Thank you for trying Sticky AMP!!

গাছে পানির পাত্র বেঁধে দিচ্ছেন জহির রায়হান। গত বুধবার ঝিনাইদহ সদর উপজেলার রামনগর গ্রামে

পাখির পিপাসা মেটাতে গাছে গাছে পানির পাত্র

দূর থেকেই চোখে পড়ে গাছে ঝোলানো লাল রঙের প্লাস্টিকের পাত্র। কাছে গিয়ে দেখা যায়, তাতে লেখা, ‘পাখির জন্য পানি’। প্রচণ্ড দাবদাহে পা‍খির জন্য এই পানি পানের ব্যবস্থা করা হয়েছে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার রামনগর গ্রামে। স্থানীয় বাসিন্দা জহির রায়হান (৫০) এ উদ্যোগ নিয়েছেন।

জহির রায়হান গত রোববার থেকে পাখির জন্য পানির পাত্রের ব্যবস্থা করেছেন। প্রতিদিন গড়ে গাছে ২০টি করে পানির পাত্র বাঁধছেন। যখন যে এলাকায় কাজে যান, সেখানে এই পাত্র বেঁধে দেন। এ পর্যন্ত ৮০টি পানির পাত্রের ব্যবস্থা করেছেন। এর মধ্যে রামনগর গ্রামে ২০টি, কালুহাটি গ্রামে ২০টি, ডেফলবাড়িতে ১০টি, চণ্ডীপুরে ১০টি ও ঝিনাইদহ শহরে ২০টি।

জহির রায়হানের বাড়ি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়নের রামনগর গ্রামে। বাবা মারা গেছেন। ছয় ভাইয়ের মধ্যে জহির ছোট। স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে জহির রায়হানের সংসার। তিনি রংমিস্ত্রির কাজ করেন; স্ত্রী শাহনাজ খাতুন বাড়িতে সেলাইয়ের কাজ করেন।

জহির রায়হান বলেন, এ বছর তীব্র গরম। পাশাপাশি পানির সংকট রয়েছে। মাঠে-খালে-বিলে কোথাও পানি নেই। পাখিরাও পানির জন্য কষ্ট পাচ্ছে। তাই তিনি পাখিদের জন্য পানির ব্যবস্থা করছেন। গত রোববার থেকে গাছে গাছে পানির পাতিল বাঁধতে শুরু করেছেন। একটি পাতিল বাঁধতে ২০ টাকা খরচ হচ্ছে। পোলট্রি মুরগির খাবার দেওয়া হয় যে পাত্রে, সেটাই তিনি পানির পাত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন। খরচ কমাতে পুরোনো পানির বোতল কেটে গাছে ঝুলিয়ে দেবেন। খাল, বিল, নদী–নালায় পানি না জমা পর্যন্ত তিনি এই কাজ করবেন।

Also Read: পাখিই তাঁর স্বজন, পাখিই পরিবারের সদস্য

এ বছর তীব্র গরম। পাশাপাশি পানির সংকট রয়েছে। মাঠে-খালে-বিলে কোথাও পানি নেই। পাখিরাও পানির জন্য কষ্ট পাচ্ছে। তাই জহির রায়হান পাখিদের জন্য পানির ব্যবস্থা করছেন।

সংসারে আর্থিক অনটনের কারণে পড়ালেখা করতে পারেননি জহির। ছোট থেকেই তিনি গরুর রাখালের কাজ করতেন। প্রাথমিক বিদ্যালয়েও তেমন যাননি। পরে কিছুদিন নৈশ বিদ্যালয়ে পড়েছেন। তবে ছোটবেলা থেকেই মানুষের উপকার করা তাঁর নেশা। রাস্তার ধারে গাছ লাগান। মানুষের বিশ্রামের জন্য রাস্তার মোড়ে বেঞ্চ তৈরি করে দিয়েছেন। পানি পানের জন্য নলকূপও স্থাপন করেছেন। দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদেরও তিনি সহায়তা করেন। এবার তিনি দাবদাহে পাখির জন্য পানির ব্যবস্থা করেছেন।

এ বিষয়ে কুমড়াবাড়িয়া এলাকার বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম জানান, জহির রায়হানের এই উদ্যোগ খুবই ভালো। পাখির উপকার হচ্ছে। পানির পাতিল বেঁধে দেওয়ার পর এখন গাছে গাছে পাখি দেখা যাচ্ছে।

Also Read: বাড়িজুড়ে পাখির আশ্রয়

কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য হারুন অর রশীদ জানান, জহির রায়হান নিজ উদ্যোগে সামাজিক অনেক কাজ করেন। পাখির পানি খাওয়ার জন্য তিনি পাতিল বেঁধে দিচ্ছেন। এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। এসব পাতিলে নিয়মিত পানি দিতে তাঁরা সহায়তা করবেন।

স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠন পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, দাবদাহে পানির সংকট দেখা দেয়, প্রাণিকুল কষ্টে থাকে। পাখির জন্য পানি সরবরাহের এই উদ্যোগ খুবই ভালো। তবে পানি অবশ্যই বিষমুক্ত হতে হবে এবং প্রতিদিন দুবার পরিবর্তন করতে হবে। জহির রায়হানের মতো সমাজের অন্যরাও এগিয়ে এলে সব এলাকার পাখি পানির পিপাসা মেটাতে পারবে এবং এই উদ্যোগ সফল হবে।