Thank you for trying Sticky AMP!!

রাবার কারখানার দূষণের কারণে সাদা হয়ে গেছে ছড়ার পানি। সম্প্রতি রাঙামাটির মানিকছড়ির দেপ্পোছড়ি মুখ এলাকায়

নয়টি গ্রামের পানির উৎসে কারখানার বর্জ্য

২০২১ সালের ১০ নভেম্বর কারখানাটির  যাত্রা শুরু হয়। রবার প্রক্রিয়াজাত শুরু হয় ২০২২ সালে। এরপর থেকে কারখানাটির বর্জ্য ছড়ায় ফেলা হচ্ছে।

রাঙামাটি সদর উপজেলার সাপছড়ি ইউনিয়নের মানিকছড়ি এলাকার একটি ছড়ায় রবার কারখানার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। এতে ছড়াটি দূষিত হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা ভোগান্তিতে পড়েছেন। অন্তত নয়টি গ্রামের মানুষের দৈনন্দিন ব্যবহারের পানির একমাত্র উৎস এই ছড়া।

বর্জ্য ফেলার কারণে ছড়াটির প্রায় পাঁচ কিলোমিটার অংশে পানি সাদা রং ধারণ করেছে। দুর্গন্ধযুক্ত হওয়ায় এসব পানি গৃহস্থালির কোনো কাজে ব্যবহার করতে পারছেন না এলাকার বাসিন্দারা। ছড়ায় প্রায়ই মরা মাছ ভেসে উঠছে।

যে কারখানা থেকে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে, এর নাম ফোর স্টার রবার অ্যান্ড লেটেক্স। রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের মানিকছড়ি এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) শিল্প এলাকার একটি প্লটে কারখানাটি গড়ে তোলা হয়েছে। ২০২১ সালের ১০ নভেম্বর থেকে কারখানাটির যাত্রা শুরু হয়। তবে রবার প্রক্রিয়াজাত করা শুরু হয় ২০২২ সালে। এরপর থেকে কারখানাটির বর্জ্য ছড়ায় ফেলা হচ্ছে বলে দাবি এলাকাবাসীর।

দূষণের শিকার পাহাড়ি ছড়াটির নাম মানিকছড়ি ছড়া। বিসিকের শিল্প প্লট ঘেঁষেই বয়ে গেছে ছড়াটি। দক্ষিণে অন্তত ১০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে ছড়াটি কাপ্তাই হ্রদে মিশেছে। ছড়ার ১০ কিলোমিটার ওই অংশে দুই পারে নয়টি গ্রাম রয়েছে। এসব গ্রামে কয়েক হাজার মানুষের বসবাস। এসব মানুষ গোসল করা, রান্নাবান্নাসহ গৃহস্থালির নানা কাজে ছড়াটির পানির ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। দুই পারের কয়েক শ একর কৃষিজমির সেচের উৎসও ছড়াটি।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বোরো ধানের খেতে এখন সেচ দেওয়ার সময় চলে এসেছে। তবে কৃষকেরা ছড়া দূষিত হওয়ায় সেই পানিতে সেচ দেবেন কি না, তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন। এসব পানি ব্যবহার হলে ধানখেত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, এমন আশঙ্কা তাঁদের।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, মানিকছড়ি ছড়ার দক্ষিণে দেপ্পোছড়ি মুখ এলাকাসহ কয়েক কিলোমিটার এলাকায় ছড়ার পানি সাদা হয়ে রয়েছে। ছড়ার দুই পাশে বোরো এবং নানা ধরনের সবজির খেত। ছড়ার পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে।

এলাকার বাসিন্দা দীপা ত্রিপুরা ও আশিস চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে মানিকছড়ি ছড়ার পানি ব্যবহার করে আসছেন। রবার কারখানা স্থাপনের পর থেকে ছড়ার পানিতে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ছড়ায় গোসলের কারণে এলাকায় চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই। অন্য উৎস না থাকায় এরপরও কাপড় ধোয়াসহ গৃহস্থালির কাজে ছড়ার পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে।

দেপ্পোছড়িমুখ গ্রামের নিক্সন চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, এক সপ্তাহ আগেও ছড়ায় ব্যাপকভাবে মরা মাছ ভেসে ওঠে। ছড়ার পানি কৃষকেরা সেচের কাজেও ব্যবহার করতে পারছেন না। নয়টি গ্রামে বাসিন্দারা আতঙ্কে রয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ।

বিসিক সূত্রে জানা গেছে, কারখানাটিতে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন রবারবাগান থেকে রবারের কস সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। প্রতি মাসে ১৫ থেকে ২০ মেট্রিক টন রবারের কষ সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি।

ছড়াদূষণের বিষয়ে জানতে চাইলে ফোর স্টার রবার অ্যান্ড লেটেক্স কারখানার ব্যবস্থাপক মো. ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে কিছু ব্যক্তি ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। কারখানার বর্জ্যের কারণে মাছ মারা যাওয়া, চর্মরোগের বিস্তারসহ নানা ধরনের প্রভাবের কথা ছড়িয়ে দিচ্ছেন। আমরা ছড়ায় বর্জ্য ফেলার কারণে এসব হওয়ার কথা নয়। এরপরও আমরা আপাতত মানিকছড়ি ছড়ায় বর্জ্য ফেলা বন্ধ রেখেছি। এখন চিন্তা করছি নির্দিষ্ট স্থানে গর্ত করে বর্জ্যগুলো ফেলা হবে।’

রাঙামাটি ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘রবার কারখানার বর্জ্য ফেলা নিয়ে আমাদের কাছেও অভিযোগ এসেছে। স্থানীয় বাসিন্দা, পুলিশ, কারখানার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি বৈঠকের আয়োজন করা হচ্ছে। সেখানে এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করা হবে।’

ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘আমরা কারখানার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না। আমরা শুধু প্লট ভাড়া দিয়েছি।’