Thank you for trying Sticky AMP!!

উপবৃত্তির টাকা না পেয়ে শিশুটি প্রধানমন্ত্রীকে লিখল, এরপর যেন এমন না হয়

প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী জুনাইদের লেখা চিঠি ছড়িয়ে পড়ার পর তাকে ছাতা, ব্যাগসহ শিক্ষা উপকরণ দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। আজ শনিবার রাজশাহীর দুর্গাপুরে

রাজশাহীর দুর্গাপুরে উপবৃত্তির টাকা না পেয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর প্রথম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর লেখা একটি চিঠি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। চিঠিতে টাকার অভাবে ছেঁড়া ব্যাগ ও ভাঙা ছাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়া নিয়ে আক্ষেপ করেছে জুনাইদ সিদ্দিক নামের এই শিক্ষার্থী। সে দাবি জানিয়েছে, এরপর যেন এমন না হয়।

জুনাইদ সিদ্দিক দুর্গাপুর উপজেলার তেবিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে। তার বাবার নাম সিরাজুল ইসলাম। তিনি সৌদিপ্রবাসী ছিলেন। বছরখানেক আগে দেশে ফেরেন। বর্তমানে এলাকায় ভ্যান চালান। তাঁদের বাড়ি উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামে।

চিঠিটা জুনাইদ নিজেই লিখে ফেসবুকে দিতে বলেছে বলে দাবি বাবা সিরাজুল ইসলামের

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ঈদুল আজহার আগে ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসের উপবৃত্তির ৯০০ টাকা, পোশাকসহ শিক্ষা উপকরণের জন্য ১ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এ জন্য মোবাইল আর্থিক সেবার (এমএফএস) একটি প্রতিষ্ঠানে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। কিন্তু জুনাইদের বাবার মুঠোফোনে টাকা প্রাপ্তির খুদে বার্তা আসেনি। তিনি ওই এমএফএসের স্থানীয় একটি এজেন্টের কাছে গিয়ে জানতে পারেন, তাঁর টাকা অন্য কেউ তুলে নিয়েছেন।

পরে ১৮ সেপ্টেম্বর একটি চিঠি সিরাজুল ইসলাম তাঁর ফেসবুকে পোস্ট করেন, যা ছড়িয়ে পড়েছে। চিঠিটা ছেলেই লিখে ফেসবুকে দিতে বলেছে বলে দাবি সিরাজুলের।

ছড়িয়ে পড়া চিঠির শুরুতে লেখা, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন...,’ এরপর নিজের পরিচয় উল্লেখ করে জুনাইদ লিখেছে, ‘পর সমাচার এই যে, আমার উপবৃত্তির টাকা এখন পর্যন্ত পাইনি। বাবা বলেছিল, উপবৃত্তির টাকা পেলে স্কুল ব্যাগ আর ছাতা কিনে দিবে। কিন্তু তা আর হল না। স্যারদের মাধ্যমে জানতে পারলাম টাকা কেউ তুলে নিয়েছে। প্রতিদিন আমাকে ছেঁড়া স্কুল ব্যাগ আর ভাঙা ছাতা নিয়ে স্কুলে যেতে হয়। তাতে আমার আপত্তি নেই। এরপর যেন এমন না হয় এটাই দাবি।’

চিঠিটি নিয়ে আলোচনা শুরু হলে আজ শনিবার মীনা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে জুনাইদ সিদ্দিককে আমন্ত্রণ জানায় উপজেলা প্রশাসন। সেখানে তার হাতে স্কুল ব্যাগ, ছাতা, খাতা, রংপেনসিল ও কলম দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে অন্যান্য শিক্ষার্থীর মধ্যে পেনসিল বক্স বিতরণ করা হয়। সেখানে দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সোহেল রানা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোকলেছুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

ব্যাগ, ছাতাসহ শিক্ষা সরঞ্জাম পেয়ে জুনাইদ অনেক খুশি বলে জানান বাবা সিরাজুল ইসলাম। তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ঈদের আগে উপবৃত্তির টাকা আসার কথা ছিল। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও তিনি টাকা পাননি। পরে ওই সময়ে স্থানীয় মোবাইল ব্যাংকিয়ের দোকানে গিয়ে জানতে পারেন, টাকা কেউ তুলে নিয়েছে। পরে তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের রাজশাহী শহরের অফিসেও যোগাযোগ করেন। কিন্তু টাকা আর তুলতে পারেননি। তাঁর প্রশ্ন, টাকাটা কে তুলে নিল।

জুনাইদের উপবৃত্তির টাকা না পাওয়ার বিষয়টি জানতেন না বলে জানিয়েছেন তেবিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাফির উদ্দিন। তিনি বলেন, মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে টাকা না জমা হওয়ার বিষয়ে অনেক অভিভাবক তাঁকে বলেছেন। অনেককেই টাকা পেতে ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। কিন্তু ওই শিক্ষার্থীর টাকা না পাওয়ার কথা জানতেন না তিনি। পরে গত বুধবার হঠাৎ ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারেন। পরে তিনি ওই শিক্ষার্থীর অভিভাবককে বিদ্যালয়ে ডেকে ঘটনা শোনেন।

ইউএনও মো. সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি তিনি ফেসবুকের মাধ্যমে দেখতে পান। ওই শিক্ষার্থী আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ জন্য তাকে তাঁদের পক্ষ থেকে ছাতা, স্কুলব্যাগসহ শিক্ষা উপকরণ দেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে তিনি মোবাইল ব্যাংকিং প্রতারণা সম্পর্কে অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।