Thank you for trying Sticky AMP!!

পায়রা বন্দরের দুই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ স্থানীয় আওয়ামী লীগের

পায়রা বন্দরের দুই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব তালুকদার

পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী (সিভিল) মো. নাসির উদ্দিন ও নির্বাহী প্রকৌশলী (জেটি) মোস্তফা আশিক আলী দীর্ঘদিন ধরে বন্দরে কর্মরত। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব তালুকদার সংবাদ সম্মেলন করে এ দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছেন।

অভিযোগে বলা হয়, ওই দুই প্রকৌশলী বিএনপি-জামায়াত ঘরানার সরকারবিরোধী রাজনীতি ও ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সঙ্গে সখ্য তৈরি করে পায়রা বন্দরের ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নিয়ে অর্থের পাহাড় গড়েছেন।

আজ শুক্রবার কলাপাড়া প্রেসক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার তৌহীদুর রহমান মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন হয়। এ সময় পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সৈয়দ নাসির উদ্দিন, কলাপাড়া পৌরসভার মেয়র বিপুল চন্দ্র হাওলাদার, কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নির্মল কুমার নন্দী ও শহীদুল ইসলাম বিশ্বাস, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মঞ্জুরুল আলমসহ বিভিন্ন নেতা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনালের নির্মাণকাজ ক্ষমতাসীন দলের লোকজন বন্ধ করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশিক তালুকদারের নেতৃত্বে এ ঘটনা ঘটানো হয় বলে অভিযোগ। তাঁরা অনৈতিক আর্থিক সুবিধা দাবি করেছেন বলে অভিযোগ করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওয়াটার বার্ডস লিমিটেড এবং এ বি এম ওয়াটার কোম্পানি লিমিটেডের লোকজন। এ নিয়ে ৩ মার্চ পায়রা বন্দরের চেয়ারম্যানের কাছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুটির পক্ষ থেকে জ্যেষ্ঠ প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. জাহিদুল ইসলাম লিখিত অভিযোগ করেন। বন্ধ হওয়া কাজ আবার চলমান রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে তিনি আবেদন জানান।

পায়রা বন্দরের প্রধান প্রকৌশলী নাসির উদ্দিনের আপন বড় ভাই হাসান মাহমুদ। হাসান মাহমুদের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনালের নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে। অপরদিকে পায়রা বন্দরের নির্বাহী প্রকৌশলী (জেটি) মোস্তফা আশিক আলী স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে নিজস্ব আত্মীয়স্বজনকে নিয়ে একটি বলয় তৈরি করেছেন। এ দুই কর্মকর্তার আত্মীয়স্বজন ও আশীর্বাদপুষ্ট ব্যক্তিরা পায়রা বন্দরের সব ঠিকাদারি কাজ নিজেদের মধ্যে ভাগবাঁটোয়ারা ও কমিশন বাণিজ্য করে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের মহোৎসব করে যাচ্ছেন।
আবদুল মোতালেব তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক, কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ
প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার (ফাস্ট ট্র্যাক) প্রকল্পের আওতাভুক্ত পায়রা বন্দরের নির্মাণাধীন প্রথম টার্মিনাল

আজ লিখিত বক্তব্যে কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব তালুকদার এই অভিযোগ নাকচ করেন। তিনি পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, পায়রা বন্দরের প্রধান প্রকৌশলী নাসির উদ্দিনের আপন বড় ভাই হাসান মাহমুদ। হাসান মাহমুদের ওয়াটার বার্ডস লিমিটেড ও এবিএম ওয়াটার কোম্পানি লিমিটেড নামের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ দুটি প্রতিষ্ঠান পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনালের নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে। এ দুটি প্রতিষ্ঠানের একান্ত সহযোগী হলো উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক নেতা লিটন গাজীর মালিকানাধীন মেসার্স নুরজাহান এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নুরজাহান এন্টারপ্রাইজ পায়রা বন্দরের নির্মাণকাজে বালুর কাজসহ নানা কাজ করছে। অপরদিকে পায়রা বন্দরের নির্বাহী প্রকৌশলী (জেটি) মোস্তফা আশিক আলী স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে নিজস্ব আত্মীয়স্বজনকে নিয়ে একটি বলয় তৈরি করেছেন। নাসির উদ্দিন পায়রা বন্দর নির্মাণের শুরুতে একটি প্রকল্পে কাজ করতেন। পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে সরাসরি পায়রা বন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান। তাঁর এই নিয়োগ পাওয়ার পর পায়রা বন্দর নির্মাণে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় লোকজনের পরিবারে বিপত্তি ঘটে। এ দুই কর্মকর্তার আত্মীয়স্বজন ও আশীর্বাদপুষ্ট ব্যক্তিরা বিএনপি-জামায়াতের কিছু নেতা-কর্মীকে নিয়ে একটা সিন্ডিকেট তৈরি করে পায়রা বন্দরের সব ঠিকাদারি কাজ নিজেদের মধ্যে ভাগবাঁটোয়ারা ও কমিশন বাণিজ্য করে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের মহোৎসব করে যাচ্ছেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ছাত্রলীগের নামে যে চাঁদাবাজির অভিযোগ আনা হয়েছে, বাস্তবে এর কোনো সত্যতা নেই।

উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশিক তালুকদারের নেতৃত্বে সেদিন এ ঘটনা ঘটেছে। আশিক তালুকদার প্রতি মাসে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছেন। আমাদের কর্মকর্তারা চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তিনি অস্ত্রশস্ত্রসহ দলবল নিয়ে এসে হামলা-ভাঙচুর করেছেন। আমরা নিরাপত্তা চাই।
হাসান মাহমুদ, পায়রা বন্দরের টার্মিনাল নির্মাণকাজের ঠিকাদার

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়রা বন্দর নির্মাণে জমি অধিগ্রহণকালে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পুনর্বাসন করে সেসব পরিবারের শিক্ষিত ও বেকার যুবকদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে চাকরিসহ কাজ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এ প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে প্রথমে ওয়াটার বার্ডস লিমিটেড ও এ বি এম ওয়াটার কোম্পানির লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের বেকার যুবকদের কাজ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল। এ আশ্বাসের ভিত্তিতে পৈতৃক ভিটাবাড়ি ও কৃষিজমি হারানো ক্ষতিগ্রস্ত লোকেরা কাজের সন্ধানে ওই দুটি প্রতিষ্ঠানে গেলে হাসান মাহমুদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অশ্লীল ভাষায় দুর্ব্যবহার করে তাড়িয়ে দেন। প্রতিষ্ঠান দুটির কর্মকর্তা-কর্মচারীর দুর্ব্যবহার, মারমুখী আচরণকে ধামাচাপা দিয়ে ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য ছাত্রলীগের নামে অসত্য চাঁদাবাজির অভিযোগ করা হয়েছে।

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পায়রা বন্দরের নির্মাণাধীন প্রথম টার্মিনাল

পায়রা বন্দরের টার্মিনাল নির্মাণের কাজটি প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার (ফাস্ট ট্র্যাক) প্রকল্পের আওতাভুক্ত। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী লোকজন টার্মিনালের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন এবং তাঁদের ঊর্ধ্বতন নেতাদের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। এমন অবস্থায় গত ২৬ ও ২৭ ফেব্রুয়ারি নির্মাণকাজ বন্ধ থাকে। পরে ২৮ ফেব্রুয়ারি আবার কার্যক্রম চালু হয়। পরে ১ মার্চ ৩০টির মতো মোটরসাইকেলে ৭০-৮০ জন বহিরাগত এসে কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মারধর করেন এবং অফিস ভাঙচুর করেন। এ সময় আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করে জীবননাশের হুমকি প্রদান করে তাঁরা অনৈতিক আর্থিক সুবিধা দাবি করেন এবং সব কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেন। এ ঘটনা নিয়ে ৬ মার্চ প্রথম আলোতে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

এদিকে ১ মার্চ ওয়াটার বার্ডস লিমিটেড ও এবিএম ওয়াটার কোম্পানি লিমিটেডের অফিস ভাঙচুর এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মারধরের ঘটনার সময় প্রতিষ্ঠানটির পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারী আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন প্রতিষ্ঠান দুটির মালিক ও প্রধান প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন দলের লোকজন অস্ত্র ঠেকিয়ে তাঁদের প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. জাহিদুল ইসলামের (৪৭) ডান চোখ গুরুতর জখম করেছেন। তিনি ঢাকার বাংলাদেশ আই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে এখন ঢাকার বাসায় অবস্থান করছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন প্রকৌশলী মো. আবদুর রহমান (২৭), স্টোর অফিসার মেহেদী হাসান (৩৬), স্টোরকিপার মুনির হোসেন (৪০) ও গাড়িচালক আমিনুল ইসলাম (৪৫)।

ক্ষমতাসীন দলের কে বা কারা এই হামলা-ভাঙচুরের ঘটনার সঙ্গে জড়িত, এ প্রশ্ন করলে হাসান মাহমুদ বলেন, ‘উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আশিক তালুকদারের নেতৃত্বে সেদিন এ ঘটনা ঘটেছে। আশিক তালুকদার প্রতি মাসে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছেন। আমাদের কর্মকর্তারা চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তিনি অস্ত্রশস্ত্রসহ দলবল নিয়ে এসে হামলা-ভাঙচুর করেছেন। আমরা নিরাপত্তা চাই।’

তবে আশিক তালুকদার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমাদের ৩০০-৩৫০ কানি জমি অধিগ্রহণ করে নিয়েছে সরকার। সম্পূর্ণ ক্ষতিপূরণ আমরা এখনো পাইনি। এমনকি আমার চাচার কবর পর্যন্ত পায়রা বন্দরে বালুর নিচে চলে গেছে। আমরা দাবি করেছিলাম, কাজ তো বাইরের মানুষ করতেছে। আমাদেরও কিছু কাজ দেওয়া হোক। আড়াই বছর ধরে ওই দুটি কোম্পানির লোকজন আমাদের ঘুরাইতেছে। অথচ আমাদের কাজ না দিয়ে তারা বিএনপির লোকজনকে দিয়ে কাজ করাইতেছে। পায়রা বন্দরের প্রধান প্রকৌশলী নাসির ও নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তফা এর সঙ্গে জড়িত। আমি কাজ চাইতে গেলে সেদিন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়েছে, এর বেশি কিছু হয়নি।’

এ নিয়ে কথা বলার জন্য পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী (সিভিল) নাসির ও নির্বাহী প্রকৌশলী (জেটি) মোস্তফার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তাঁরা কেউই কল রিসিভ করেনি। পরে তাঁদের মুঠোফোনে খুদে বার্তা দেওয়া হলেও কোনো সাড়া দেয়নি।

তবে বন্দরের এই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্থানীয় আওয়ামী লীগের আনা অভিযোগ নিয়ে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘অভিযোগ দিলে অবশ্যই বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’