Thank you for trying Sticky AMP!!

আক্কেলপুরের শিক্ষা কর্মকর্তা বললেন, ‘এই টাকা ঘুষ নয়, সম্মানী ও পারিশ্রমিক’

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে স্কুল-মাদ্রাসায় কর্মচারী নিয়োগে ও এনটিআরসিএর শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির ফাইল অনলাইনে পাঠাতে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষকেরা। তাঁরা বলছেন, কর্মচারী নিয়োগ বোর্ডের সদস্য হিসেবে তাঁকে সরাসরি টাকা দিতে হয়। এ টাকা কম হলে তিনি কটুকথা বলেন। এমপিওভুক্তির ফাইল পাঠানোর জন্য নিজের মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত চেয়ে নেন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই টাকা ঘুষ নয়, সম্মানী ও পারিশ্রমিক। নিয়োগে সম্মানী ও অনলাইনে এমপিওভুক্তির ফাইল পাঠাতে পারিশ্রমিক নিই।’

এ ব্যাপারে জানতে গতকাল দুপুরে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শিশির কুমার উপাধ্যায়কে মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি ধরেননি।

আক্কেলপুর উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সদস্যসচিব শফিউল আলম বলেন, কর্মচারী নিয়োগ বোর্ডের ও ফাইল পাঠাতে টাকা নেওয়া অনৈতিক। এটা দুর্নীতি ও অনিয়ম।

পাঁচটি স্কুল ও মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক ও সুপারের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা দাবি করেন, শফিকুল ইসলাম গত ৫ মে আক্কেলপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। এ পর্যন্ত স্কুল ও মাদ্রাসা মিলে ৮ থেকে ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অফিস সহকারী, অফিস সহায়ক, নিরাপত্তাকর্মী ও আয়া নিয়োগ হয়েছে। এসব নিয়োগে তিনি ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন। এ ছাড়া ওই নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারী ও এনটিআরসিএ শিক্ষকদের এমপিওর ফাইল পাঠাতে জনপ্রতি তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত নেন।

উপজেলার আরকেএম দাখিল মাদ্রাসার সুপার গোলাম আযম বলেন, ‘সম্প্রতি আমার প্রতিষ্ঠানে মারুফ হোসেন নামের একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। এই নিয়োগে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ২০ হাজার টাকা নিয়েছেন। এতে তিনি খুশি হননি। আরও টাকা দাবি করেছেন। পরে নিয়োগপ্রাপ্ত পরিচ্ছন্নতাকর্মী প্রার্থীর ফাইল অনলাইনে পাঠানোর জন্য পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেন। কর্মকর্তা নিজেই পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে টাকা নিয়েছেন।’

সোনামুখী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুর রহমান বলেন, ‘সম্প্রতি আমাদের বিদ্যালয়ে কর্মচারী নিয়োগ হয়েছে। নিয়োগ বোর্ডের সদস্য হিসেবে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে সম্মানী দিয়েছি।’ কত টাকা সম্মানী দিয়েছেন, তা জানাতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।

অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে নিজ উপজেলার স্কুল-মাদ্রাসায় কর্মচারী নিয়োগ বোর্ডের সদস্য। এখানে ডিজির প্রতিনিধিও থাকেন। বেশির ভাগ নিয়োগের ক্ষেত্রে আমাদের সাজানো প্রশ্ন করতে বলা হয়।

আমরা নিজেদের মতো করে প্রশ্ন করতে পারি না। আগেই প্রার্থী ঠিকঠাক থাকে। পরীক্ষা শেষে প্রতিষ্ঠানের প্রধান একটি খাম ধরিয়ে দেন। খাম খুলে দেখা যায়, ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আছে। এটা ঘুষ নয়, সম্মানী। আমাকে যে টাকা দেওয়া হয়, এটা সম্মানজনক নয়। ডিজির প্রতিনিধিকে আমার চেয়ে আরও বেশি টাকা সম্মানী দেওয়া হয়।’

ফাইল পাঠাতে টাকা নেওয়ার বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এনটিআরসিএ কর্তৃক নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের অনলাইনে এমপিওভুক্তির জন্য ফাইল পাঠাতে হয়। একজনের ফাইল পাঠাতে অনেক কষ্ট করতে হয়। এ বাবদ শিক্ষকদের কাছ থেকে পারিশ্রমিক হিসেবে টাকা নিই। এটাতে দোষের কিছু দেখি না।’ সম্মানীর টাকা কোথা থেকে দেওয়া হয় এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘অপ্রিয় হলেও সত্য যে টাকা ছাড়া কোনো নিয়োগই হয় না।

প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা নেন। সেখান থেকে তাঁরা খরচ করেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডোনেশন (অনুদান) দেওয়ার নিয়ম আছে। সেই টাকা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে রাখতে হয়। কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তুলে খরচ করতে হয়। কিন্তু অনুদানের টাকা প্রতিষ্ঠানের হিসাবে জমা হয় না।’

এভাবে অর্থ নেওয়ার পক্ষে সাফাই গেয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘দেওড়া উচ্চবিদ্যালয়ে তিনজন কর্মচারী নিয়োগ হবে। কয়েক দিন আগে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি এসে আমাকে বললেন, আমরা আপনাকে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য হিসেবে ১০ হাজার টাকা দিব। আমি বললাম, আমাদের প্রশ্ন করার সুযোগ দেবেন, কোনো সম্মানী দিতে হবে না। পরে বিদ্যালয় পরিচালনার কমিটির একজন সদস্য এসে বললেন, নিয়োগে ৪২ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। তাহলে বোঝেন। সরকার থেকে আমাকে টিএ–ডিএ (ভাতা) দেওয়া হয় না। আমি সম্মানীর টাকা আমার আয়কর রির্টানে দেখাব।’