এমসিবি) ৪ লাখ ৫০ হাজার ও মেসার্স এসএমবি ব্রিকসকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। গাইবান্ধা জেলা প্রশাসন ও রংপুর পরিবেশ অধিদপ্তর যৌথ এ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযান অব্যাহত থাকবে।

গাইবান্ধা জেলা ভাটামালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফুল মিয়া বলেন, ‘অবৈধ ভাটার কারণে বৈধ ভাটার মালিকেরা ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আমরাও তাঁদের বৈধভাবে ইট পোড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছি। এগুলো উচ্ছেদ করা দরকার।’