Thank you for trying Sticky AMP!!

সোহেল ও তার মায়ের গল্পটা একটু অন্যরকম

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা আদর্শ বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী শেখ সোহেল রানা ও তার মা রেহানা আক্তার

ইচ্ছাশক্তির কাছে দারিদ্র্য যে কোনো বিষয় নয়, তা প্রমাণ করছে শেখ সোহেল রানা। নানা রকম প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে সে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর প্রথম ধাপ পাড়ি দিয়েছে। সাতক্ষীরার তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা আদর্শ বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় সব বিষয় জিপিএ-৫ পেয়েছে সে।

শেখ সোহেল রানার এ সাফল্যের পেছনে আছে এক কষ্টের গল্প। তাদের জমিজমা নেই, বাড়ি নেই, কোনো সম্পদও নেই। মা রেহানা আক্তারের সঙ্গে সোহেল থাকে নানার বাড়ির একটি আধা পাকা ঘরে। ২০০১ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে রেহানার বিয়ে হয়। সোহেলের জন্মের তিন মাস পর পারিবারিক নির্যাতনের মুখে তার মা–বাবার বিচ্ছেদ হয়।

রেহানা আক্তার বলেন, বাবা গরিব। তারপরও বাবার বাড়িতে ছেলেকে নিয়ে ঠাঁই নিতে হয়। একপর্যায়ে বাবার বাড়ির একটি আধা পাকা ঘরে শুরু করেন বসবাস। খেতখামারে কাজ, অন্যের বাড়িতে কাজ, কাঁথা সেলাইয়ের কাজসহ কী করেননি তিনি। কিন্তু দমে যাননি। ছেলেকে ভর্তি করান গ্রামের খোর্দ্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখানে পঞ্চম শ্রেণিতে জিপিএ-৫ পেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয় সোহেল। এরপর ভর্তি করা হয় তালার পাটকেলঘাটা আদর্শ বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ে। সেখান থেকে এবার এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে সোহেল।

রেহানা আক্তার আরও বলেন, তাঁর একার পক্ষে সোহেলকে লেখাপড়া করানো সম্ভব ছিল না। একপর্যায়ে তিন হাজার টাকা বেতনে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ নেন তিনি। ছেলে যখন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালানো জন্য ছুটির দিন ও বিদ্যালয় শেষে শ্রমিকের কাজ করেছে সে। কখনো অন্যের ধানখেতে আবার কখনো সবজি খেতে কাজ করেছে। কোনো কোনো দিন সন্ধ্যার পর একটি চায়ের দোকানেও কাজ করেছে।

নিজের জীবনের গল্প বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন রেহানা। এত সবের মধ্যেও থেমে থাকেননি। ২০১৫ সালে এসএসসি ও ২০১৭ সালে এইচএসসি পাস করেন তিনি। বর্তমানে তিনি সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজে কলা বিভাগের ডিগ্রিতে অধ্যয়নরত।
সোহেল রানা বলে, সে তার বাবাকে দেখেনি। মা তার বাবার অভাব পূরণ করেছে। লেখাপড়া শেখার জন্য মার অনুপ্রেরণায় ছুটিতে ও বিদ্যালয় শেষে অন্যের খেতে কাজ করেছে। চায়ের দোকানে কাজ করে নিজের লেখাপড়া চালানোর চেষ্টা করছে। সব বিষয় জিপিএ-৫ পেলেও কীভাবে ভবিষ্যতে লেখাপড়া করবে, তা নিয়ে তার মা ও তার ভাবনার শেষ নেই।

তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা আদর্শ বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল হাই বলেন, সোহেল রানা মেধাবী ছাত্র। বিদ্যালয়ে বেতনসহ অন্যান্য ফি তার কাছ থেকে নেওয়া হয়নি। শিক্ষকেরা তাকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। সুযোগ পেলে সে ভবিষ্যতে দেশের জন্য অবদান রাখতে পারবে বলে মনে করেন তিনি।